“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”
যারা পড়ালেখার লাইনে আছেন তাদের মধ্যে কামিনী রায়ের এই লাইনগুলো পড়েন নাই বা জানেন না বা শুনেন নাই–এমন বাঙালি খুব কম পাওয়া যাবে। স্কুলে এই লাইনগুলোর ‘ভাবসম্প্রসারণ’ও করতে হয়েছে অনেকরে। নোট মুখস্ত করে পরীক্ষার সময় হয়তো এরকম কিছু লিখে দিয়ে আসছেন–
পৃথিবীতে কোনো মানুষই চিরস্থায়ী নয়। মানুষ কেবল চিরস্থায়ী থাকতে পারে তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে। কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে দীর্ঘ সময়। মানুষের যথার্থ পরিচয় নিহিত কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার মাধ্যমে। যারা শুধু নিজের সুখ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় না। জীবনে কেউ যদি ভালো কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন। মানবজীবন শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, সবার সুখ তার মধ্যে জড়িয়ে থাকে। কারণ ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষুদ্র পরিসরে মানবস্বার্থের চিন্তার অবকাশ থাকে না। অন্যের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে কাজ করার মধ্যেই আত্মা প্রকৃত অর্থে সুখী হয়। মানুষ সুখের জন্য দিশেহারা, তারা কাজের মধ্যে সুখ খুঁজে পেতে চায়। তাই মানুষের প্রতি স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে পৃথিবীতে কম সংখ্যক মানুষ আছে যারা নিজের কথা চিন্তা না করে, অন্যের সুখ-শান্তি তথা কল্যাণের কথা চিন্তা করে। অপরের সুখ-শান্তির মাঝে নিজের পরম সুখের ঠিকানা খুঁজে পায়। যেমন- মাদার তেরেসা মেসোডেনিয়া ছেড়ে কলকাতায় এসে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জেলে কাটিয়েছেন জীবনের ২৭টি বছর, তাছাড়া মার্টিন লুথার কিং, মহাত্মাগান্ধী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। বিশ্বের যা কিছু মহান, মহৎ কর্ম, যা মানব সভ্যতাকে স্বর্ণ শিখরে নিয়ে গেছে তার মূলে রয়েছে মহৎ মানুষের ভূমিকা। অপরের কল্যাণ সাধনের জন্য তারা তাদের নিজেদের সুখ শান্তি, আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস সবকিছু বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।
শিক্ষা: সংকীর্ণ স্বার্থপরতায় বিভোর মানুষ কোনো দিন সুখ নামক বস্তুটির দেখা পায় না। তাই মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই প্রকৃত মানুষের কাজ।
(ইন্টারনেট থেকে)
যারা মুখস্তর পাশাপাশি আত্মস্থ করতে পারছেন বা সত্যিকার অর্থে শিক্ষা লাভ করতে পারছেন, তারা বুঝবেন–এখানে ‘ব্যক্তি’ বা ‘ব্যক্তিগত’ ব্যাপারগুলো একেবারেই নাই। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপার নাই, সম্পত্তি বানিয়ে বংশধরদের জন্য রেখে যাওয়া নাই, সেই হিসাবে এখানে বিয়ে জিনিসটাও নাই, বিয়ে করে নারীদেরকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে রাখার ব্যাপারও নাই।…প্রথাগত ধর্ম নাই, ধর্মীয় ভেদাভেদ নাই, ধর্মীয় বিধিবিধানও নাই…
এরকম শিক্ষালাভ করেও কয়জনে সত্যিকার অর্থে ‘শিক্ষিত’ হতে পারছেন? বিয়ে সংসার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হাউকাউ করা অনেকের মুখেও প্রায় শোনা যায়–আস্তিক-নাস্তিক বড় ব্যাপার না, মানুষ হওয়াটাই আসল ব্যাপার–তো কয়জনে ‘প্রকৃত মানুষ’ হতে পারছেন?
———————
মন্তব্য : হ, পাস কইরা চাকরি পাইছি, চাকরি পাইয়া বিয়া করছি, বিয়া কইরা বাচ্চা বিয়াইছি, বউ এখন একান্তই নিজের সম্পত্তি–ঢাইকা ঢুইকা রাখি যাতে অন্যরা কেউ নজর দিতে না পারে, চোখে চোখে রাখি যাতে অন্যদের কাছে যাইতে না পারে, বাচ্চার ভবিষ্যতের জন্যে সম্পত্তি বাড়াইতেছি… তারপর ফেসবুকে আইসা গিয়ান *দাইতেছি–আস্তিক-নাস্তিক বড় ব্যাপার না, মানুষ হওয়াটাই আসল ব্যাপার… মানুষ হও… মানুষ হও… প্রকৃত মানুষ হও…
Leave a Reply