বর্তমানে মুসলমানরা ইসলামের বিতর্কিত অনেক কিছুই এড়িয়ে যায়। একটা উদাহরণ–একসাথে চারবিয়ে। ইসলামের চারবিয়ের প্রসঙ্গে আলোচনার মুসলমানরা এই বলে এড়িয়ে যান–//বাদ দেন, এখন তো কেউ আর চারটে করে বিয়ে করে না, শুধু শুধু এটা নিয়ে এত হাউকাউ করছেন কেন?//
অথচ তারা কেউ স্বীকার করল না যে, এই একসাথে চারটে বউ রাখার বিষয়টা ঠিক নয়, বা বর্তমান যুগে এগুলো চলবে না। এটা স্বীকার করলে ইসলামকে ছোট করা হয়, তাই তারা বিষয়টা নিয়ে বুঝেও না বোঝার ভান করে এড়িয়ে যাওয়ার পিছলামিটাই করছিলেন।
আজকাল অনেকেই ইসলামের অনেক কিছু পালন করেন না, আবার করেনও। যেমন?
যেমন পোস্টের খবরটার দিকে নজর দেন–
আফগানিস্তানে এক নারীর শিরোচ্ছেদ করা হয়েছে কারণ তিনি স্বামীকে সঙ্গে না নিয়ে একা একা শহরে আসছিলেন, অর্থাৎ ঘরের বাইরে আসছিলেন। এগুলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, একটু একটু করে ঘটা ঘটনা। ইসলামে সেরকমই ইঙ্গিত আছে।
আজ আপনার মা-বোন একা একা বাইরে বের হচ্ছে। কাল আপনারই কোনো বন্ধু আপনার মা-বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলবে, আর দোষ দেবে তারা বোরখা-হিজাব ছাড়া বের হয়েছে, আর আপনি আপনার বন্ধুর দোষটা এড়িয়ে যাবেন। ধর্মে আছে তাই কাল হয়তো আপনিই আবার আপনার বন্ধুর মা-বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন কারণ বোরখা-হিজাব পরলেও তাদের হাত দেখা গেছে–এই অজুহাতে।
আজ আপনার বোনেরা বোরখা-হিজাব পরে স্কুল কলেজে যাচ্ছে, কিন্তু কাল কেউ এসে তাদেরকে রেপ করে দিতে পারে, কারণ তাদের বোরখা-হিজাব পরার স্টাইল তার পছন্দ হয় নাই, বা এই আফগান নারীর মত খুন করে ফেলতে পারে, কারণ তারা একা একা বাইরে বের হয়েছিল।
আপনি ভাবছেন–ইসলামে তো এরকম কিছু বলা নাই! বা, আফগান নারীরা যেখানে ফুটবল পর্যন্ত খেলে, সেখানে এরকম কিছু হতে পারে না।
কিন্তু আপনি ইসলামের কতটুকু জানেন? কোরান-হাদিস কতটুকু পড়েছেন? তারপরেও ইসলাম কিন্তু আলটিমেটলি কোরান-হাদিস দিয়ে চলে না, চলে শরিয়া আইন দিয়ে, যাকে বলে আল্যার আইন। মুসলমানরা চায় তাদের দেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে এই আল্যার আইন অর্থাৎ শরিয়া আইন কায়েম করতে।
এই বিষয়ে শরিয়া আইন কী বলে–
শারিয়া আইন এম ১০.৩-এর মতে মেয়েরা “কোন ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, ছেলে…ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না।” অর্থাৎ ঘরের বাইরে বের হলে পিতা, ভাই, ছেলে, স্বামী–এদের সাথে বের হতে হবে।
এই আইনের ধারায় দুইটি ক্ষেত্রে মেয়েদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে–১) হজ্জের ক্ষেত্রে, ২) ধর্মীয় শিক্ষা লাভ ও পবিত্র আইন শিক্ষা। “এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না।” (হানাফি আইনে একটু শিথিলতা আছে। সেখানে মেয়েরা ঘর থেকে ৭৭ কিলোমিটারের মধ্যে একা একা যেতে পারবে।)
শারিয়া আইন এম ১০.৪-তে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে আরো নিষেধাজ্ঞা আছে। এখানে বলা আছে, ” স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া।”
ইসলামের আলটিমেট গোল হলো–আল্যার আইন অর্থাৎ দুনিয়া জুড়ে শরিয়া আইন কায়েম করা। ইসলাম ইসলাম করে আপনারা সেইদিকেই যাচ্ছেন। বাংলাদেশেরও কোথাও না কোথাও একটু একটু করে এভাবেই ইসলাম গেঁড়ে বসছে। আফগানিস্তানের মত আমাদের দেশেও একদিকে মেয়েরা শর্ট প্যাণ্ট পরে ফুটবল খেলবে, আরেকদিকে মেয়েরা একা ঘরের বাইরে বের হয়ে ইসলাম অবমাননার দায়ে কোতল হবে।
Leave a Reply