হিল্লোল দত্ত স্যারের ডিসেম্বরের ১০ তারিখের একটা স্ট্যাটাসের অংশ বিশেষ–//রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে আর সংবিধানের মাথায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বসিয়ে মোদির ভারতের সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক আইনের ও ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রবল প্রতিবাদ ছুঁড়ে-দেওয়া আমাদের পক্ষেই সম্ভব।//
হাসান মোরশেদ স্যার উক্ত পোস্টে কিছু প্রতিবাদ-কমেন্ট করেছেন। //এই দেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে সাম্প্রদায়িকতা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখনো কিছু মানুষ প্রতিবাদ করেছেন, কিছু প্রতিবাদের ভাষা ঝরে গেছে, কিছু মানুষ এখনো প্রতিবাদ করছেন। এমন নয় যে এই দেশের ১০০% ভাগ মানুষ সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ মেনে নিয়েছে।//
উনার আরো কিছু মন্তব্যে //জাজমেন্টাল// কথাটা আসছে। সবশেষে মনে হয় তিনি //সরলীকরণ// বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
তারপর উনার বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে উনার আইডিতে গিয়ে একই ভাবে সুষুপ্ত পাঠক স্যারের ডিসেম্বরের ১২ তারিখের একটা পোস্টের স্নাপশট দিয়ে কিছু প্রতিবাদ-মন্তব্য করতে দেখলাম। [পোস্টটির লিঙ্ক পাচ্ছি না, তাই সেই স্নাপশটটাই এখানে যুক্ত করে দিলাম।]
সুষুপ্ত পাঠক স্যারের পোস্টের জবাবে হাসান মুর্শেদ স্যারের কিছু উল্লেখযোগ্য কথা–
//২৫ মার্চে রাতে পুরান ঢাকার হিন্দু বসতি যেমন আক্রান্ত হয়েছে তেমনি আক্রান্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ইপিআর হেডকোয়ার্টার, এরা হিন্দু ছিলো? যেমন জগন্নাথ হল আক্রান্ত হয়েছে তেমনি এসএম হল ও ইকবাল হল- এরা হিন্দু ছিলো?
হ্যাঁ, মুসলমানরা কম শরনার্থী হয়েছে হিন্দুদের তুলনায়। দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধটা করলো কে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে। মুক্তিবাহিনী যখন ভেতরে ঢুকেছে এদের গাইড, আশ্রয় কে দিয়েছে? বেশীর ভাগ হিন্দুরা তো তখন শরনার্থী শিবিরে। ২০ হাজার পুলিশ, ইপিআর, আর্মি যারা যুদ্ধ করলো তাদের প্রায় শতভাগ মুসলমান- ১ লক্ষ গেরিলা যোদ্ধার বেশীর ভাগ মুসলমান। দেশের ভেতর ৩/৪ কোটি মানুষকে উদ্বাস্ত হয়েছে, এরা কারা?
যেমন হিন্দু গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে তেমনি অনেক গ্রাম আমি দেখাতে পারবো যেখানে শতভাগ মুসলমান আক্রান্ত হয়েছে, একজন ও হিন্দু না। কতোজন ধর্ষিতা মুসলমান নারীর নাম জানতে চান, বলবেন। //
আজ একটি খবরে দেখলাম–//ধর্মকে মিশিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে এলে তাদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেছেন, এই ধর্মের দোহাই দিয়েই একাত্তরে তার বাবার মতো লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল।//
এ প্রসঙ্গ ডা. নুজহাত চৌধুরী স্যার আরো একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন–//আমার বাবা কি মুসলমান ছিলেন না?//
এরকম আরো অনেক মন্তব্য অনেকের থাকতে পারে বা আছে। এই বিষয়ে আমার একটাই বক্তব্য–পাকিস্তানীরা ১৯৭১-এ যখন বাঙালি নিধন শুরু করেছিল, তখন হিন্দুদের পাশাপাশি তারা যে মুসলমানদেরকে হত্যা-ধর্ষণ করেছিল, সেই মুসলমানদেরকে তারা আদৌ ‘মুসলমান’ মনে করত না–‘আধা-হিন্দু’ মনে করেই ওসব করেছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশি মুসলমানদেরকে পাকিস্তানিরা সত্যিকারের মুসলমান মনে করে কি না, আমার জানা নেই। তবে সৌদিরা যে মনে করে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত। তারা এখনো আমাদেরকে ‘ফকির-মিসকিন’ বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। এ প্রসঙ্গে আরো একটি তথ্য মনে করা যেতে পারে–কয়েক বছর আগে সৌদিসহ আরো কয়েকটি দেশ যে সিরিয়ান শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে চায় নাই, তার পেছনেও ওরকম একটা কারণ ছিল–তারা সিরিয়ানদেরকে ‘সত্যিকারের মুসলমান’ মনে করে না।
Leave a Reply