লিখেছেন : মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনক। যে দেশ একসময় আমাদের শাসন করেছিল আজ সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আমাদের দেশীয় কেউ। যদিও এটা অনেকটা দেশাচারের কথা। আমি খুব একটা দেশাচারের পক্ষে নই। ব্রিটিশরা ২০০ বছর আমাদের গোলাম বানিয়ে রেখেছিল এটি যারা সবসময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তারা কি মোগলরা কি করেছিল, খিলজী কি করেছিল, মাহমুদ গজনবী কি করেছিল সে কথা বলেন? ওসব নিয়ে বললেই তখন ‘সাম্প্রদায়িকতা হয়ে যাচ্ছে’ বলে আপনাকে ওরা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। আসলে যদি কেউ ভিন্ন কোন মাযহাবের অন্ধভক্ত হয় তখন সমস্যাটা এমনই হয়। মাযহাবের ভক্ত না হয়ে নিজের মস্তিষ্ক খাটিয়ে সকল কিছুর প্রভাব মুক্ত হয়ে সত্যকে দেখা জরুরি। ব্রিটিশরা আমাদের দেশ শাসন করেছিল এবং শোষণ করেছিল ঠিক, কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমাদের দেশ থেকে লাখ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীদের গ্রহণ করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশে এবং সংস্কৃতিতে আপন করে নিয়েছে; রাজনীতিতে, ব্যবসায়, শিল্পে ও সাহিত্যে আমাদের দেশের মানুষেরা সেখানে যথেষ্ট সম্মানের সাথে মূল্যায়িত হয়েছে এবং এগিয়ে গেছে। আর এজন্যই লন্ডনের মেয়র হতে পেরেছেন পাকিস্তানের সাদিক খান এবং যুক্তরাজের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। সভ্য অনেক দেশেরই এই চেহারা আছে। যে দেশে গণতন্ত্র আছে, ন্যায়বিচার আছে এবং বিদ্বেষের চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে ভিন্ন দেশের মানুষেরা এবং ভিন্ন রংয়ের মানুষেরাও ভিন্ন ধর্মের মানুষেরাও গিয়ে আশ্রয় পেয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী এবং ভাইস প্রেসিডেন্টও হতে পেরেছে। কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র নেই, যেখানে স্বৈরতন্ত্র রয়েছে, যেখানে ঘৃণা এবং সরকারের অন্ধ আনুগত্যই হয়ে উঠেছে দেশের মানুষের প্রধানতম বেঁচে থাকার উপায় সেখানে ভিন্ন দেশের মানুষের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোন জায়গা নেই। চীনের রাজনীতিতে, ব্যবসায় এবং সামাজিক জায়গায় বাংলাদেশীদের, ভারতীয়দের এবং পাকিস্তানিদের কোন জায়গা হয়নি। সৌদি আরবেও আমাদের দেশের মানুষদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সেখানে আমাদের দেশের মানুষের একমাত্র মূল্যায়ন হচ্ছে ‘মিসকিন।’ কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় – আমাদের দেশে আপনি সবচেয়ে বেশি ভক্ত পাবেন চীন এবং সৌদি আরবেরই! দুনিয়াতে হয়তো এটাই নিয়ম, যে আপনাকে দংশন করবে আপনি তার পূজারী হবেন আর আপনি যাকে দংশন করবেন তাকে আপনি ঘৃণা করবেন। এজন্যই মানুষ জাতি কাউকে বাঘ বললে খুশি হয়ে যায়, গর্ব করে বলে বাঘের বাচ্চা! কিন্তু কাউকে ছাগল বললে খুশি হয় না, গর্ব করে একে অপরকে ‘ছাগলের বাচ্চা’ বলে না। আদিকাল থেকে মানুষকে কামড়িয়ে, খুঁবলে বাঘই খেয়েছে, ছাগল কোনদিন মানুষকে খায়নি। বরং মানুষই খেয়েছে ছাগলকে, মানুষই বলি দিয়েছে ছাগলকে। ব্রিটিশরা আমাদের শাসন এবং শোষণ করেছে এ কথাটা বলার পাশাপাশি আরো অনেক কিছুই আপনার আমার বলার রয়েছে, সেসবও বলুন। আপনি কেবল যে দেশের পূজা করেন বা যে দেশের মাযহাবের ভক্ত সে দেশের শেখানো কথা বলবেন না, নিজের থেকেও কথা বলুন, নিজের চোখের দেখা থেকেও কথা বলুন। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখুন, হাওড়ার ব্রিজ দেখুন, দেশের রেল এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা দেখুন, পুরনো স্থাপত্যগুলো দেখুন, তারপর কথা বলুন।
কেবল বিদেশি প্রভুদের শেখানো কথা অনুযায়ী তাজমহল, কুতুব মিনার দেখলেই চলবে না, দেখতে হবে আরো অনেক কিছুই। যখন কেউ আপনাকে ইসলামের মাহাত্ম্য বলে, যখন কেউ আপনাকে জিহাদ করতে উস্কানি দিতে বলে তখন সেই ব্যক্তির নামধামটাও দেখুন। তার কর্মকাণ্ডও দেখুন। সে আপনার মধ্যে জিহাদ ঢুকিয়ে আপনাকে কেন মিসগাইড করতে চায় তা ঘেঁটে দেখুন। মাদ্রাসার হুজুরদের বোঝা উচিত, তাদের জিহাদের দ্বারা বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে কে, কারা, কোন দেশ।
Leave a Reply