প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অন্যতম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হোরাস। তার মূর্তিতে দেখা যায় তার শরীরটা মানুষদের, কিন্তু মাথাটা বাজপাখীর। ধারণা করা হয় এই সিম্বল তৎকালীন একটি ট্রাইব্যাল গোত্র থেকে এসেছে যাদের উপাস্য দেবতা ছিল বাজপাখি। অনেক প্রাচীন মিশরীয় নিদর্শনে এই হোরাসকে শিয়ালের মাথাওয়ালা অন্য কারো সাথে যুদ্ধাবস্থায় দেখা যায়—হোরাস শিয়ালের মাথাওয়ালা কাউকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে চেপে ধরে বর্শা দিয়ে আঘাত করছে। অর্থাত অন্য পক্ষটা ছিল শিয়াল গোত্র-প্রধানের। এই বাজপাখি আর শিয়াল—দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়। তাতে বাজপাখি গোত্র জয়লাভ করে। তারপর বাজপাখি গোত্র-প্রধান রাজা হয়, এবং পরে হোরাস নামে দেবতার আসন লাভ করে।
এবার এই বাজপাখির জায়গায় দুর্গাকে এবং শিয়ালের জায়গায় মহিষাসুরকে বসিয়ে দেখুন তো ব্যাপারটা আসলে কী দাঁড়ায়…
দুর্গা নিশ্চয়ই মহিষের সাথে যুদ্ধ করে নাই। যুদ্ধ করছে মানুষের সাথে। আর আর্য/ব্রাহ্মণরা অনার্য/নিম্নবর্ণের লোকেদের যে অসুর/রাক্ষস বলত, এটা আর নতুন করে বলার নেই। শুধু মনে করিয়ে দিলাম।
এবার মনে করিয়ে দিচ্ছি হিন্দুদের উচ্চবর্ণের কয়েকটি গোত্র নামের নমুনা—ভরদ্বাজ (ভরত পাখি), গোতম (গরু), কাশ্যপ (কচ্ছপ), শুনক (কুকুর), মৌদ্গল্য (মাগুর মাছ), কৌশিক (পেঁচা), শাণ্ডিল্য (ষাঁড়), বাৎস (বাছুর), মাণ্ডুকেয় (ব্যাঙ), দার্ভায়ন (দূর্বাঘাষ), তৈত্তিরীয় (তিতির পাখি)। পরবর্তীতে এই নামগুলোর আসল টোটেমিক উৎসের কথা ঢাকা পড়ে গেছে, এবং এই নামগুলোকে কল্পনা করা হয়েছে ঋষি হিসেবে। যেমন, কাশ্যপ গোত্র মানে কাশ্যপ ঋষির বংশধর। (রাম যেমন ছিল সূর্য বংশের সন্তান, অর্থাত তাদের উপাস্য দেবতা ছিল সূর্য। কেউ নিশ্চয়ই বলবেন না রামের পূর্বপুরুষ ছিল সূর্য, অর্থাত সূর্যের বীর্যে রামের বংশের সৃষ্টি।) কিন্তু কাশ্যপ ঋষির বংশ-পরিচয় পাওয়া যায় না, তখন গোজামিল দিয়ে বলা হয়—এরা ব্রহ্মার মানসপুত্র। এ ধরনের কথা যে হাস্যকর এবং অবৈজ্ঞানিক, সেটা আর বলার অপেক্ষায় রাখে না। কেননা এরকম গোত্রের নাম এখনো খুঁজলে পিছিয়ে থাকা অনেক ট্রাইব্যাল সমাজের মধ্যে পাওয়া যাবে।
তো মহিষাসুরও সেরকম কোনো মহিষগোত্রের প্রধান ছিল যাদের উপাস্য দেবতা ছিল মহিষ। হিন্দুপুরাণে তার ব্যাপারে বিশদ কাহিনী পাওয়া যায়। উইকি থেকে সংক্ষেপে—রম্ভ নামক অসুর মহাদেবকে তপস্যায় প্রীত করে তার নিকট ত্রিলোকবিজয়ী পুত্রবর প্রার্থনা করায় মহাদেব তাকে সেই বর প্রদান করে। এ বর প্রভাবে জন্মগ্রহণ করে মহিষাসুর অতীব দুর্দান্ত হয়ে উঠে এবং দেবগণকে দূরীভূত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করে। বিতাড়িত দেবগণ শম্ভু ও বিষ্ণুর নিকট তাদের দুঃখের কাহিনী নিবেদন করলে তাদের তেজ হতে দুর্গার আবির্ভার হয়। দুর্গা যুদ্ধ করে এই অসুরকে নিহত করে।
