লিখেছেন : কবিতা রায়
কমিউনিজম জিনিসটাকে অনেকে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র মনে করলেও আসলে এটা অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম হাতিয়ার। সঠিকভাবে এটাকে কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো দেশেরই উৎপাদনব্যবস্থাকে চাহিদার নিচে নামিয়ে দিয়ে সেই দেশটাকে বাজারে পরিণত করা সম্ভব, কাঁচামালের জোগানদারে পরিণত করাও সম্ভব। সেই দেশ থেকে ব্রেনড্রেন করিয়ে বুদ্ধিমান লোকেদের নিজের কাজে লাগানো সম্ভব। ইতিহাসে একাধিক উদাহরণ আছে, বর্তমানেও আছে।
রুশোর জন্মভূমি ফ্রান্স বা কার্ল মার্ক্সের জন্মভূমি জার্মানী, কোনোখানেই এই আজব তত্বের প্রয়োগ হয়নি। যেমন আধুনিক কালের নোবেল পাওয়া অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন আমেরিকায় বসে তাঁর মহান তত্ব আবিষ্কার করলেও সে তত্ব আমেরিকায় ব্যবহার হয়না।
চাহিদা অনুযায়ী কিম্বা চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলে তবেই পণ্য সুলভ হয়। কিন্তু এটা হতে গেলে একচেটিয়া কারবার থাকলে চলেনা। এই বাস্তবতা কমিউনিজম স্বীকার করলেও কাজের বেলায় কমিউনিস্ট দেশে উৎপাদনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকে রাষ্ট্রের বকলমে রুলিং পার্টির। কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে কোনোখানেই কখনো উৎপাদনের উপর শ্রমিক শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়নি, উৎপাদনের মালিকানা পেয়েছে সরকার ওরফে পার্টি। যার কারণে কোনও কমিউনিস্ট দেশেই চাহিদা অনুসারে উৎপাদন হয়না। অভাব লেগেই থাকে, আর সেই অভাব গোপন করার জন্য মিডিয়ার উপর সেন্সরশিপ চলতেই থাকে। ফলে একটা আমেরিকান প্রডাক্ট খোলাবাজারে বিক্রি করে যা লাভ হয়, কমিউনিস্ট দেশে কালোবাজারে বেচে তার চেয়ে বেশি লাভ করা যায়।
চীনের মতো কমিউনিস্ট দেশে যে বিরাট উৎপাদন আর রপ্তানি হয় সেগুলো আসলে সবই করে ক্যাপিটালিস্ট কোম্পানীরা। সেখানে ওরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় কারণ কমিউনিস্টরা সরকারে আছে। ফলে মজুরদের ধর্মঘট নেই, বেতন বাড়ানোর দাবী নেই, আরও অনেক কিছু খরচ বাড়ানোর ব্যাপার নেই।
কমিউনিজম যেহেতু প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করেনা, তাই কোনো দেশে কমিউনিজমের পালে দরকারমতো হাওয়া দিলে তাদেরকে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। আরো একটু বেশি হাওয়া দিতে পারলে সেসব দেশকে বাজার অথবা জোগানদারেও পরিণত করা সম্ভব। আর এরকম সুযোগ হাতে পেয়েও ক্যাপিটালিস্ট দেশগুলো ছেড়ে দেবে এটা অসম্ভব।
Leave a Reply