লিখেছেন : কবিতা রায়
মনে শান্তি পাবার সহজ উপায় হল মগজে কোনো সমস্যাকে ঢুকতে না দেওয়া। এই যেমন ধরুন আপনি একটা মোটরসাইকেল চাইছেন, কিন্তু তেলের দাম দেখে কিনতে পারছেন না। এটা একটা বড় সমস্যা যার সমাধান বেশ কষ্টসাধ্য এবং দীর্ঘ। আপনার দুর্বল মগজকে এরকম একটা সমস্যা দিলে ফল খারাপই হবে। তাই আপনার মগজেরই সচেতন ফিল্টার এই ব্যাপারটাকে সমস্যা হিসাবে পাঠাবেনা। পাঠানোর আগে মডিফাই করে বলবে যে সাইকেল আর মোটরসাইকেল তো একই জিনিস। বরং সাইকেলের উপকারীতা বেশি। মোটরসাইকেল চালানোর চেয়ে সাইকেল চালানো ভালো। কিন্তু যার ভালো জিনিসটা কেনার ক্ষমতা আছে সে কখনোই সবাইকে সমান বলেনা। ভালো জাত দেখেই বাগানে আমগাছ লাগায়, ভালো জাত দেখেই কুকুর কেনে, ভাল ডাক্তার দেখিয়েই চিকিৎসা করায়, ভালো উকিল দিয়েই কেস লড়ে।
যেমন ধরুন আপনি একজন হিন্দু গুরু। চোখের সামনে দেখছেন যে ক্রিশ্চান, মুসলিম এবং বৌদ্ধদের সংখ্যা বেশি, জনপ্রিয়তাও বেশি। আপনি নিজেকে ঈশ্বরের জলজ্যান্ত অবতার দাবী করেন, অথচ আপনার ধর্মটাকে এক নম্বরে নিয়ে আসতে পারছেন না। এটা এক বিরাট পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু সেটা করতে না পারলে আপনার ভক্তমন্ডলী আপনাকে অবতার হিসাবে মানবেনা। তাই আপনি বলে দিলেন ঐসব ধর্মগুলোও আসলে একই তো জিনিস। ওরা এক নম্বরে থাকা আর আমরা এক নম্বরে থাকা আসলে সমান। কোনো তফাত নেই। আমি যা বলছি, ওরাও সেটাই বলছে।
আপনার ভক্তমন্ডলী যদি দুর্বল মগজের হয় তবে এতেই আপনি এক নম্বরে এসে যাবেন। ক্রীশ্চানদের সাফল্যকে আপনার সাফল্য মনে করবে। মুসলিমদের বিজয়কে আপনার বিজয় মনে করবে। বৌদ্ধদের বুদ্ধিকে আপনার বুদ্ধি মনে করবে। যে দলই জিতুক তাতে আপনারই জিত হবে, তাহলে আর আপনাকে হারায় কে? যদিও আপনার এই দাবীকে ক্রীশ্চান, মুসলিম কিম্বা বৌদ্ধরা একেবারেই পাত্তা দেবেনা, কিন্তু তাতে ক্ষতি কিছু নেই। আপনার ভক্তমন্ডলী ব্যাপারটা মেনে নিয়ে পয়সা দিলেই হল।
কিন্তু এই পথে সফল হতে গেলে আপনার একদল দুর্বল মগজের ভক্তমন্ডলী লাগবে। বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরতে যাদের মগজ সক্ষম নয়। আর সেই অবস্থাটা সহজেই আনা যায় লম্বা সময় নিরামিষ খেয়ে। অন্য আরো অনেক কারণেও মগজের এই ক্ষমতা বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়ে থাকে, কিন্তু সেগুলো বেশিরভাগই গুরুদের নিয়ন্ত্রণে নয় এবং পাইকারীভাবে প্রয়োগ করা যায়না। খাবারের উপর কোপ বসিয়ে সহজেই একটা বিরাট সংখ্যক মানুষকে অপুষ্ট মগজের জন্তু তৈরি করা যায় যারা ছাগলের মতোই পোষ মানবে।
Leave a Reply