এখন প্রশ্ন হলো, স্বর্গ কোথায় অবস্থিত ছিল?—হিন্দু ধর্মে স্বর্গ-মর্ত্যর কথা পাওয়া যায়। স্বর্গ দেবতাদের, আর মর্ত্য মানে পৃথিবী যা জনসাধারণের। আরেকটা প্রশ্ন হলো—স্বর্গ যদি পৃথিবীতেই না হবে তবে মর্ত্যের মহিষাসুর কী করে স্বর্গ দখল করল? এখানে উল্লেখ্য, তখনকার মানুষদের কাছে পৃথিবী মানেই ছিল শুধু ভারত।
হিন্দুধর্মের কাহিনীতে দেবদেবীদের বিচরণ-স্থান হিসাবে ভারতের উত্তরাংশের শীতপ্রধান স্নো পড়া পাহাড়িয়া অঞ্চলগুলোর কথা বার বার পাওয়া যায়। আর মর্ত্য হলো দক্ষিণের সমতলভূমি। এই সমতলেই বাস করত নিম্নবর্ণের অনার্যরা, তাদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ-পশুপালন। তারা বাস করত একেকটা গোত্রে। সেরকমই একটা ট্রাইব্যাল গোত্র, যাদের উপাস্য দেবতা ছিল মহিষ। সেই হিসাবে এই গোত্রের সবাই-ই পরিচয় ছিল “মহিষ”। আর আর্যরা এদেরকে অসুর/রাক্ষস হিসাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। সেই থেকে আর্যদের কাছে এই মহিষ গোত্র প্রধান হয়ে গেলো মহিষাসুর।
একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন—খুব শান্তিপ্রিয় জাতিও অন্যের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত অবহেলিত হতে শুরু করলে এক পর্যায়ে প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ায়। শিক্ষাদীক্ষায়, অস্ত্রে-সস্ত্রে উন্নত শিকারী আর্যরা অনার্যদের উপর অত্যাচার চালাত, এ-ও আর নতুন করে বলবার নেই। তো সেরকম ভাবেই হয়তো ট্রাইব্যাল অনার্যরা আর্যদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। তার নেতৃত্ব দিয়েছিল এই মহিষগোত্র, গোত্রপ্রধান মহিষাসুর। এরা উত্তরে গিয়ে যুদ্ধ করে আর্যদের স্বর্গনামক উত্তরাঞ্চল দখল করে নিলে আর্যরা পূর্বদিকের পাহাড়-পর্বত পার হয়ে পালিয়ে চলে যায় শিবের কাছে, কৈলাশে। সেখানে তারা দুর্গাকে বিশেষ অস্ত্রে-সস্ত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করতে পাঠায়। (এখানে অনেকে পুরুষবাদীদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এত পুরুষ থাকতে নারী কেন! উত্তর হতে পারে, তখনকার দিনে কোনো কোনো নারী হয়তো এখনকার মতই পুরুষদের চেয়ে বেশী সাহসী, কৌশলী এবং শক্তিশালী ছিল। এখানে উল্লেখ্য, গণপতি গণেশকেও বশে আনতে ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরীদেবী কে গণেশের সাথে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছিল, এবং গণেশ তাতে হেরে যায়। এই ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরী দেবীও দুর্গার আরেক রূপ বলে প্রচলিত।)
দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে। আবার প্রচলিত আছে, মহিষাসুরের এক ফোটা রক্ত মাটিতে পড়লে নাকি আবার আরেকটা মহিষাসুরের জন্ম হত। বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করলে বোঝা যায়—পরের মহিষাসুর আগের জন্মের রক্ত অর্থাত ছেলে হবে, নয়তো ঐ গোত্রেরই কেউ হবে। কেননা গোত্র-প্রধান মারা গেলে তার ছেলে বা গোত্রের পরবর্তী অবস্থানে থাকা লোকটি সেই গোত্রের প্রধান হত। আবার একটা গোত্রের সবার পরিচয়ই হত সেই গোত্রের উপাস্য দেবতার নামে—মহিষা…মহিষাসুর। এ ভাবে গোত্রের সবার/রক্তের বিনাশ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলছে।
সবশেষে, এই যে দুর্গাপূজা–দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধ হওয়ার মূর্তি, এটা অনার্য/নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর আর্য/উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতীক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর্যরা এটাকে তাদের বিজয়-স্মারক হিসাবে বানিয়েছে। পরবর্তীকে পূজার প্রচলন হলে এইভাবেই দুর্গাকে দেবীর আসনে বসিয়ে পূজা করছে। এখানে বলে রাখা ভালো, হিন্দুধর্মের যে পূজার পদ্ধতি এখন টিকে আছে, এই পূজা আর্য/ব্রাহ্মণদের তৈরী করা। কৃষিজীবি-পশুপালক অনার্যদের ছিল “পার্বণ”। যেমন নতুন ফসল উঠলে সেই খুশিতে নবান্ন উৎসব হয়। এটা পূজা নয়, কৃষিজীবীদের একটা পার্বণ। পরবর্তীতে “পূজা-পার্বণ” কথাটি একটি মিলনের ইঙ্গিত বহন করে।
[বিঃদ্রঃ ইংরেজদের দ্বারা শত শত বছর নির্যাতিত শোষিত হওয়ার পরেও ভারতীয়রা এখনো যেমন ইংরেজদের পা-চাটা-দাসত্ব মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে পারেনি, বাংলাদেশীরা যেমন পাকিস্তানপ্রীতি ত্যাগ করতে পারছে না, অনার্য হিন্দুরাও এমনভাবে মগজধোলাই হয়েছে যে দুর্গার পায়ের তলায় থাকাটাকেই ধন্য মনে করে।]
——————
আপডেট #১ (অক্টোবর ২২, ২০১৫)
আগের পোস্টটাতে হিন্দুরা দুটি ভুল পেয়েছে–কৈলাস বানানটি ভুল ছিল, সেটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। আর মহিষাসুরের রক্ত মাটিতে পড়লে আরেকটা অসুরের জন্ম হত–এই তথ্যটা ভুল। এটা আসলে মহিষাসুরের কাহিনী নয়, রক্তবীজ নামক অসুরের কাহিনী। ধন্যবাদ যারা ভুল দুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। এই ভুলটি সংশোধন করা হয়নি। কারণ এ ব্যাপারে কমেণ্ট সেকশনে অনেক কথা হয়েছে। তবে এই ভুলটি করার ফলে একটি উপকার হয়েছে, চণ্ডীটা আবার নতুন করে পড়ার ইচ্ছে এবং সুযোগ। মোটামুটি পড়েও ফেললাম।
চণ্ডীতে দেখা যায় মহিষাসুর অনেকগুলো মূর্তি ধারণ করেছিল। অর্থাৎ দুর্গা যখন মহিষের গলা কেটে ফেলত, তখন তার ভিতর থেকে বাঘের রূপ ধরে আবার জন্ম নিত। এভাবে মহিষ, বাঘ, গণ্ডার, শূকর, সিংহ, খড়্গচর্মধর পুরুষ, গজ এবং পুনরায় মহিষের রূপ ধরত। অন্যদিকে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়লে আরেকটা অসুরের পয়দা হত। প্রায় একই কাহিনী–একে একে গোত্রের সব দলপতিদের বিনাশ করার কাহিনী।
