ব্যবসাটাকে লোকঠকানো মনে হয় বলে কোনোদিন এসবে আগ্রহ হয়নি। অর্থনীতিটাও কঠিন মনে হয়। আমাদের অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান যখন উনার ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ বইয়ের ভূমিকায় বলেন যে, ‘জন্মগতভাবে বাঙালিরা বামপন্থী’–কথাটা ‘হাস্যকরভাবে’ সত্য মনে হয়, তখন এই বইটির প্রতি আগ্রহ জন্মে। বই পড়ার অভ্যাস না থাকলেও, এবং সময়ের অভাব থাকা সত্ত্বেও একটু একটু করে বইটা পড়ি।
জন্মগতভাবে–অর্থাত যতক্ষণ না এরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাঙালি আসলেই বামপন্থী। এ-ও মনে হয়েছে–যে বাঙালি যত বেশি গরীব, সে তত বেশি বামপন্থী। একজন গরীব আরেকজন গরীবকে নিজের সমগোত্রীয় মনে করে; ধনীরা এমন মনে করে না, তাদের মধ্যে চলে আরো ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতা।
আমরা গ্রামের গরীব কৃষক, আমার মা আরো গরীব পরিবারের। ফসলের মৌসুমে অনেক আরো অনেক কৃষক কাজ কাজ করতো আমাদের বাড়িতে। মায়ের দায়িত্ব ছিল রান্না ঘরে–কৃষকের খাবারের ব্যবস্থা করা। কোন কৃষক কখন কতটা ভাত খাবে, কেউ বলতে পারতো না। তাই ভাত রান্না হতো কোনো হিসাব ছাড়া। খাওয়াদাওয়ার পর্ব চুকে যাওয়ার পরেও যদি খাবার থেকে যেত, মা সে খাবার আশেপাশের বাড়িতে দিয়ে দিত। কখনো কখনো পান্তা হতো। যারা বাড়িতেই ধান উড়ানো, খড় নাড়া–এসব কাজ করত–তারা ভোর বেলা ওই পান্তা খেয়েই কাজে লেগে যেতো। এছাড়া বাড়িতে প্রচুর কুকুর-বিড়াল তো ছিলই।
গরীব ভিক্ষুক কিংবা পথশিশুদেরও দেখবেন পশুপাখিদের সাথে খাবার ভাগ করে খেতে, রাতে এদের সাথে ঘুমাতে। অবশ্য ধনী লোকেরাও কখনোসখনো কুত্তাবিলাই পালে। বিদেশেও অনেক সিঙ্গেল লোকেরা…
বইটায় অনেক বিষয়ে আলোচনা আছে।–নলকূপের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ, সুখের ব্যবচ্ছেদ, বাংলাদেশের পরিবেশের বিপর্যয়, বাঙালির জীবন, ধর্মের প্রভাব, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, বিশ্বায়ন…
সবচেয়ে বেশি মজা লেগেছে এই ‘বিশ্বায়ন’ বা ‘গ্লোবালাইজেশন’ বিষয়ে। লেখকের মতে–“বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মৌলিক নির্যাস হলো প্রতিযোগিতা।” আমার মনে হয় সুখ-শান্তির মূল কথাটাও এই বাক্যের মধ্যে নিহিত। নিজের মতো ব্যাখ্যা করতে গেলে হয়তো ‘কুয়োর ব্যাঙ’ টাইপের ট্যাগ খাওয়া নিশ্চিত। তারচেয়ে লেখক একটা আফ্রিকান প্রবাদের বাংলা করে দিয়েছেন–সেটাই তুলে দেই–
“আফ্রিকায় প্রতিদিন ভোরে একটি হরিণ জাগছে।
সে জানে যে সবচেয়ে দ্রুতগামী সিংহের চেয়ে অবশ্যই তাকে জোরে দৌড়াতে হবে, নইলে তাকে মরতে হবে।
প্রতিদিন সকালে একটি সিংহ জাগছে।
সে জানে, তাকে সবচেয়ে ধীর গতিসম্পন্ন হরিণের চেয়ে জোরে দৌড়াতে হবে, নইলে তাকে উপোসে মরতে হবে।
আপনি হরিণ না সিংহ, তাতে কিছু যায় আসে না,
ভালো চাইলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করুন।”
আজ রবিবার, ছুটির দিন–তাই ঘুম থেকে ওঠার সময় সূর্যের খবর রাখিনি। এখন, একটু দেরিতে, এই ভর দুপুরেই, না হয় একটু দৌড়ে আসি।
Leave a Reply