লিখেছেন : কবিতা রায়
অনগ্রসর জাতি বিষয়ক কমিশন, যার আরেক নাম মন্ডল কমিশন। কিন্তু ওটায় যাবার আগে আরেকটা কমিশনের ব্যাপারে একটু বলে নেওয়া ভালো।
বাবরি মসজিদ তদন্ত কমিশন গড়া হয়েছিল ৬ মাসের জন্য। তাদের কাজ সীমাবদ্ধ ছিল কেবল বাবরি মসজিদের উপরেই। এই কমিশন ৬ মাসে নয়, ৬ বছরেও নয়, ১২ বছরেও তার কাজ শেষ করে রিপোর্ট দিতে পারেনি। অন্যদিকে মন্ডল কমিশনের কাজ ছিল সারা ভারতের কোথায় কোন জাত পিছিয়ে আছে তার হিসাব নেওয়া। এই কাজে তাদের নাকি লেগেছিল মাত্র ১ বছর।
মন্ডল কমিশনের রিপোর্টের ভূমিকাতে বলা হয়েছে যে তাদের কাজের মধ্যেই একাধিক রাজ্যে নির্বাচন থাকার ফলে প্রচুর সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও তাদের কাজ একেবারে অলৌকিক বলা যায়।
১৯৭৯ সালের জানুয়ারীতে এই কমিশন গঠনের আদেশ বের হয়। তারপর সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে কমিশনের সদস্যরা প্রথমবার মিটিং করেন। অর্থাৎ ৮ মাস লেগেছিল কেবল কাজ শুরু করার আগে মিটিং এ বসতে। তারপর ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮০ তারিখে কমিশনের চেয়ারম্যান লিখছেন যে তাঁদের সমস্ত তথ্য রেডি, মাত্র ১৫ মাসে। চেয়ারম্যান এটাও উল্লেখ করেছেন যে ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২৪ মাস সময় লাগলেও আদতে কাজের সময় ছিল অনেক কম। সেটাও এমন এক সময়ের ঘটনা যখন একটা পরিবারের রেশন কার্ড হারিয়ে গেলে ডুপ্লিকেট বের করতে ৬ মাস লেগে যেত।
এরপরেও এটা ভুললে চলবে না যে এপ্রিল ১৯৭৯ এ সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল গুলোর কাছ থেকে তথ্য চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই একাধিক রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, সরকার বদল হয়ে গেছে, জনপ্রতিনিধি পালটে গেছে। সমস্ত তথ্য কবে ওনারা পেয়েছিলেন তার কোনো সঠিক সময় জানানো নেই।
এর থেকে কি এটাই মনে হয়না যে সিদ্ধান্ত আগে থেকেই তৈরি ছিল। কেবল একটা কমিশন বানানো আর তাকে দিয়ে সিদ্ধান্তটা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে?
কমিশনের রিপোর্টে আপনারা ৪০০০ বছর আগের একলব্যের আঙুল কাটার উল্লেখ পাবেন। গীতা বা মনুসংহিতার আইনে উচ্চজাতের বিশেষ সুবিধার উল্লেখ পাবেন। কিন্তু কী পাবেন না?
১০০০ বছর ধরে শরিয়তী ইসলামী রাজত্বে মুসলিমেরা যে অন্য জাতির চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে তার উল্লেখ পাবেন না। কত ভারতীয়কে এই সময়ে ক্রীতদাস হিসাবে বেচে দেওয়া হয়েছে সেসব পাবেন না।
ইংরেজ রাজত্বে যে ভারতীয়দের চেয়ে ইউরোপীয়রা বেশি সুবিধা লাভ করত তার হিসাব পাবেন না। দেশি কৃষকদের বেগার খাটিয়ে ধানের জমিতে নীল চাষ করানোর ইতিহাস পাবেন না। মসলিন কারিগরদের আঙুল কেটে নেবার কথা পাবেন না।
২০০ বছরের ইংরেজের রাজত্বে একই পদের জন্য ভারতীয় আর ইউরোপীয়দের বেতনের তফাতের কথা পাবেন না। ভারতীয় আর ইউরোপীয় সৈনিকদের সুবিধার তফাত পাবেন না। এমনকি কংগ্রেসী স্বাধীনতা সংগ্রামী গান্ধী আর অ-কংগ্রেসি স্বাধীনতা সংগ্রামী সাভারকরের মাঝে জেলখানায় কত বৈষম্য করা হত সেটাও পাবেন না।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার পর ইংরেজের চাকরি করা লোকেরা স্বাধীন ভারতের সরকার থেকে পেনশন পেত কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকেরা নয়, এটাও পাবেন না। এমনকি আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা যে প্রাক্তন সেনার কোনো সুবিধাই পায়নি অথচ ইংরেজের সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া সৈনিকেরা পেয়েছে সেটাও জানবেন না।
Leave a Reply