আগের পোস্টটাতে যে কাহিনীর দিকে নজর দিতে চেয়েছিলাম তা হলো, আর্য/ব্রাহ্মণরা তাদের ব্রাহ্মণ্য সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য অনার্য/ট্রাইব্যাল সমাজগুলোকে কিভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। মুসলমানরা যেমন অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়। দাওয়াত গ্রহণ করলে ভালো, না করলে কোতল। আর্যরাও অনেকটা তাই করত। তাদের “পদসেবা” করার জন্য অনার্যদের তাদের “ধর্মভুক্ত” করতে চাইত, অর্থাৎ তাদের সেবাদাস/সেবাদাসী বানিয়ে রাখতে চাইত। কেউ তার প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দিত। খেয়াল করে দেখবেন, ব্রাহ্মণ-প্রণীত হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগুলোতে নমঃশুদ্র বলে একটা বর্ণবিভাগ পাওয়া যায়, এরা মূলত সেই অনার্য/ট্রাইব্যাল সমাজের লোক। এদেরকে হিন্দুধর্মে স্থান দেয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বর্ণবিভাগ করে এদেরকে সবচেয়ে নিচু স্তরে রাখা হয়েছে, আর এদের কাজ নির্ণয় করে দেয়া হয়েছে–উচ্চবর্ণের লোকদের পদসেবা করা।
তো আবার নতুন করে চণ্ডীপাঠ করতে গিয়ে আরো অনেক ব্যাপার বিস্তৃত ভাবে মাথায় এলো। চণ্ডীর বেশিরভাগ অধ্যায় জুড়ে শুধু বধ আর বধের কাহিনী–মধু-কৈটভ বধ, মহিষাসুর সৈন্য বধ, মহিষাসুর বধ, ধূম্রলোচন-বধ, চণ্ডমুণ্ড বধ, রক্তবীজ-বধ, নিশুম্ভ বধ, শুম্ভ বধ। এরকম আরো অনেক বধের কাহিনী এখানে ওখানে পাওয়া যাবে। এমনকি গণদেবতা বলে খ্যাত গণেশকেও বধের জন্য ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরীদেবীকে পাঠানো হয়েছিল। এই ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরীদেবীও চণ্ডী বা দুর্গার আরেক নাম বা রূপ। গণেশের অপরাধ ছিল, সে গণদেবতা/গণপতি অর্থাৎ সে-ও এই গণ অর্থাৎ সাধারণ জনগণ/ট্রাইব্যাল সমাজের সমাজপতি বা এই সমাজের দেবতা ছিল। গণেশ এই ট্রাইব্যাল সমাজকে অনেকবার রক্ষা করেছে এই আর্যদের হাত থেকে। আর্যরা তাই এর নাম দিয়েছিল বিঘ্নকর/বিঘ্নকারী। আর্যরা কোনো কাজই সিদ্ধ করতে পারত না এই গণেশের জন্য। পরে ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরীদেবীকে পাঠানো হয়ে গণেশকে শায়েস্তা করতে। এই দেবীর পায়ের তলায় গণেশ গড়াগড়ি খাচ্ছে, এমন অনেক মূর্তিও পাওয়া যায়। খেয়াল করে দেখবেন, তখন গণেশের গায়ে কোনো অলংকার ছিল না। গণেশ আর্যদের বশ্যতা স্বীকার করলে তাকে অন্য অসুরদের মত আর প্রাণে মারা হয় না। আর এই বশ্যতার স্বীকার করে বলেই পৌরাণিক কাহিনীতে গণেশের স্থানও আর অসুরদের কাতারে পড়ে নাই। আর্যদের কাছে গণেশ হয়ে গেল বিঘ্ননাশকারী/সিদ্ধিদাতা। অর্থাৎ গণেশের আওতায় যত ট্রাইব্যাল সমাজ ছিল, সবাই আর্যদের আওতায় চলে এলো। কেউ আর আর্যদের কোনো কাজে বিঘ্ন ঘটাতো না।
