শহীদ মিনারের বেদী, পূজার মন্ডপ, বাঙালি সঙ-স্কৃতি
লিখেছেন : আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট
শৈশব থেকেই শুনিয়া আসিতেছি দূর্গাপূজা, কালি পূজার লগ্নে ঢাক ঢোলের শব্দ। বাদ্যযন্ত্র, সঙ্গীত আসলে ধর্মকর্মে অনিবার্য অনুষঙ্গ হইয়া দাড়াইয়াছে। বাঙালির সার্বজনীন শারদীয় দূর্গা উৎসবের সাথে মিল রাখিয়া পালন করা হইতেছে পয়লা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারির মত অনুষ্ঠানাদি।
বাণী অর্চনার সময় দেখিয়াছি মুসলিম সন্তানগণ পূজার প্রসাদ ভক্ষণ করিয়া তাহাদের রোজা ভাঙ্গিয়া অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করিয়া আছিতেছে। স্বয়ং মুসলিম কবি কাজী নজরুল পূজার মন্ডপে গান গাহিয়া ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে সাধু সাধু রব ফেলিয়া দিয়াছিলেন। অথচ তাহাদের গো নিধনের কালে আমরা বাঙালি হেন্দুরা ঘৃণায় গৃহদ্বার খুলিতে কুন্ঠিত হই।
যাহা হউক, সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি আসিতেছে। এই দিবসে ভাষার জন্য বাঙালির হৃদয় মন কাঁদিয়া উঠে। অথচ হতভাগা বাঙালি শুদ্ধ ভাবিয়া “শ্রদ্ধাঞ্জলী”, “বাঙালী”, “ফেব্রুয়ারী” লিখিত পুষ্প মাল্য শহীদ মিনারের বেদীতে ফেলিয়া আসিতেছে। শুধু তাহাই নয়, মূর্খ বাঙালিত্বের দাবীদার রা মূল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ফেলিয়া দিয়া নদীর ধারে, পার্কে, গণশৌচাগারের পাশে, হাটে বাজারে যেখানে সেখানে স্তম্ভ নির্মাণ করে পুষ্পদান করিতেছে। নির্জীব প্রতীমার সামনে প্রণাম করা অথবা মুসলমানদিগের মসজিদে ওঠা বসা যেমন অর্থহীন কর্মকান্ড বলিয়া বোধ হইতে পারে, বেদী তুলিয়া যেখানে সেখানে পুষ্পদানও একই পদের মূর্খতা।
রক্তের বাসি দাগেরউপর পুষ্প ছিটাইয়া শহীদ গণের আত্মার কোন সুগতি হয়না, শুধু শুধু পুষ্প ছিড়িয়া উদ্যন গুলোকে শ্রীহীন করা। একুশের প্রথম লগ্নে সঙ্গীত সহকারে প্রভাত ফেরী যাত্রা করে বেদীর উদ্দেশ্যে। কান্ডজ্ঞানহীন বাঙালি হাটে বাজারের পাশে জনতার লক্ষ টাকার ব্যয়ে নির্মিত মিনারের উদ্দেশ্যে নগ্ন পদে যাত্রা করে কর্দমাক্ত পদযুগল লইয়া গৃহাভিমুখে ফিরিয়া আসে। প্রশ্ন করিতেই হয় এসব হাট বাজার অফিস আদালতে শহীদের কোন পবিত্র স্মৃতি জড়িত আছে যে নগ্ন পদে পূজা দিতে হইবে?
বেশ ক বছর ধরিয়া আবার বাঙালি সঙ-কৃতি নামে হেন্দু ধর্ম হইতে ‘মঙ্গল প্রদীপ’ প্রজ্জ্বলনের ব্যবস্থা আমদানি করিলেন কিচু ধর্মনিরপেক্ষ ঠুটো জগন্নাথ। অথচ তদাস্থলে কুরান-পুরাণ আবৃত্তি হইলে ঐ বংশালের দল জাত গেল, বাঙালিত্ব গেল বলিয়া খঞ্জর হস্তে মৌলবাদের টুটি চিপিয়া ধরতে উদ্যত হইল। এতদ সঙ্গে, “মোরা ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালিরা সব এক জাত”, এহেন কথাটি ভুলিয়া নিজেদের সংখ্যা লঘু নিচু জাত ভাবিয়া হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠন পূর্বক সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দমনে জোট বদ্ধ হইলো। তিন ধর্মের পুঁজি, মুড়ি, লাড্ডু চাদরের নিচে লুকাইয়া তারা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ও মৌলবাদ তথা ম্লেচ্ছদের দমনের জন্য আমরণ অনশন করিতে লাগিল। তাহাদের কাহারো মহাপ্রয়াণ হইলে মৃতদেহ তৎক্ষণাৎ শহীদ মিনারে নিয়া গিয়া শ্রদ্ধার সহিত অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পাদন পূর্বক মরনোত্তর দেহ দান করিয়া থাকে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসিলে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দেশব্যাপী প্রতিমা , প্রতিকৃতি , শহীদ মিনার নির্মাণের হিড়িক পড়িয়া যায়। মানুষ খাইতে পাক আর না পাক… মুক্তিযুদ্ধ আর শহীদ দের পৌত্তলিক পন্থায় শ্রদ্ধা জানাইতে ইহবে যে কোন মূল্যে, নইলে বাঙালির জাত থাকিবেনা। ‘শিখা অনির্বান’ নামে অগ্নি প্রজ্বলিত করিয়া উহাকে স্বাধীনতা রূপক শক্তি ভাবিয়া শ্রদ্ধার সহিত পূজা করিতে শুরু করিল মূর্খ বাঙালির দল। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বানাইয়া উহা শুধু পথে ঘটে ঝুলাইয়া ক্ষান্ত হয় নাই। ঐ সব প্রতিকৃতি লইয়া শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রমমোচারীর আশ্রমের আদলে বানাইয়া পুষ্প মাল্য দান করিতে লাগিল। আর দিকবিদিক হইতে এপার ওপারের বাঙালিরা উলু ধ্বনি সহকারে জয় বাংলা, জয় মা কালী গাহিতে লাগিল।
আর শপথ নিতে থাকিল কোন ম্লেচ্ছ মৌলবাদীকে মাথা তুলিয়া দাড়াইতে দেয়া যাইবেনা, প্রয়োজনে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হইবে।
Leave a Reply