লিখেছেন : মেহদি গালিব
সাতটি মহাদেশ… সাত মহাদেশের সাথে আরেকটি মহাদেশ আছে, অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশ। এটা পৃথিবীর বারো রাষ্ট্র মিলে লুকিয়ে রেখেছে। এটার সমস্ত ধনরত্ন ওরা লুট করবে এজন্য। অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশ দিয়ে আরো যে ছয়টি মহাদেশ পৃথিবীর নিচে আছে, সেখানে আকাশ আছে, সেখানে সূর্য আছে, সেখানে মানব জাতির মত আরেক মানব জাতি আছে, ইয়াজুজ-মা’আজুজ এটার ভেতর পালিয়ে আছে। অ্যান্টার-কুটিক দিয়ে ঢুকা যায়। এজন্য লুকিয়ে রেখেছে বারোটা রাষ্ট্র মিলে। হিটলার জানত যে অ্যান্টার-কটিকের ভেতর দিয়ে আরো যে ছয়টি পৃথিবী আছে। ওয়াল মিনাল আরদে মিসলা হুন্না… সাত আসমান যেমন একটার ওপর একটা; একটার ওপর একটা; একটার ওপর একটা, এমনি সাত জমিন একটার নিচে একটা একটার নিচে একটা আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। হিটলারের বার্লিনের জাদুঘরে ঐসব তথ্য রয়েছে। সে বলত যে সাম্বালা একটা মাটির নিচে আরেকটা পৃথিবী আছে। যার রাজধানীর নাম আগার্তা। কী সুন্দর তার বিল্ডিং! কী সুন্দর তার নদী-নালা, গাছগাছালি, পাখপাখালি… হিটলার জানত এইসব। হিটলারের ব্যপারে এজন্য সন্দেহ করা হয় ও এখানে পালিয়ে গেছে। এজন্য ধরতে পারে নাই। ওর আত্মহত্যার কাহিনী মিথ্যা। ওর ডিএনএ টেস্ট করে দেখা গেল হিটলারের কিছুই নাই ঐ লাশের মধ্যে। আসলে সে পালিয়েছে। দুই মিলিয়ন তার বাহিনী নিয়ে। বিজ্ঞানী, গুণী, তার সেনা-দক্ষ নিয়ে ওখানে চলে গেছে। যাহোক, এটা আমার ইউটিউব বক্তব্যর মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সহ এটা আছে…।
থামেন! থামেন! কথাগুলান আমার না। সে কে, এটা পরে জানাচ্ছি। প্রথমে, বক্তব্যটা বিশ্লেষণ করব।
তথ্যগুলো সবাই জানেন। একটু স্মরণ করাই। মহাদেশ মোট সাতটি- এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকা। অনেকেই বলবেন- জনাব জনৈক এন্টার্কটিকাকে অ্যান্টার-কুটিক বলেছে কি-না? না, সে ভুল উচ্চারণ করেনি। সজ্ঞানেই দাবী করেছে অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশের অস্তিত্ব। কারণ, তার বক্তব্য- সাত মহাদেশের সাথে আরেকটি মহাদেশ আছে, অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশ। মানে- মোট আটটি মহাদেশ। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে অষ্টম মহাদেশ তার আবিষ্কার।
যাহোক, অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশের ভেতর দিয়ে ছয়টা পৃথিবী। সাত আসমান-জমিন। ইয়াজুজ-মা’আজুজ আছে। হিটলার জানত এসব। এবং হিটলার সেখানে লুকিয়েছে। তাও বিশ লক্ষ জনবল নিয়ে। আমার প্রশ্ন, হিটলার যদি জানতই; তবে সেখানে ঢুকল কেন? ইয়াজুজ-মা’আজুজের খাবার হবার জন্য? বারোটি দেশ মিলে লুকিয়ে রেখেছে। তাহলে বারটি দেশ জানে অ্যান্টার-কটিকের কথা। এখন, এরা হিটলারকে ধরছে না কেন?
আবার, মহাকাশে অসংখ্য গ্রহ। একেক গ্রহের একেক নাম। যেমন- বুধগ্রহ, শুক্রগ্রহ। তেমনি একটি গ্রহের নাম পৃথিবী। এখন পৃথিবীর ভেতর ছয়টি পৃথিবী থাকে ক্যামনে? থাকলে ছয়টি গ্রহ থাকবে। ছয়টি সূর্যও আছে। সূর্য নাকি পৃথিবীর থেকে কয়েক লক্ষ গুণ বড়। মানে- আপনি হিমালয় পর্বতের নিচে দাঁড়ান। আপনার আর হিমালয়ের যে পার্থক্য, সূর্য আর পৃথিবীর অবস্থা তেমন। এত বিশাল, এতগুলা সূর্য পৃথিবীর পেটে ঢুকল ক্যামনে?
কী সুন্দর তার বিল্ডিং! কী সুন্দর তার নদী-নালা, গাছগাছালি, পাখপাখালি… আচ্ছা, এই বিল্ডিং বানালো কে? যতদূর জানি, ইয়াজুজ-ম’আজুজ বীভৎস প্রাণি বিশেষ। বীভৎস প্রাণি বিল্ডিং বানায় ক্যামনে? এদের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ধংসকরা। ইয়াজুজ-মা’আজুজ তো পিঁপড়া না যে সাম্রাজ্য বানাবে। হ্যাঁয়, তার দাবী মানব জাতির মত জাতিও আছে। তাহলে, ইয়ায়জুজ-মা’আজুজ তাদের খায়নি কেন? সে পৃথিবীতেও কী ফারাক্কার মৎ চুক্তি আছে? এটাও বলা আছে, ইয়াজুজ-মা’আজুজ বেরিয়ে পৃথিবীর সব পানি চুষে খাবে। আজন্ম পিপাসার্ত তারা। তাহলে সেই ছয় পৃথিবীর নদীনালা টিকল ক্যামনে? অতএব, জনৈক জনাব কী ইসলামের বিপক্ষে আঙুল তুলেনি?
