[মহুয়া ভট্টাচার্যের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া]
দেবরাজ ইন্দ্রের রাজসভা।
সকল দেবতাগণ নিজ নিজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। নরোম, তুলতুলে পাখির পালকের তৈরি প্রতিটি আসন। ফুরফুরে স্বর্গীয় হাওয়া বইছে , নানাবিধ সুমিষ্ট ফল ও খাবার দেবতাদের সামনে সাজানো। দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে আছেন পবনদেব, অগ্নি দেব, বায়ু দেব।
বায়ুদেব চুটকি করছেন – সকলে হেসে গড়িয়ে পড়ছেন , অগ্নিদেব স্বর্গের কূটনৈতিক নিদান দিচ্ছেন – সকলে বলছেন, ” সহমত বাই ” ” সহমত বাই “।
এমন মূহুর্তে স্বর্গের কিন্নরী, দেবরাজ ইন্দ্রের প্রিয় ” উরু ” মরাকান্না কাঁদতে কাঁদতে রাজসভায় এলেন। ” উরুর কান্না দেখে তো দেবরাজ ইন্দ্র ব্যতীব্যস্ত! কি ব্যাপার! তাঁর উরু কাঁদছে! হায়! কেন কাঁদছে সে!?
উর্বশীঃ মহারাজ! আপনাকে এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ। নইলে আজই আমি আমার প্রাণ ত্যাগ করবো, হুমমম।
ইন্দ্রঃ ওকি! কি হয়েছে উরু সোনা! মানিক আমার! তুমি কাঁদছো কেন!?
উর্বশীঃ মহারাজ! নারদ! নারদ! ( বলেই ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলো) ।
ইন্দ্রঃ নারদ!? কি করেছে নারদ!?
উর্বশীঃ মহারাজ, নারদ আমাকে বলেছে আমার গালে নাকি ব্রণ উঠেছে! ভাবুন মহারাজ কি অপমান সে আমাকে করলো! না! না! আজ আমি প্রাণ ত্যাগ করবোই, কেউ আটকাতে পারবেনা।
ইন্দ্রঃ সেকি! এত বড় অপমান!? উর্বশীর গালে ব্রণ!? এর দেখছি একটা বিহিত করতেই হবে।
( পবন দেব ব্রক্ষ্মার স্তুতি গেয়ে একটা কবিতা লিখছিলেন, তিনিও চোখ তুলে চাইলেন।)
বললেন – লক্ষ্মীছাড়া নারদের এতবড় সাহস! কে আছিস! ডাক ব্যাটাকে।
সকল দেবগণের স্বমস্বর হুংকারে নারদকে রাজসভায় হাজির হতে হোলো। হাতে, জটায় বেলফুলের মালা লাগিয়ে, কপালে চন্দনে তিলকে এঁকে, হাতে খঞ্জনী বাজাতে বাজাতে ” নারায়ণ ” ” নারায়ণ ” জপ করতে করতে নারদ এসে হাজির হলেন।
ইন্দ্রঃ কি ব্যাপার নারদ! কি শুরু করেছো তুমি!? তুমি নাকি উরু আই মিন উর্বশীর গালে ব্রণ উঠেছে বলেছো!? কি সাংঘাতিক!
