মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল বলে দেশের মানুষ যখন লীগরে ভোট দেয়, তখন সেইটা জাইনা-বুইঝা দেয়। অনেক আশা নিয়ে দেয়। আর যখন সেই আশাভঙ্গ হয়, তখন বিরক্ত হয়ে অন্য দলরে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। আশাভঙ্গ হইয়াই মানুষ ধর্মের দিকে বেশি বেশি ঝুকে পড়ছে আর সেই সুযোগে জামাত-শিবিরও নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
তো মানুষ বিএনপিরে ভোট দিয়াও পুঙ্গা মারা খায়। শেষে আবার অনেক আশা নিয়ে লীগরে ভোট দেয়। এই জিনিসটা লীগ এতদিনেও বুঝতে অক্ষম! তাদেরকে এককভাবে ক্ষমতায় আনার পরও মানুষের হার্টবিট এরা বুঝে না। আর এর দায় কিন্তু পুরাটাই লীগের ঘাড়ে চাপবে।
আমার এলাকার এক জানাশোনা ভিনধর্মী লোক স্কুলজীবনে খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। অনেকদিন ধরে বিদেশে। দেশের কিছু সরকারী কাজ টেন্ডার নিয়ে করছেন অনেক দিন ধরে। এজন্য মাঝে মাঝেই দেশে আসতে হয়। কিছুদিন আগে এসেছিলেন। কাজে কিসব সময় লাগাতে সেই ফাকে এলাকায় ঘুরে গেলেন। হতাশা নিয়ে বললেন, বিএনপির আমলের চাইতেও এই সরকারের হাতে অনেক বেশি টাকা। কিন্তু কাজ করাচ্ছে না। সবাই বসে আছে কিভাবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের ভাগেরটা বাগাবে। বিএনপির আমলে কাজ পেতে একটু সমস্যা হলেও কাজ শেষ করে পেমেন্ট পেতে কোন প্রকার সমস্যা হয় নাই। জায়গামত টাকা দিলেই সব ক্লিয়ার।
কিন্তু লীগের সময়ে হইছে উলটা। প্রজেক্ট পাচ্ছেন সহজেই। কিন্তু পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে নানা রকম তালবাহানা। ঘুষ নিচ্ছে নানা রকম কাহিনী করে। যেমন ক্যাশ না নিয়ে বিভিন্ন প্রকার উপহার, বিদেশ ঘুরে আসার টিকিট আর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি। এসব করেও যে পেমেন্ট সময় মত পাচ্ছেন, তা নয়। শেষ যেটা নিয়ে সমস্যা, একটা ছোট খাটো সিম্পল প্রোজেক্ট। লাখ ৫০-এর মত কাজ। কাজ শেষ। তিনি আসছেন পেমেন্ট নিতে। উপরের পর্যায়ে সব ক্লিয়ার। তবুও নিচের পর্যায়ে কোথায় যেন আটকে রাখছে। তারা নাকি দেখতে চায় প্রজেক্টটা কিভাবে বানানো হইছে। অথচ লোকগুলা টেকনিক্যাল না। তারপর বলছে প্রজেক্ট চালাইতে শুধু ম্যানুয়াল দিলে হবে না, তাদের কয়েকজনরে হাতে-কলমে ট্রেনিং দেয়া লাগবে। তাও আবার দেশে বসে হবে না। বিদেশে নিয়ে গিয়ে ট্রেনিং! চিন্তা করতে পারেন?
এই লোক চরম ভাবে লীগার। কিন্তু এখন বলছে পরের বার বিএনপি এলেই তার ভালো হয়। তাতে কাজ করতে তার এত ঝামেলা হয় না। তারেক চোরায় ঘুষ খায় বাপকা বেটার মত। আর ঘুষ খেয়ে কাজ করার গ্যারান্টি ১০০%! আর লীগেরগুলা পুতুপুতু করে। ঘুষ খাইতে ভয় পায়। শেষ পর্যন্ত ঠিকই খায়। কিন্তু কাজ করে না।
লীগের ছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। প্রায় সব জনগন তাদের পিছে ছিল। তখন রাজাকারদের ধরে ধরে বিনা বিচারে ফাঁসি দিলেও দেশের মানুষ খুশি হইত। কিন্তু সেটা না করে তারা যেটা করতেছে, তা হলো- ১০০% ভেজাইল্লা পলিটিক্স। হেফাজতিদের প্যাদানি দিয়া ঠিকই মাঠছাড়া করল, হরতালকারীদের ব্যাপারেও এখন কঠিন হচ্ছে, অথচ এই কাজগুলা আরো আগে করতে পারলে বেঁচে যেত অনেক প্রাণ, দেশের অনেক সম্পদ। কিন্তু এরা করছে পলিটিক্স, দেশের মানুষরে দেখাইতে চাইছে, দেখো তারা কত খারাপ।
সবাই ব্যস্ত কে কত কম খারাপ, সেইটা প্রমাণ করতে। ভালো হওয়ার পথে কেউ নাই। দেশের জনগনের দূর্ভাগ্য যে আমরা এমন একটা দেশে আছি। লীগের বোঝা উচিত, নিজে ভালো না হইয়া খালি অন্যের দোষ ধইরা পার পাওয়া যাবে না।
লীগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লিখত আসিফ মহিউদ্দীন। এই কারণে তাকে আটকে রাখা অনেকেই সমর্থন করতেছেন। কিন্তু তাদেরও মনে রাখা উচিত, আসিফ কিন্তু একা নন। নিজেরা ভালো না হইলে অন্যরা তাদের ফুটায় আঙুল দেবে না, সেই দিন আর নাই। নিজে ভালো না হইয়া অন্যের কন্ঠ রোধ করা সম্ভব না। এই নির্বাচনের আগে শুধু অনলাইনেই জাস্ট কয়েকজন যদি তাদের পচাইতে থাকে তবে নৌকা কিন্তু উল্টাইয়া ডুববে, সেইটা লীগের মাথায় থাকা উচিত। লীগের চরম সমর্থক হয়েও শুধু পেটের স্বার্থে অন্যদিকে ঝুকে পড়ার মানুষের অভাব নাই এই দেশে।
মন্দের ভালোর মধ্যে যে বিশাল ধোকাবাজি, সেইটা জনগন এখন ভালোই বোঝে। মুক্তিযুদ্ধ বেঁইচা তোমাদের পেট ভরবে, আমাদের না। বাহুবলে না পারি, ভোটে তো পারব।
Leave a Reply