আসিফ মহিউদ্দীনসহ সব নাস্তিকেরা সাংঘাতিক পাপী মানুষ। তারা অবশ্যই এই পাপের শাস্তি পাবেন। তারা অবশ্যই দোজখে যাবেন এবং অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়বেন। এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সংশয় নাই। বলেন আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু তাদেরকে এই শাস্তি দেয়ার সম্পূর্ণ ভার স্বয়ং আল্লাহতালার। আবার এমনো হতে পারে, আল্লাহ তাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিয়ে উনাদেরকে হুরপরী ভর্তি বেহেস্তের ফ্লাটগুলা বরাদ্দ দিয়ে দিলেন। আসলে আমরা কৃষ্ণলীলা আর নবীলীলার ব্যাপারগুলো জানলেও আল্লালীলার ব্যাপারে কিছুই জানি না। তিনি কখন কাকে হুরপরী দেবেন, কখন কাকে গেলমান দেবেন, সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান।
নবীজী নিজেও তার বেহেস্তে যাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। থাকবেনই না কেনো! জীবনে পাপ তো আর কম করেন নাই। ইয়ে মানে আল্লাহ উনাকে যদিও বেহেস্তের সর্বোচ্চ এবং শ্রেষ্ঠতম ফ্লাট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবুও আমাদের বিশ্বাস নাই। আমরা প্রতিনিয়ত উনাকে সে কথা মনে করিয়ে দেই, বেহেস্তের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে তাকে অধিষ্ঠিত কর, যার প্রতিশ্রুটি তুমি তাকে দিয়েছ, এবং অধিষ্ঠিত না করলে তুমার খপ্পর আছে। দরকার হলে আল্লারে নাই কইরা দিমু, মাগার নবীজীর বেহেস্ত ফসকাইয়া যাইতে দিমু না!
এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম, পাপের শাস্তি দেয়ার ভার সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে। তাই কেউ পাপ করলে তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা হওয়ার কিছু নাই। সব মাথা ব্যথা স্বয়ং আল্লাহতালার। আপনি বড় জোর নাস্তিকতাকে ঘৃণা করতে পারেন, চরম ধর্মান্ধ হলে নাস্তিকদেরও করতে পারেন। তবে আল্লাহ বলেছেন, পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। তাই নাস্তিকদের পাপ নিয়ে রাত না জাইগা আসেন ঘুম দেই।
ঘুম ভাঙলে আসেন এইবার পরপার ছেড়ে ইহকালে আসি। ইহকালে যথেষ্ট পরমানে ফ্লাট, হুরপর্ গেলমান, মদ, সুরার ব্যবস্থা থাকলেও এখানে আল্লাহ নেই। কেননা ইহকালে পাপের শাস্তি বলে কিছু নাই। সেটা আছে, সেটা হলো অপরাধ এবং অপরাধের শাস্তি। ইহকালে কেউ অপরাধ করলে আমরা যখন তার শাস্তি নিশ্চিত করতে পারি, তখন ইহকালেই বেহেস্তের সুখ লাভ সম্ভব হয়। যেসব দেশে আইনের শাসন, সেসব দেশের মানুষই বেশি শান্তিতে আছে। তাই ইহকালে আল্লার পরকালের মতই আরেকটা সিস্টেম আছে। এই সিস্টেমে সরকার আছে, আইন আছে, প্রশাসন আছে, বিচারক-পুলিশ সবই আছে। তবে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারা না পারাটা একান্তই আমাদের সাফল্য এবং ব্যর্থতা।
আসিফ মহিউদ্দীন সহ অন্যান্য নাস্তিকদের শাস্তি দিতে না পারাটা আমাদের এবং সরকারের ব্যর্থতা নয়। কেননা নাস্তিকরা দেশের কোনো আইন ভঙ্গ করেন নাই, কোনো অপরাধ করেন নাই। কিন্তু কোন অপরাধ না করার পরও সরকার তাদের আটকে রেখেছে। এইটা কিন্তু দেশের আইনেই সরকারের অপরাধ। তবে জানেন তো এদেশের গুণগান গেয়ে শেষ করা যাবে না। শুধু একটা কথাই বলি, আমাদের দেশ হইলো বিশাল বিশাল আস্তিকদের দেশ। আমরা একেকজন বিশাল বিশাল ধার্মিক। আমরা এক হাতে ধর্ম পালন করি আর অন্য হাতে দূর্নীতিতে বছরের পর বছর চ্যাম্পিয়ন হই।
সভ্য মানুষের দুনিয়ার লিখিত আইন ছাড়াও কিছু অলিখিত ব্যাপার চালু আছে। যেমন কারো বিশ্বাসে আঘাত করা ঠিক নয়। যেমন ধরেন আপনার বিশ্বাস আল্লাহ আছেন, তেমনি অনেকের বিশ্বাস আল্লাহ নাই। আপনার বিশ্বাস নবী একজন মহামানব, তেমনি অনেকের বিশ্বাস নবী একজন মহাউন্মাদ। সবই বিশ্বাসের খেলা। তাই অন্যরা তখনই আপনার বিশ্বাসকে আঘাত করবে না, যতক্ষণ আপনি অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত না করছেন। (এইটাই আসল পয়েন্ট।)
যা হোক, সরকার আমাদের সবার। সরকার আমাদেরই হাতে সৃষ্টি। তার কাজ হলো জনগনের খেদমত করা। সেটা না করে যদি সে ফ্যাঙ্কেনস্টাইনরূপে আবির্ভূত হয় তাহলে সেটা প্রতিহত করার দায় আমাদের সবার। কেননা দানব ভালোমন্দ বিচার করে না। দানব আজ অন্যের ঘর পোডাচ্ছে তো কাল আপনার ঘর যে পোড়াবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই আসুন অন্যের ব্যক্তিগত পাপ নিয়ে মাথা না ঘামাই। শুধু আইন ভঙ্গ করে অপরাধ করলে তার প্যাদানি যেন সরকার নিশ্চিত করে, সেটার দিকে নজর দেই। কেননা প্যাদাইলে সব ঠিক।
Leave a Reply