লিখেছেন : সুষুপ্ত পাঠক
শরিয়ত বয়াতী বাউল মানুষ, শিল্পী, গান লেখে আর গায়। গরীব ক্ষমতাহীন একজন বাউলকে গ্রেফতার না করে পারলে দেওয়াবাগী হুজুরকে গ্রেফতার করে দেখান! দেওয়ানবাগী হুজুর হযরত ফাতেমাকে বিয়ে করার দাবী করেছে সেই হিসেবে নবীকে সে তার রুহানী শশুর বলেছে। আল্লা তার দরবার শরীফে এসে মিছিল করে। কাঁচপুর ব্রিজের ধারে নর্দমায় নবীজিকে শুয়ে থাকতে দেখেছে। এরকম দাবী করার চেয়ে শরিয়ত বয়াতীর দাবীতে মুমিনের নুনুভূতি বেশি খাড়া হওয়ার কারণ কি? ধর্মানুভূতিতে আঘাত যদি এখানে সবার জন্য নিরপেক্ষ হয় তাহলে দেওয়ানবাগী হুজুরের হিন্দি চুল পুলিশ ছিঁড়ে দেখাক!
সবটাই ব্যবসা। দেওয়ানবাগী, চরমোনাই, আটরশী, মাইজভান্ডারী, খাজা বাবা… এদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ একে অপরে তুললেও গ্রেফতার হবে খালি শরিয়ত বয়াতীরা। নাস্তিকদের ধরে মেরে তারপর যে ভিন্ন মতালম্বী মুসলমানদের পালা আসবে এটা আগেই বলেছিলাম। শরিয়ত বয়াতী ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে এমন অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করার কথা পুলিশ জানিয়েছে। কি সেই ভুল ব্যাখ্যা? শরিয়ত বয়াতী বলেছেন, ইসলামে গান বাজনা হারাম এটা কেউ কুরআন থেকে দেখাতে পারবে না। পুলিশ যদি এই কথা বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করে থাকে তাহলে এই রাষ্ট্র স্বীকার করে নিলো গান বাজনা হারাম! বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে গান বাজনা কোন নিষিদ্ধ জিনিস নয়। কিন্তু ইসলামে গান জায়েজ বললে পুলিশ এসে ধরবে এটাকে বলে “ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি”! যদি শরিয়ত বয়াতীর কথা ইসলাম অবমাননা হয় তাহলে আগামীতে এই রাষ্ট্র একজন খ্রিস্টানকেও অভিনব পন্থায় ইসলাম অবমাননায় ফাঁসাবে। যখন কেউ বলবে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়েছে তখন ইসলাম অবমাননা হবে! এরপর ক্লাশের বিজ্ঞান শিক্ষককে আইসিটি আইনে ফাঁসাবে যখন তিনি মানুষের সৃষ্টি অন্য প্রাণীর বিবর্তনের ধারায় বলবেন তখন ইসলাম অবমাননা হবে! কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই দেশকে?
“আসল ইসলামের” কোন সুনির্দিষ্ট তরিকা কি এদেশের সংবিধান ঠিক করে দিয়েছে? অন্য ধর্মের মত ইসলামও একটা গোঁজামিলের ধর্ম। কুরআন পড়লে ৫ ওয়াক্ত নামাজের কোন হদিশ গাওয়া যাবে না। কুরআনের কোথাও এভাবে নামাজ পড়ার কথা নেই। সুফি ফকিররা এ কারণে নামাজ পড়ত না। কিন্তু হাদীসে গান হারাম। হাদিসে নামাজ ৫ ওয়াক্ত ফরজ। এই হাদিসও কয়েক রকমের। শিয়া হাদিসকে সুন্নীরা মানে না। সুন্নী হাদিসকে শিয়ারা মানে না। যেকারণে শিয়াদের ওয়াক্ত ভিন্ন। তাদের নামাজও ভিন্ন। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত আছে “জাল হাদীস”! আমাকে বুঝান মুসলমানরা এখনো জাল হাদীস রেখে দিয়েছে কেন? হযরত ওসমান যদি কুরআন সংকলনের সময় বহু আয়াত জাল ধরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে পারে তাহলে ১৪০০ বছর ধরে সহি হাদিসের সঙ্গে জাল হাদীস টিকে থাকল কেমন করে? জাল হাদীস নিয়ে আলেমদের মধ্যে এত মত বিরোধ কেন? একজন যেটাকে জাল বলছে অন্যজন তাকে সহি বলছে! আলেমদের কথা বাদ দেন, হাদিস যারা সংগ্রহ করেছেন তাদের বর্ণনা এসেছে একই হাদিসকে কয়েকজন সহি বলছে কয়েক জন জাল বলছে! এরকম বিভ্রান্তিকর সোর্সের কারণেই শরিয়ত বায়াতীর কাছে গান হালাল কিন্তু শফি মোল্লার কাছে গান হারাম!
আইসিটি আইন হচ্ছে ইসলামের পক্ষে ব্লাসফেমি বিশেষ। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অবদান। সরকার জনগণের সহি ইসলাম পাহারা দেয়ার দায়িত্ব নিজে যেচে কাঁধে নিয়েছে। এটা সরকারের দিকে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। পৃথিবীতে একশ রকমের ইসলামী মতবাদ আছে। সবটাই ইসলামের অংশ। সেই হিসেবে গান ইসলামে হারাম আবার হালাল। এই দুই গ্রুপ কাউকে যতক্ষণ ফোর্স না করছে ততক্ষণ সব ঠিক আছে। যখন একদল নিজেদের বিশ্বাসকে একমাত্র অথেনটিক বলে তেড়ে আসবে আর সরকার কোন একটা পক্ষকে সুরক্ষা দিতে আইসিটি আইন প্রয়োগ করবে তখনই সেটা ফ্যাসিবাদ। বাংলাদেশে এখন ধর্ম নিয়ে ফ্যাসিজম চলছে । তার আরো এক শিকার শরিয়ত বয়াতী।
Leave a Reply