নারদঃ নারায়ণ! নারায়ণ! এতে সাংঘাতিকের কি হোলো মহারাজ। ঐ তো! ঐ যে দেখুন উর্বশীর ডান গালে একটা ছোট্ট ব্রণ মত হয়েছে, এটা দিনকে দিন বাড়বে মহারাজ।
দেবতাগণ একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করেছেন। কি বিপদজনক পরিবেশ! উর্বশীর সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন করা মানেই তো স্বর্গের সৌন্দর্যানুভূতিতে আঘাত দেওয়া। বায়ুদেব আর চুপ করে রইতে পারলেন না। তিনি গর্জে উঠে বললেন, ” নারদ, তুমি আগেও এসব সুঁড়সুঁড়ি দেওয়া কথাবার্তা বলে স্বর্গের সুন্দর মৈত্রীময় পরিবেশে আঘাত করতে চেয়েছো, না এবার তোমাকে সত্যিই থামাতে হবে। “
এসব কথার একফাঁকে বিশ্বকর্মা দেখলেন, উর্বশীর গালে সত্যিই একটা ছোট ফুসকুড়ির মত কি যেন দেখা যাচ্ছে। বিশ্বকর্মা তাতে সামান্য হুদা বিউটির ফেসপাউডার লাগিয়ে দিলেন, সবার অলক্ষ্যে। উর্বশী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে যাত্রায়।
এমন সময় অগ্নিদেব উঠে বললেন – ” উর্বশী আমাদের স্বর্গের সুন্দরী শ্রেষ্ঠা। সে আমাদের অবসরের বিনোদন। তাঁকে নিয়ে এহেন নোংরা কথা প্রবল বিদ্বেষ প্রসূত, এ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। “
নারদ মুখ গুঁজে সবার নিদান শুনছেন। ইন্দ্রদেবের চক্ষু রক্তবর্ণ। পবন দেব নারদীয় বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক একটা কবিতা রচনা করে ফেললেন। উর্বশী তখনো অঝোরে কেঁদে চলেছেন। তার চোখের জলে বাদল নামলো, বন্যা হোলো। জলের তোড়ে বিশ্বকর্মার লাগিয়ে দেওয়া হুদা বিউটির ফেসপাউডার ধুয়ে যেতেই পবন দেব দেখলেন আসলেই তো উর্বশীর গালে একটা ব্রণ….. না! না! ওকি! ওতো আর ব্রণ নেই, ফোঁড়া হয়ে গেছে! সর্বনাশ! পবন দেব চোখের ইশারায় উর্বশীকে একটা বসুন্ধরা টিস্যু এগিয়ে দিলেন সবার আড়ালে । আপাতত উর্বশী ফোঁড়া টিস্যু দিয়ে ঢেকে ইন্দ্র দেবের মুখের নিদান শুনছেন।
ইন্দ্রঃ তো নারদ, ফাঁই সালা তো হয়েই গেলো! তোমাকে স্বর্গ থেকে বহিষ্কার করা হবে। তুমি আজই মর্তে চলে যাবে এবং লোকালয়ে মনুষ্য জীবন যাপন করবে।
নারদঃ মহারাজ! কিন্তু আমার অপরাধ কি!? আমি উর্বশীর মুখে একটা ব্রণ দেখেছি, তাই তো বললাম!
ইন্দ্রঃ না, তুমি তা বলতে পারো না। এ ঘোরতর দুষ্কর্ম্ম। স্বর্গের সৌন্দর্যানুভূতিতে আঘাত দেওয়া। তুমি আমাকে আর কোনো কিছুই বুঝাতে এসো না। তোমার রায় হয়ে গেছে।
এদিকে উর্বশীর ফোঁড়াতে খানিক চিনচিন ব্যাথা শুরু হোলো। অগ্নিদেবের বোরোলীন তাতে কাজে দিলো না। ফোঁড়া পেকে শুরু হোলো যন্ত্রণা। উর্বশীর ডান গাল ফুলে ডোল। ব্যাপারটা এখন বিশ্বকর্মার আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সে ডাক দিলো ইন্দ্রদেবকে। এত কম সময়ে উর্বশীর মুখের এই অবস্থা দেখে ইন্দ্র দেবের তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! এদিকে নারদ চেয়ে রয়েছে ইন্দ্রদেবের দিকে। ওদিকে উর্বশীর গালের ফোঁড়ার যন্ত্রণায় মাটিতে গড়াগড়ি শুরু হয়ে গেছে।
এমন ভয়ংকর ফোঁড়া ওঠা মুখ দেখে বায়ুদেব, পবন দেব বহু আগেই পালিয়েছেন রাজসভা ছেড়ে। অগ্নিদেবও পালাই পালাই করছেন। ইন্দ্রদেবের মনে হোলো এবার তারও যাওয়া উচিত। শচীদেবী আজ পাঁঠার মাংস রেঁধেছেন, রাজসভায় আসার পথেই তার সুঘ্রাণ পেয়েছেন।
ভাঙা হাটের মত কখানা সিংহাসনের সামনে ফোঁড়ার বিষে ছটফট করছে উর্বশী। সামনে দন্ডায়মান নারদ তাকে এখন ফোঁড়া কাটাতে নিয়ে যাবে।উর্বশীকে স্বান্তনা দিয়ে নারদ বলল,
“Darling I’m here for you!'”
Leave a Reply