লিখেছেন : মনির হোসাইন
বাউল শরিয়ত সরকারের প্রায় এক ঘন্টার ভিডিও রেকর্ড শুনলাম। যদিও প্রথম দিকে দোনোমোনো করে এড়িয়ে গিয়েছি। লম্বা ভিডিও রেকর্ড দেখার জন্য ধৈর্য ও সময় দুইই লাগে। আর মনোযোগ ছাড়া দেখা না দেখা প্রায় সমান। অবশেষে পুরো রেকর্ডটাই দেখতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এক বাক্যেই বলি, বাউল শরিয়ত সরকার এই ভিডিওতে ইসলাম ধর্ম নিয়ে বা ধর্মের মোল্লাসাপেদের নিয়ে এমন গুরুতর কিছুই তিনি বলেননি, যার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাতে হবে। ভিডিও যারা দেখেনি তারা চাইলে আবার, বারবার এই ভিডিও দেখতে পারে। এটা তো রেকর্ড করাই আছে। কেউ চাইলেই তো আর হেরফের হবেনা।
তবে, হ্যাঁ, যদি, কিংবা, ইয়ে, না, মানে… এই ভিডিওতে বাউল শরিয়ত সরকারের পড়াশোনার ছাপ আছে। ইসলাম কেন্দ্রিক কুরান-হাদিস, ইজমা-কিয়াস থেকে শরিয়ত-মারেফত থেকে এই উপমহাদেশের ইসলাম চর্চার যে দলিল তা আমাদের এই বাউল শরিয়ত সরকারের খুব নখদর্পনে। তিনি আদ্যপান্ত ভালোই জানেন এই ভূ-ভারতে ইসলাম প্রচারের পুরো ইতিবৃত্তটি। কঠোর রাজনৈতিক ইসলাম আর অন্ত্যজ শ্রেণির মধ্যে সমন্বয়বাদী ইসলামের মিশেলে যে ধারা এই ভারতে, এই বাংলায় গড় শ্রেণির মধ্যে এক ধরণের সহজিয়া চিন্তার ইসলাম এক সময় বেড়ে উঠেছিল, সেই বঙ্গীয় সুফিবাদি ইসলামকে বোধকরি অন্তরে লালন করে থাকবেন এই অন্ত্যজ বাউল শরিয়ত সরকার।
তাঁর গানে পুরো কথার মধ্যে কোনো ভেক নেই। নেই কোনও পাণ্ডিত্যের গালগপ্পো। যা আছে তা প্রচণ্ড এক যুক্তিবাদি মন। সদাগতিশীল মনোজগতে তাঁর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, ধর্মীয় কেতাব, ইজমা-কিয়াস, ইনসানিয়াত ইনসাফের যে মনস্তাত্ত্বিক মানবিক দিক সেই আলোকেই তাঁর মতামত অত্যন্ত স্পষ্ট ও শক্তিশালী। যা সঙ্গত কারণেই অন্য অনেকের থেকে বাউল শরিয়ত সরকারকে আলাদা করেছে। আর এজন্যই জনসাধারণের কাছেও তিনি সম্ভবত ওইরকমই বিশিষ্ট কেউ বলেই গণ্য হতেন। এটা খুব পরিষ্কার যে তাঁর ক্ষুরধার শক্তিশালী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন দেখে ধর্মীয় মোল্লাসাপেরা ক্ষ্যাপে গিয়েছে। যা কালের ধারায় নিতাই থেকে লালন, হাছন থেকে আব্দুল করিম, মাতাল রাজ্জাক থেকে আজকের বাউল শরিয়ত সরকারের এই যে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে সব মানুষকে এক কাতারের মানুষ হওয়ার এক অসম যুদ্ধ জারি রাখার লড়াই তাতে বাউল শরিয়ত সরকার এখন এই পরিবর্তিত প্রচ্ছায়ায় সম্ভবত ঘোষিত একা, নির্বান্ধব এক বিদ্রোহী যোদ্ধা! শরিয়তের আশেপাশে হয়তো অনেকেই আছেন কিন্তু তা অনেকটা আজ না থাকার মতোই। সেই না থাকার থেকেও ভয়ংকর হলো বাউল শরিয়ত জেল থেকে মুক্তি পেলেও এরা/আমরা তাঁকে কতোটুকু ভালোভাবে বেঁচেবর্তে থাকার সুযোগ দেবো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না…! কার্যত বাউল শরিয়ত সরকার এখন কথিত ইশ্বরের মতোই আজ অত্যন্ত একা। এবং বিশালদেহী এই ধর্মীয় বিকট রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত অসহায়ও…!
‘বাউল বাউল করো তোমরা
বাউল কি আর আছে?
বড় দুঃখে বাংলার বাউল মইরাছে…’
—বিজয় সরকার
Leave a Reply