লিখেছেন : কবিতা রায়
রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের সময়ে ইউরোপের প্রধান শক্তি ছিল ইংরেজ। বাকিরা প্রায় সবই ছিল ছোটো ছোটো দেশ, যাদের আকার বা জনসংখ্যা কোনোটাই ভারতের একটা রাজ্যের সমানও হবেনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এভাবেই ইউরোপকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। ইনশাল্লা।
এই টুকরো ইউরোপের ছোটো ছোটো দেশগুলোই ছিল রুশ জার্মান জোটের প্রথম টার্গেট। রাশিয়ায় বলশেভিকদের বিপ্লবে মদত দিয়েছিল জার্মানি, তার বিনিময়ে হিটলারের উত্থানে সবচেয়ে বড় সাহায্য দিয়েছিল বলশেভিক রাশিয়া। দুজনে মিলে ইউরোপের এইসব ছোটো দেশগুলোকে ভাগাভাগি করে নেবার চুক্তিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হিটলার যেইনা অর্ধেক দুনিয়ার মালিক ইংলন্ডের সাথে লড়তে গেল, অমনি রাশিয়া তাকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দিল। সেই থেকে জার্মানি আর রাশিয়ার ঝামেলা শুরু।
ইউরোপের এই মডেল ভারতে অনুসরণ করার শুভ উদ্দেশ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ারও ছিল। তার জন্য প্রয়োজন ছিল ভারতকে টুকরো টুকরো করা, যাতে দুর্বল অংশগুলো দখলে নেওয়া যায়। এই মহান উদ্দেশ্যে ফান্ড আদায়ের আশায় ১৯৫০ সালে ভারত থেকে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন বাসবপুন্নাইয়া, এস. এ. ডাঙ্গে, রাজেশ্বর রাও আর অজয় ঘোষ। মাকিনেনি বাসবপুন্নাইয়া পরে সেই বৈঠকের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে সেখানে মিলিত হয়েছিলেন জোসেভ স্ট্যালিন, ভিয়াচেসলভ মিথাইলচ মলোটড, মিথাইল আন্দ্রেইচ সুসলভ আর জিওরগি ম্যাক্সিমিলিয়ানোইচ মেলেনকোভ।
ইউরোপের পোল্যান্ড চেকোশ্লোভাকিয়া হাঙ্গেরি রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার মতো ছোটো ছোটো দেশে যেভাবে রাশীয়ার মদতে কমিউনিস্ট-সোশ্যালিস্ট রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ভারতে সেই একই মডেল অনুসরণে রাশীয়া পয়সা দেবে এই আশায় ওনারা কৌটো নাড়তে গেছিলেন। কিন্তু তার আগেই স্তালিন এই ভারতীয় বামেদের খেলাফতি ইতিহাস জেনে গেছেন তাই এক পয়সাও সাহায্য না করে নিজেদের পথ নিজেরা দেখে নিতে বলে বিদেয় করে দিলেন। কিন্তু তাতেও আমাদের খেলাফতি কমরেডরা হাল ছাড়লেন না। ফিরে এসে বাসবপুন্নাইয়া প্রকাশ করলেন তাঁর অন্ধ্র থিসিস। যার মূল বক্তব্য হলঃ শক্তিশালী ভারত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সফল হতে পারবেনা। কমিউনিজমের স্বার্থে ভারতকে টুকরো করতেই হবে।
এরপর দলের মধ্যে টানাটানি শুরু হল। রাশিয়া তো নিজের পথ নিজেরা দেখে নিতে বলে বিদেয় করে দিয়েছে। এখন ভারতকে টুকরো করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কমিউনিস্ট সেজে টাকা কার কাছে পাওয়া যায়? মনে রাখতে হবে যে সেই সময়ে ওপেক তৈরি হয়নি, ইসলামী দেশগুলোর এত টাকা আর ক্ষমতাও হয়নি। তাই দলের একটা অংশ চীনের কাছে সাহায্য পাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। শেষ অবধি কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে চীনপন্থীরা আলাদা দলও করলেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল খেলাফত আন্দোলনের নেতাদের হাতে। নামে কমিউনিস্ট রাখার উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট দেশগুলোর কাছে পয়সা নেওয়া আর সেই পয়সায় ভারতে মুসলিমদের জেহাদি ট্রেনিং দেওয়া। ওনারা কমিউনিস্ট দেশগুলোকে বোঝাতেন যে ভারতের হিন্দুরা অহিংসাবাদী, তাদের দ্বারা বিপ্লব হবেনা। তাই সমস্ত টাকা মুসলিমদের পিছনেই দেওয়া উচিত।
Leave a Reply