লিখেছেন : কবিতা রায়
টুপি পরানোর ইতিহাস
আজ থেকে অনেকদিন আগে বাঙালিরা সবাই বোকা ছিল। তাদের মধ্যে নানারকম জাতপাত ছিল, ভাগাভাগি ছিল। তারপর এসে গেল সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার ধর্ম ইসলাম। সেই ধর্মে কোনো ভেদাভেদ নেই বলে অনেকেই দলে দলে টুপি পরল। যদিও ইতিহাসে লেখা হয় যে বামুনের হাতে অত্যাচারিত হওয়া নিচু জাতেরা নাচতে নাচতে ইসলাম কবুল করেছিল, কিন্তু আসল কাহিনী তা নয়। ইসলামের ছায়াতলে সবচেয়ে বেশি গেছিল জাতপাতহীন বৌদ্ধরা। ভারতের যেখানেই বৌদ্ধ মেজরিটি ছিল সেখানেই আজ মুসলিম মেজরিটি।
মোগল দস্যু জহিরুদ্দীন মহম্মদ যখন দলবল নিয়ে কাফের কোতল করতে বেরোতেন তখন তাঁর হিটলিস্টে কেবল হিন্দুরা থাকত না, শিয়া মুসলমানেরাও সেই কাফের-তালিকায় সমান গৌরবে থাকত। বস্তুত সুন্নী মোগলদের টার্গেট ছিল এই শিয়া মুসলমানেরাই। ভারতের যেকোনো শিয়া স্কলারকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন কিভাবে সুন্নীদের আক্রমণে তারা মধপ্রাচ্য থেকে উদবাস্তু হয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। কিভাবে এই শিয়াদের কোতল করার জন্য জহিরুদ্দীন মহম্মদ ওরফে বাবর বাদশা হিন্দুস্তান আক্রমণ করেছিল। কিভাবে হিন্দু আর শিয়াদের এক তলোয়ারে কেটে দুখানা করা হত। আজ বাবরি মসজিদ সরিয়ে সেখানে রামমন্দির হওয়াতে ভারতের শিয়ারা কেন আপত্তি করছেনা তার আসল কাহিনী এখানেই। ঐ মসজিদ শিয়াদেরও রক্তে সমান ভিজেছিল।
শিয়া সুন্নীর ব্যাপারটা তখন কম জানা থাকলেও এখন প্রায় সকলেরই জানা। এরকম আরো বহুরকম মতের ইসলাম আছে যারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। কিন্তু যেটা বেশিরভাগ অমুসলিম এখনও জানে না তা হল আতরাফ মুসলমান।
শিয়া, সুন্নী, কাদিয়ানী ইত্যাদি বাহাত্তর ফেরকা ছাড়াও ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে আশরাফ এবং আতরাফ ভাগ আছে। আশরাফ অর্থাৎ সেরা, আতরাফ হল ইতর। প্রধানত বাইরে থেকে আসা আরব, তুর্কি, ইরানী ইত্যাদি বিদেশি মুসলমানেরা আশরাফ আর ভারতের ছোটোলোক হিন্দু থেকে মুসলমান যারা হয়েছিল তারা হল আতরাফ বা ছোটোলোক। তবে পয়সাওয়ালা হিন্দুরা মুসলমান হলে আশরাফদের হারেমে মেয়ের বিয়ে দিয়ে জাতে উঠতেন। এই ভাগাভাগিটা বিদেশি সাহেব আর দেশি ফিরিঙ্গির মতোই ছিল। যদিও মোল্লারা এগুলো স্বীকার করতে চায় না, কিন্তু এরকম ভাগ যে আছে তা স্বীকার করে সৌদি আরব অফিসিয়ালি জানিয়েছে যে ভারত-পাকিস্তানের মুসলমানেরা নিচু জাত। সৌদির আইনে সেদেশে কোনো নিচু জাতের মুসলমান নাগরিকত্ব পায়না। কারো সন্দেহ থাকলে চেক করে নিতে পারেন।
কিন্তু ইসলামের প্রচারকেরা এইসব তথ্যগুলো চেপে গিয়ে বলত ইসলামের চোখে সবাই সমান। এইসব মিথ্যা বুঝিয়ে মসজিদে নিয়ে যেত। গিয়ে কলমা পড়িয়ে মাথায় টুপিটা পরিয়ে দিত। তারপর যখন আসল ব্যাপার প্রকাশ পেত তখন আর সেই টুপি ফেলে দেবার কোনো উপায় ছিল না, ইসলাম ত্যাগ করলেই কোতল। এই হচ্ছে টুপি পরানো প্রবাদের ইতিহাস।
Leave a Reply