পরবর্তীযুগে যখন রাষ্ট্রগঠনের বিষয়টা এলো, তখন আর্যরা আর এই ট্রাইব্যালদের আর মেরে ফেলত না। কারণ রাষ্ট্রগঠন করতে হলে লোকবল/সৈন্য লাগবে। তখন এই ট্রাইব্যাল সমাজ থেকে সৈন্য সংগ্রহ করা হত। এই কাজটি কোন কোন কৌশলে, কোন কোনো ষড়যন্ত্রে, কোন কোন কূটনীতিতে হত, তার বিস্তারিত বর্ণনা পাবেন কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ নামক গ্রন্থে। এই ষড়যন্ত্র মুহাম্মদও করেছে, ছলে বলে কৌশলে সে সব ট্রাইব্যাল গোত্রগুলোকে বিনাশ করে দিয়েছে একটা রাষ্ট্র বা সাম্রাজ্য গঠনের জন্য। বাংলাদেশে এখনো চলছে–হিন্দুদের সংখ্যা লোপ পাচ্ছে, আদিবাসী-পাহাড়িদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চলছে নানা প্রকার চক্রান্ত। কারণ এসব ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর বা গোত্রের আছে নিজস্ব নিয়মকানুন। রাষ্ট্র চালাতে গেলে ওসব একেক গোত্রের একেক নিয়মকানুন রাষ্ট্রীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। তাই রাষ্ট্র সবাইকে এক আইনের আওতায় আনার নামে চায় সব ঐতিহ্য মুছে ফেলতে, এলাকা বা গোত্র ভিত্তিক সব রীতিনীতি মুছে ফেলতে। আধুনিক রাষ্ট্রের এটাই সবচেয়ে বড় নির্মমতা। আর ভারতবর্ষে এর শুরুটা হয়েছিল ট্রাইব্যাল গোত্রগুলোর মানুষদের অসুর/রাক্ষস নাম দিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মাধ্যমে।
এই নিশ্চিহ্নকরণ-প্রক্রিয়া ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বছরের পর বছর ধরে চলছে। যেখানে সমস্যা হত, সেখানে হয়তো স্পেশাল অস্ত্র দিয়ে স্পেশাল ট্রেইনিং-প্রাপ্ত কোনো নারী কিলারকে পাঠানো হত। আর এই সব নারী কিলারদের একটা উপাধি ছিল–দুর্গতিনাশিনী। সারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এইসব নারী কিলাররা আর্যদের পক্ষে সব “দুর্গতি নাশ” করে দিত। তাই গণেশ যেভাবে বিঘ্নকারী থেকে বিঘ্ননাশক বা সিদ্ধিদাতা হয়ে উঠল, এইসব চণ্ডী, কালী, অম্বিকা, চণ্ডিকা, চামুণ্ডা, ভ্রুকুটিতারা, পর্ণশবরী ইত্যাদি নারী কিলাররাও দুর্গতিনাশিনী বা দুর্গা উপাধিতে ভূষিত হতে লাগত।
[বিঃদ্রঃ চণ্ডী শব্দের অর্থ অতি কোপনস্বভাবা স্ত্রীলোক। আজকাল তেমন কাউকে তাদের মেয়ের নাম চণ্ডী রাখতে দেখা যায় না। উলটো কোনো মেয়ের মধ্যে উগ্রতা দেখা গেলে শ্লেষাত্মক ভাবে চণ্ডী, উগ্রচণ্ডী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অর্থাৎ সমাজে এখনো এই শব্দটিকে কিছুটা হলেও ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দেখা হয়।]
Leave a Reply