লিখেছেন : আবু জাহেদ
অনেকেই বলেন এমনকি আমিও বলি, সব ধর্মই মূলত একই – মুদ্রার এপিট ওপিট এবং এদের সাথে পার্থক্য উনিশ বিশের।
কিন্তু সত্যিই কি তাই?
ইসলাম ধর্মের সাথে অন্য ধর্মগুলোর পার্থক্য উনিশ বিশের বলে কিন্তু মনে হয় না।
যেমন একটা উদাহরণ দিই,
বড়দিন উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিস গতকাল বলেছিলেন – ‘ঈশ্বর প্রত্যেককেই
ভালোবাসেন। এমনকী আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তিটিও তার ভালোবাসা
বঞ্চিত হন না।
উনি আরো বলেছিলেন, ‘আমরা প্রায়ই ভাবি ভালো কাজ করলে ঈশ্বর আমাদের ভালো করবেন, আর খারাপ করলে তিনি আমাদেরকে সাজা দেবেন।
কিন্তু ঈশ্বর আসলে এমন নন।
তিনি সবাইকে ভালোবাসেন, যে ভালো কাজ করে তাকে, আর যে খারাপ কাজ করে তাকেও ভালোবাসেন।’
দেখুন এটা আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝি যে, এই সমস্ত কথাগুলোও মূলত মধ্যযুগের
প্রতিহিংসাপরায়ণ ঈশ্বরকে বর্তমান মানুষের আধুনিক মননশীল বোধের সাথে খাপ
খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করা।
কিন্তু সে যাই হোক আর যে কারণেই হোক,
কথাগুলো শুনতে কিন্তু ভালো লাগে, এর মধ্যে থাকা সবার জন্য মঙ্গল কামনা এবং
ভালোবাসা ও মিলনের সুর, হৃদয়ে আলোড়ন তোলে।
এমন ধরনের কথা হিন্দুরা বৌদ্ধরাও বলেন, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক মঙ্গল লাভ করুক বলে তারা প্রার্থনা করেন।
সব ধর্মের মানুষ মানবজাতির সার্বিক মঙ্গল কামনা করতে পারলেও, একজন মুসলমান কি সেটা পারেন?
কিন্তু এবার আমাকে বলুন, এই যে ওয়াজের মৌসুম চলছে, সারা বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ হাক্কানি আলেম সমাজ, এরা প্রতিদিন ইসলামী সেমিনার করছেন — কোথাও কখনো কোন মুসলমান ধর্মীয় নেতাকে এ কথা কি আপনি বলতে শুনেছেন যে, পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক, কিংবা আল্লা আসলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষকেই ভালোবাসেন?
মুসলমানরা একথা বলতেই জানে না, চিন্তা করতেও পারে না, বড়জোর এরা মুসলিম উম্মাহর সুখ সমৃদ্ধি জন্য মোনাজাত করে, আর এই ধর্মের সর্বোচ্চ ভ্রাতৃত্ববোধের প্রকাশ হচ্ছে মুসলমান ভাই ভাই- এই তত্ত্ব।
একজন হিন্দুর হিন্দু হয়েই সারা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গল কামনা করতে কোথাও বাধা নেই, এ বাধা খ্রিস্টানের নেই বৌদ্ধের ও নেই।
কিন্তু এ বাঁধা মুসলমানের আছে, তারা সারা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গল কামনা করতে পর্যন্ত এখনো শিখিনি।
বলতে পারেন এগুলো আসলে লোক দেখানো এবং এই সমস্ত কথা আসলে কথার কথা ছাড়া বেশি কিছু নয়।
হতে পারে, কিন্তু এই লোক দেখানো কথার কথাটুকু বলতেও মনুষ্যত্বের যে স্তর
অতিক্রম করতে হয়, মুসলিম ধর্মীয় নেতারা সেই স্তরটি পর্যন্ত অতিক্রম করতে
পারিনি।
কিন্তু এর নিহিতার্থ আসলে গভীর, আপনি দেখতে পাবেন
শ্রীলংকায় মুসলমানদের সাথে বৌদ্ধদের সংঘাত, মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদীদের সাথে
মুসলমানদের সংঘাত, ইউরোপে খ্রিষ্টানদের সাথে, ভারতে হিন্দুদের সাথে,
মিয়ানমারে আবারও সেই বুদ্ধিস্টদের সাথে কিংবা চায়নাতে ও তাই।
সব
জায়গায় মুসলমানদের সাথে অন্য আর সকল ধর্মালম্বীদের সংঘাত। কিন্তু কোথাও
কোন জায়গায় বর্তমান পৃথিবীতে হিন্দু খ্রিস্টান ইহুদী বুদ্ধিস্ট দের সাথে
সংঘাত নেই।
সবাই যেভাবেই হোক মিলেমিশে একসাথে সহবস্থান বজায় রেখে চলছে, মুসলিম ব্যতীত।
এর কারণ হলো মূলত পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ তার উৎপত্তির সময়কালীন অবস্থার মধ্যে বর্তমান সময়ে আর নেই। আমরা বলতে পারি অমুক ধর্মে অমুক অমুক সব জঘন্য ধরনের নিয়ম-কানুন ছিল, আমরা বিধবা বিবাহের কথা বলতে পারি, সতীদাহ প্রথার কথা বলতে পারি, খ্রিস্টান পাদ্রীদের অনাচারে শত বৎসরের অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপের কথাও বলতে পারি, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো সব অতীত। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মই যুগের সাথে তাল রেখে পরিবর্তন হয়েছে কিংবা এখনো হচ্ছে ক্রমাগত, এখানেও শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম ব্যতীত।
সাড়ে চৌদ্দশ বছর
আগেকার এক বর্বর অচলায়তন’ ব্যবস্থার কোনো রকম কোনো কিছু পরিবর্তন
পরিমার্জন হতে না দিয়ে, মুসলমানরা দিব্য চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে। এরা
ভাবছে এটা পরিবর্তনের ও দরকার নেই!
অথচ চোখ খুললেই এরা দেখতে পেত যে, সমস্ত পৃথিবী থেকে তারা মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
এমন সব জঘন্য অমানবিক প্রথাকে ধর্ম বলে এরা ধারণ করে বসে আছে, যা কোনো সভ্য সমাজে আলোচনা করতে পর্যন্ত লজ্জা হওয়ার কথা।
পৃথিবীর কোন ধর্মে স্বধর্ম ত্যাগ করলে রাষ্ট্র কর্তৃক তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে? কোথায় আছে ব্লাসফেমি আইন?
নারীকে শস্যখেত হিসেবে মনে করে পুরুষকে যেমন খুশি চাষ করার অধিকার, এবং
নারীকে সামাজিক পারিবারিক রাজনৈতিক জীবনে পুরোপুরি বন্দী করে রাখা, পুরুষের
একসাথে চার বিবাহ করার অধিকার, হিল্লা বিয়ে, গৃহকর্মীর সাথে জোরপূর্বক
যৌনতা করার অধিকার।
সবথেকে বড় কথা পৃথিবীর আর অন্য সব ধর্মালম্বী মানুষদের বেধর্মী এবং শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদেরকে পরাজিত করার বাসনা।
বর্তমান সময়ে এসেও সেই সাড়ে চোদ্দশ বছর আগেকার আরবের এক বর্বর কাবিল সমাজে ফিরে যাওয়ার এক অর্বাচীন প্রচেষ্টা!
Leave a Reply