এই জনৈক জনাবেরা সহিস হাদিস ছাড়া কিছু মানে না। জাতি জানতে চায়, ডিএনএ টেস্টের কথা কোন সহিস হাদিসে প্রমাণিত? প্রমাণিত না হলে তারা বেদাত মানে কেন? এবং এ অ্যান্টার –কুটিক মহাদেশ কোন সহিস হাদিসে প্রমাণিত?
এই মহা-অজ্ঞানী বাংলাদেশে ওহাবিতন্ত্রের আহলে-হাদিস, সালাফিবাদের মুখপাত্র। এদের একত্রে লা-মাযহাবি বলতে পারেন।
মাননীয় জনগণ, চলুন খুব দ্রুতই একে জাদুঘরে প্রতিস্থাপন করি। উইথ সুপার হাই সিকিউরিটি। এমন মহান সম্পদ বাঙালী আর কখনোই পাবে না। না হলে চিড়িয়াখানার অনেক খাঁচা তো প্রায় ফাঁকা। সেটা বিকল্প হিসেবে ভাব যেতেই পারে। মেধা ও সম্পদের মূল্যায়ন কী আমরা কখনোই করব না! শেষতক, পাবনা পাগলাগারদ তো আছেই। তাও না হলে, চলুন চাঁদা তুলি। এরপর একে অ্যান্টার-কুটিক মহাদেশে পাঠিয়ে দেই। এই দেশ এমন মেধার যোগ্য নয় (আবেদনগুলো আমার না, ফেবুতে অনেকেই করেছেন)।
এই হচ্ছে লা-মাযহাবিদের অবস্থা। এরা শিরিক শিরিক চেঁচিয়ে গলা ফাটায়। মুসলিমদের অন্ধ অনুসারী বলে। অথচ এরাই কতটা কুসংস্কারচ্ছন্ন। কতটা উদ্ভট অশিক্ষিত। আবার এদেরকেই অনেকে অন্ধ অনুসরণ করে। যেমন, এদের ভক্তরা উত্তর দেয়-
ভাই, তিনি একজন হাফেজে হাদিস (আগে একশটা হাদিস মুখস্ত কইবার কন)/তাকে নিয়ে কিছু বলার আগে দুইবার ভাবার উচিৎ (আমি একবারও ভাবিনি)/খুতবাতে কেউ মিথ্যে বলে না (জি, আপনার সত্য যে কোনটা, কে জানে!)/তার কথার পিছনে অবশ্যই তথ্য প্রমাণ আছে তার কাছে (জি, পাগলের সুখ মনে মনে)।
আসলে, সালাফিদের অবস্থা মেরিল আর হোন্ডার মত। মেরিল একটা পেট্রলিয়াম জেলির ব্র্যান্ড। তক্ব শুকালে, ফাটলে যেটা লাগায় লোকে। কিন্তু গ্রামগঞ্জে মানুষ সব পেট্রলিয়াম জেলিকেই মেরিল বলবে। সেটা ভ্যাসলিন হোক, তিব্বত হোক। আবার হোন্ডা কোম্পানি মোটরসাইকেল বানায়। অন্য কোম্পানিরও মোটরসাইলেক আছে। কিন্তু পাবলিকে সবগুলাকেই হোন্ডা ডাকবে।
এই যে সব কিছুকে এক ভাবা, এটা একটা কুসংস্কার, অজ্ঞতা, মূর্খতা। আর আমাদের এদেশের মানুষ খুব বেশি করে এটি। তাদের মগজে একটা বিষয় ঢুকলেই হয়েছে। এরপর নো নড়চড়। ভ্যাসলিনও হয় মেরিল। সুজুকিও হয় হোন্ডা।
সালাফিরা এ কাজটি ভালো মত করতে পেরেছে। অশিক্ষার বেসাতী ছড়িয়েছে ভালো মতই। সহিহ সহিহ একটা ব্র্যান্ড বানিয়েছে। যে ব্র্যান্ড ছাড়া পাবলিকে কিছু বুঝে না। ফলে এমন তারছেঁড়া বক্তব্যের পরেও পাবলিকে কবে- হ’ ভাই হুজুরে ঠিক! আপনি মুশরিক! অনেকটা ভেড়ার মত। সামনেরটা যাই করবে, শেষেরটাও তাই করবে। এখন বলুন অন্ধ অনুকরণ করেন।
কিছু বলার নেই। শুনেছিলাম শেষ যুগে মূর্খেরা মহাপণ্ডিত উপাধি পাবে। জ্ঞানীরা লজ্জায় লুকাবে। নামবে অজ্ঞতার অন্ধকার। ইমাম আলা হযরতও বলেছিলেন না-
সুনা জাঙ্গাল রাত আন্ধেরি ছায়ি বাদলি কালি হ্যাঁয়
আখোঁ কে কাজল সাফ চুরালে চোর অ্যায়সে বালাকি হ্যাঁয়
/
জনশূন্য জঙ্গল রাত অন্ধকার কালো মেঘে আকাশ ভরা
চুরি করে চোখেরও কাজল, চোর এমন হতচ্ছাড়া!
হে বাংলাদেশ সাবধান হও। তোমার প্রিয় শায়েখের পূজা করতে গিয়ে- পুরো ইসলামকে লজ্জিত করছ কি-না, ভেবে দেখ।
Leave a Reply