লিখেছেন আজন্ম নরকবাসী
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা ধর্ম নারীদের অধিকার এবং সম্মান নিয়ে আলোচনা করার সময় বলার চেষ্টা করে এটা বোঝাতে যে, তারাই নারীদের সবচেয়ে বেশি সম্মান এবং অধিকার প্রদান করেছে। এই প্রবণতা অন্য ধর্মের তুলনায় মুসলিম ধর্মে বেশি দেখা যায়। কিন্তু আসলেই কি তাই?
ধর্মের প্রবর্তন, প্রচলন, অধিকার, সুবিধাসহ প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে ঘেঁটে দেখলে বোঝা যাবে, ধর্মও পুরুষতান্ত্রিক।নারীদের শস্যক্ষেত্রের সাথে তুলনা করতেও ধর্মের বাঁধেনি।
“তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যাবহার কর” (আল-কুরআন,সুরা আল বাকারা,আয়াত 223)।
পোস্টার বানিয়েছেন দাঁড়িপাল্লা (গুমর ফাঁক)
নারীকে সম্মানের চরম সীমায় যে ধর্ম নিয়ে গেছে সেই ধর্মই নারীর ভেতর অশুভ জিনিস খুঁজে পেয়েছে। সহিহ বোখারি,ভল্যুম 7,হাদিস 30 এ রয়েছে আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেছেন “আল্লাহর নবী বলেছেন যে,তিন জিনিসের মধ্যে অশুভ আছে নারী,বাড়ী আর ঘোড়া”।
শুল্কযজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মনে বলা হয়েছে “সে ব্যাক্তিই ভাগ্যবান,যার পশুসংখ্যা স্ত্রীর সংখ্যার চেয়ে বেশি” (2/3/2/8)।
নারীকে দুর্বল করতে চান? চিন্তা করবেন না, এর উপায়ও হিন্দু ধর্মের রয়েছে। “বজ্র বা লাঠি দিয়ে নারীকে দুর্বল করা উচিত,যাতে নিজের বা সম্পত্তির উপর কোন অধিকার না থাকতে পারে “ (4/4/2/13)।
নারীকে যৌনযন্ত্র মনে করতেও হিন্দু ধর্ম দ্বিধা বোধ করে নি। বৃহদারন্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবান্ধ্য বলেন, “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে কেনবার চেষ্টা করবে।তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (6/4/7,1/9/2/14)
নারীকে কোনোদিন নবী করা হবে না, এটা কুরানে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে (সুরা নাহল আয়াত 43 এবং সুরা হজ্ব আয়াত 75)। পৃথিবীতে নারীর সংখ্যা পুরুষ অপেক্ষা এতই কি নগণ্য যে, তাদের পথপ্রদর্শক পুরুষকেই হতে হবে?
স্বামী শব্দের অর্থ প্রভু। এই প্রভুকে সেজদা করার নিয়ম আসলেও আসতে পারত কেননা কায়েস ইবনে সা’দ বলেছেন,নবী (দঃ) বলেন “আমি যদি কউকে কারো সামনে সেজদা করতে বলতাম, তবে মেয়েদের বলতাম তাদের স্বামীদের সেজদা করতে। কারণ আল্লাহ স্বামীদের বিশেষ অধিকার দিয়েছেন তাদের স্ত্রীদের উপর”।
মাঝে মাঝে আমার নিজেকে সৌভাগ্যমান মনে হয়, কারণ আমি নারী নই। এখনো অনেক ধার্মিক আছে যারা মুখে নারীদের সম্মানের কথা বললেও নারীনীতির প্রতিবাদে হরতাল ভাংচুর করতেও লজ্জিত হয় না। নারীদের মুখে মুখে সম্মান দিয়েও কাজে সমান অধিকার দিতে ধর্ম প্রস্তুত নয়। এগুলো ভেবে দেখার সময় আমাদের নেই। কেননা “আমরাই নারীদের সমান অধিকার এবং সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছি” একথা বলে তসলিমা নাসরীন কে দেশ থেকে বের করে দিয়ে ইচ্ছা মত ফতোয়া দিয়ে দায়িত্ব শেষ আমরা খুশি। এখনো অনেক ধার্মিক আছে যারা মুখে নারীদের সম্মানের কথা বললেও নারীনীতির প্রতিবাদে হরতাল ভাংচুর করতেও লজ্জিত হয় না। নারীদের মুখে-মুখে সম্মান দিয়েও কাজে সমান অধিকার দিতে ধর্ম প্রস্তুত নয়। এগুলো ভেবে দেখার সময় আমাদের নেই, কেননা “আমারাই নারীদের সমান অধিকার এবং সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছি” একথা বলে তসলিমা নাসরীন কে দেশ থেকে বের করে দিয়ে ইচ্ছা মত ফতোয়া দিয়ে ‘দায়িত্ব পালন করে’ আমরা খুশি। শেষ করি হুমায়ুন আজাদের একটা কথা দিয়ে: “আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে”। তাই, পুরুষশাষিত ধর্ম নারীর যতই সম্মানের কথা বলুক, তা কথাতেই সীমাবদ্ধ।
Leave a Reply