১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশকারীরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করার সময় তাকে ভেঙে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করা হয়। নির্ধারিত হয়ে যায় ধর্মবিশ্বাসের ভূগোল। সেই সময়ে নোংরা রাজনীতির সঙ্গে ধর্মবিশ্বাস নামের বিষের বিস্ফোরক সংমিশ্রণে যা হবার, তা-ই ঘটেছিল। দেড় কোটি লোককে নিজ বাসভূম ছেড়ে দেশান্তরী হতে হয়, চরম হয়ে ওঠে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় দাঙ্গায় মৃত্যু হয় দশ লাখেরও বেশি মানুষের।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ নামের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে দেশবিভাগপূর্ব ও দেশবিভাগোত্তর ঘটনাবলির কিছু চিত্র পাওয়া যায়। সেখানেও আছে হিন্দু-মুসলমানের বন্ধুত্ব ও বৈরিতার উত্থান-পতনের গল্প। উল্লেখ করা আছে অজস্র মর্মবিদারী ঘটনা।
সেই বই থেকে একটি অংশ:
কোনও রাজনৈতিক নির্দেশ ছিল না, সাধারণ মানুষের আবেগ সব দলের ব্যবধানও মুছে দিয়েছিল। হিন্দু ও মুসলমান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছে, গুলি খেয়ে পাশাপাশি ঢলে পড়েছে। তা হলে, জীবনে ও মরণেও তারা একসঙ্গে থাকতে পারে?
আবার এইসব মানুষই কত তাড়াতাড়ি বদলে যেতে পারে নেতাদের নির্দেশে! আজ যাকে ভাই বরে ডাকছে, কাল তার বুকে ছুরি বসাতে যাচ্ছে। ব্যবধান কীসের? শুধু ধর্মের। ধর্মের ডাকে মানুষ ভেড়ার পাল হয়ে যায়। ধর্ম যেন মানবিকতা বর্জিত। দয়া, মায়া, স্নেহ, করুণা বর্জিত। মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ? ধর্মীয় উন্মাদনায় মানুষ অন্য ধর্মের একটি শিশুকেও ছুরি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে, কিন্তু রাস্তা থেকে কুকুরছানা বুকে তুলে নিয়ে যায়।
সেই সময়ের কাহিনী ও অজস্র ফুটেজ নিয়ে বিবিসি-র তৈরি দেড় ঘণ্টার ডকুমেন্টারি: Partition: The Day India Burned.
Leave a Reply