লিখেছেন : কবিতা রায়
পর্যাপ্ত এমিনো এসিডের এবং মিনারেলের অভাবে কিছু মানুষের মগজে চিন্তাশক্তি কমে যায়। দুশ্চিন্তা করার ক্ষমতা কমে গেলে ডিফেন্স মেকানিজম হিসাবে মস্তিষ্ক সবরকম খারাপ চিন্তাকে ব্লক করে দেবার ব্যবস্থা নেয়। যেভাবে আমরা আমাদের অপরিণতবুদ্ধি বাচ্চাদেরকে কিম্বা অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে বাস্তব জগতের জটিল সমস্যাগুলো থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি, অনেকটা সেভাবেই মগজ নিজে নিজেকে সমস্যা থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে। কারণ সেইসব সমস্যাগুলো সমাধান করার সাধ্য তার নেই। ব্যাপারটা প্রায় প্রতিবন্ধীকে সংরক্ষণ দেবার মতো।
ফলে সেই অপুষ্টি আক্রান্ত প্রতিবন্ধী মগজ প্রথমেই সবরকম সমস্যাকে দাবিয়ে দিয়ে একটা “এই বেশ ভালো আছি” জাতীয় ছেলেভুলানো অনুভূতি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। তাতে পুরোপুরি সক্ষম না হলে সমস্যার কিছু কাল্পনিক সমাধান তৈরি করে ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেয়। কারণ সেইসব বাস্তব সমস্যাগুলোর কোনো উপযুক্ত সমাধান দিতে যে পরিমাণ খাটনি লাগে সেটা দুর্বল মগজের সাধ্যের বাইরে চলে যায়।
এভাবেই মানুষ একসময়ে বহু বাস্তব প্রশ্নের কাল্পনিক উত্তর খাড়া করেছে। সূর্য কেন ওঠে, বৃষ্টি কেন পড়ে, মানুষ কেন মরে ইত্যাদি সমস্যার কাল্পনিক সমাধান যেমন তৈরি করেছে তেমনই এসব ঘটনাকে একেবারেই অস্বীকার করার চেষ্টাও ছাড়েনি। মায়াবাদের রাস্তায় গিয়ে বৃষ্টি আদৌ পড়েনা, সূর্য আদৌ ওঠেনা, কোনোকিছুই আসল নয় বলে উড়িয়ে দেবার লোকও পাওয়া গেছে।
অসুস্থ মানুষকে যেমন পরিবারের লোকেরা সমস্যা থেকে দূরে রেখে কেবল ভালভাল খবর শোনায় সেভাবেই মানুষের মগজও তার নিজেরই অসুস্থ অংশটাকে কেবল ভাল তথ্য যেতে দেয়। যখন কোনো সমস্যা নিতান্তই চেপে রাখতে পারেনা তখন সেটার একটা কাল্পনিক সমাধান তৈরি করে এবং অসুস্থ অংশকে জানায় যে সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, কিম্বা খুবই তাড়াতাড়ি হতে চলেছে। এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো দরকারই নেই। কশাইখানার ছাগলেরা যেমন চোখের সামনে বাকিদের কেটে বিক্রি হয়ে যেতে দেখলেও দুশ্চিন্তাহীন হয়ে পাতা খায় সেরকমই লোকের অবস্থা হয়।
Leave a Reply