লিখেছেন ধর্মের কল বাতাসে নড়ে
ধর্ম মানে ধারণ করা। যা ধারণ করে মানুষ বেচে থাকে, তা-ই ধর্ম । এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা মনে হয় নেই যে, বাচাঁর জন্য ধর্ম অবশ্যই প্রয়োজন। আমি মনে করি, বাচাঁর জন্য ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষকে একটু শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বাস করার সুবিধা দেবার জন্য, ক্ষেত্রসাপেক্ষে বাধ্য করার জন্য ধর্মের ব্যবহার। এটা শুধুমাত্রই একটি মানসিক ব্যাপার। এই অত্যন্ত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে ঝগড়া মারামারি থেকে যুদ্ধ পর্যন্ত হয় বা হয়েছে। তো শান্তির জন্য যে ধর্ম, তা যদি অশান্তি ডেকে আনে, তো সেই ধর্মের তো দরকার দেখি না।
ধর্মের আবার কত ভাগ। ঈশ্বর বা আল্লাহ যাই বলেন না কেন, একটা দিক থেকে আমার ভালই লাগে তাঁদের। তাঁরা এতই বড় যে, তাঁদেরকে একটি ধর্ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এক হিন্দু ধর্মের যতগুলো ভাগ বিদ্যমান, সারা পৃথিবীতে ততগুলো ধর্ম আছে কি না, আমার সন্দেহ। তেনারা আবার নিজেদের মধে যারপরনাই সংঘর্ষে লিপ্ত। এ বলে, আমার ঠাকুর বড়, তো ও বলে, তার ঠাকুর বড়। আরে বাবা, এক ধর্ম নিয়ে এত বড়-ছোট ভাগাভাগি করে লাভটা কী হচ্ছে? হিন্দুধর্মে অনেক ভাগ। শুধু অনেকগুলি মন্দির তারা বানায়নি। এক এক মন্দিরে এক এক ঠাকুরের পুজা হয়। কেউ লোকনাথ, কেউ রামকৃষ্ণ, কেউ কালী, কেউ কৃষ্ণ, কেউ আবার মঠ আখড়া খুলে বসে আছে। এদের দলের সাথে অন্য দলের সদ্ভাব নেই বলে আমি দেখেছি এবং প্রমাণও পেয়েছি। আমার প্রশ্ন হল, একই হিন্দু ধর্ম এত ভাগে-ভাগে পালন করে নিজেদের মধ্যে কোন্দল করে কি কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়? যদি না যায়, তো এই ধর্ম পালনে আমি কোন সার্থকতা দেখি না।
এত গুলো ভাগের মধ্যে কিছু ভাগ সম্পর্কে আমি অবহিত। রামকৃষ্ণ মিশন তার মধ্যে একটি। জানা মতে, রামকৃষ্ণ কালীর একজন সাধক ছিলেন। ভারতের কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে রাণী রাসমনির মন্দিরে তিনি পূজারী ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ নামে তার এক শিষ্য সারা বিশ্বে তার নাম প্রচার করে তাকে অবতার বলে পরিচিত করান। তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই মিশন রামকৃষ্ণ পূজা শুরু হয়। উল্লেখ্য, এই রামকৃষ্ণই কিন্তু একসময় কালীর পূজা করতেন। তখন হিন্দুরা তার সাথে একত্রে কালীর পূজা করত। (কালী পূজা এখনো হয়)। যার সাথে একত্রে একই দেবীর পূজা তারা করত, সেই তারাই কীভাবে এখন রামকৃষ্ণর পূজা করে, আমি বুঝি না।
যাক, রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা হল। এই মিশন প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিবেকানন্দ সারা বিশ্বে বক্তৃতা করে টাকা কামিয়েছেন। তিনি ইউরোপে টাকার বিনিময়ে বক্তৃতা করেছেন। এর জন্য তার একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি ছিল। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চুক্তি অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানটি টাকা রেখে দেয়। (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
এখন প্রশ্ন হল রামকৃষ্ণকে নিয়ে। একজন কালীর সাধক কী করে অবতার হন, তা আমার বোধগম্য নয়। হিন্দুধর্মে অবতার মানে ঈশ্বরের অংশ, যিনি পৃথিবীতে মানুষরূপে জন্মগ্রহন করেন। (গীতা: ৪র্থ অধ্যায়, ৭মও ৮ম শ্লোক)। স্বর্গে বিদ্যমান কাল্পনিক অনেক দেব-দেবীর মধ্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব উচু স্তরের দেবতা। অন্যান্যরা তাদের পরের কাতারে আসীন। কালীও পরের কাতারের দেবতা (জানা মতে)। অবতার বলে যারা পরিচিতি পেয়েছেন তারা, যতদুর জানি, বিষ্ণুর অবতার। তাহলে রামকৃষ্ণ ও বিষ্ণুর অবতারই হবেন। বিষ্ণুর অবতার হয়ে তিনি কেন কালীর সাধনা করবেন, তা বিবেকানন্দ ও তার ভাই-বেরাদাররা জানেন। তবে বিবেকানন্দ একটা ভাল কাজ অন্তত করেছেন। জীবনযুদ্ধে ব্যর্থ, পরাজিত কিছু লোককে তিনি অন্নসংস্থান দিয়ে গেছেন। তারা রামকৃষ্ণের শিষ্য হয়ে বিনা কষ্টে শুয়ে বসে মহারাজের (আক্ষরিক) মত জীবন যাপন করছে (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “অর্ধেক জীবন”-এ লিখেছেন, তাঁর কাকামশাই ধর্মমুখী না হয়েও রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিয়েছিলেন স্রেফ অন্ন ও নিদ্রার সংস্থান করতে)। কোটি কোটি টাকা ডোনেশন নিয়ে উদরপূর্তি করছে।
এবার আসি অন্য একটি প্রতিষ্ঠান “ইসকন” নিয়ে। এরা কৃষ্ণের উপাসক। ভাল কথা, করুক উপাসনা। প্রশ্ন হলো, ধর্ম পালনের জন্য আমেরিকার টাকা কেন নিতে হবে, তা বোধগম্য নয়। এখানে উল্লেখ্য, টাকা দেয়ার পিছনে আমেরিকার একটি স্বার্থ আছে বলেই মনে হয়। সারাদিন একটি মালা হাতের মধ্যে নিয়ে জপতে থাকলে আর কিছু হোক না হোক একটা লোকের তো উৎপাদন বা কর্মক্ষমতা নষ্ট করা গেলো। চিন্তা করে দেখুন তো, ইসকনের কতজন সাধু কোনো কাজ না করে সারাদিন মালা জপে?
গত কদিন আগে ধর্মকারীতেই একটা ভিডিও দেখলাম, “রেখেছো হিন্দু করে, মানুষ করোনি” ……. এক মহিলা নিম্নবর্ণের জাতিকা। স্কুল শিক্ষিকা। ৫ বছর যাবৎ ক্লাস নিচ্ছেন কোনো চেয়ার ছাড়া। সে নিম্নবর্ণের, তাই উচ্চবর্ণের লোকজন তাকে চেয়ার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই যদি হয় ধর্মের অবদান, তো সেই ধর্ম না পালন করাই কি ভাল নয়?
Leave a Reply