লিখেছেন নীল নিমো
১৩.
মাঝে মাঝে আমার মুরিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, প্রেম-ভালবাসা দেখলে আমার বেশ ভাল লাগে। মনে শান্তি খুঁজে পাই। পীর হিসাবে আমার জীবনটা সার্থক মনে হয়। যেমন আজকে দেখলাম, আমার দুই মুরিদ, উটের মূত্র এবং গরুর মূত্র ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। আহ্… কী সুন্দর ভ্রাতৃপ্রেমের দৃশ্য। একেই বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
যাই হোক, পশুর মুত্র একটি পবিত্র জিনিস। হিন্দু ভাইদের জন্য গরু একটি পবিত্র প্রাণী। তাই তাঁরা বেশ ভক্তি সহকারে ক্ষতিকর কোল্ড ড্রিংসের পরিবর্তে উপকারী গরুর মূত্র পান করেন। গরুর মূত্রের ভিতর অনেক উপকার আছে। গরুর মূত্র পান করলে ডায়াবেটিক্স, ক্যানসার, এইডস, ইবুলা ভাইরাস, জিকো ভাইরাস, জন্ডিসসহ সকল রোগ সেরে যায়।
মাশাল্লাহ, মুসলমান ভাইরাও পশুর মূত্র সেবনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন নাই। উটের মূত্র সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি বুখারি শরিফের হাদিস আছে:
….আবু কিলাবা বর্ণনা করেছেনঃ আনাস বলেছেন, “উকল ও উরাইনা গোত্রের কিছু লোক মেদিনাতে আসে এবং মদিনার আবহাওয়া তাদের খাপ খায় নি। সুতরাং নবী(সঃ) তাদের উটের পাল থেকে দুধ ও মুত্র খেতে হুকুম করেন। সুতরাং তারা হুকুম মত কাজ করে, এবং তারা সুস্থ হয়ে যায়…” (সাহিহ বুখারি, ভলিউম ১, বুক ৪, হাদিস ২৩৪)
আমি, নিমো হুজুর, ঠিক করেছি, এখন থেকে আমার মুরিদেরকে পানি-পড়ার বদলে মূত্র-পড়া দিব। এক গ্লাস মূত্র-পড়া খেয়ে মুরিদের সব অসুখ সেরে যাবে।
১৪.
আজকাল পোলাপানরা বেশি পাকনা হয়ে গেছে। কী সব আজেবাজে প্রশ্ন করে, কোনো ঠিকঠিকানা নাই। ঘটনাটা একটু খুলে বলি। ডেনমার্কে একটি বাসায় সুন্নতে খতনার দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। যে ছেলের মুসলমানি, মানে সুন্নতে খতনা হয়েছে, সে আমাকে প্রশ্ন করে বসল, “হুজুর আংকেল, নবুয়াত পাওয়ার পর আমাদের নবীজির কি মুসলমানি হয়েছিল? ওনার বয়স তো ৪০ বছর ছিল। আমার আব্বা বলেছে, বেশি বয়সে মুসলমানি করলে ব্যথা বেশি লাগে, তাই আমার মুসলমানি তাড়াতাড়ি করা হয়েছে। বয়স বেশি হবার কারণে আমাদের নবীজি মনে হয় ভীষণ ব্যথা পেয়েছিলেন। নবীজির জন্য কান্না পাচ্ছে।”
আমি উত্তর দিলাম, “আস্তাগফিরুল্লাহ, জন্মগতভাবে নবীজির ঐখানে কোন চামডাড়া ছিল না, তাই মুসলমানির দরকার হয় নাই।”
ইঁচড়েপাকা ছেলেটা পাল্টা প্রশ্ন করল, “বলেন কী, হুজুর? নবীজির দেহের ঐ জায়গার একটা অংশ মিসিং ছিল? আমাদের নবী তো তাহলে প্রতিবন্ধী ছিলেন? সাহাবীরা জিনিসটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন? আমার আব্বা বলেছে, নবীজি এতই লজ্জাশীল ছিলেন যে, নিজের ঐ জায়গাতে কোনোদিন তাকাতেন না। এখন ভুলবশত ঐ জায়গাতে কিছুটা চামড়া থেকে গেলে তো উনার মুসলমানী জরুরি ছিল। আর ঠিকমত মুসলমানী না করা হলে মানুষ তো হিন্দু থেকে যায়।”
আমি ছেলেটার বাবাকে ডাক দিয়ে বললাম, “বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সামনে কোরান হাদিস নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবেন না, আলোচনা করবেন না। এতে ছেলেমেয়েদের চরিত্র খারাপ হয়ে যায় এবং বেয়াদব হয়ে পড়ে। আপনার ছেলের কথা শুনে আমার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে, আমি বাসায় চলে গেলাম।”
১৫.
গত শুক্রবার আমি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। যাই হোক ঘটনাটা খুলে বলি। যথারীতি শুক্রবারে মসজিদে আমি বয়ান দিচ্ছিলাম:
– মুরিদ ভাইরা আমার, দুই দিনের এই দুনিয়া হল ইহকাল। ইহকাল হল আমাদের জন্য হল একটি পরীক্ষা। এই ইহকালে একটি নেক কাজ করবেন, তো আখিরাতে তার একশ হাজার গুণ ফলাফল পাবেন। ইহুদি-নাসারারা এই দুনিয়াতে আরাম-আয়েশ করে সময় নষ্ট করছে। তারা আখেরাতে কিছুই পাবে না। তাই আমাদের উচিত এই দুনিয়ার মায়া, টাকাপয়সা, লোভ-লালসা, আরাম-আয়য়েশের জন্য আফসুস না করে আখিরাতের অনন্ত সুখ শান্তির জন্য অপেক্ষা করা। এই দুনিয়াতে এক টাকা খরচ করবেন, আখিরাতে তার একশ হাজার গুণ প্রতিদান পাবেন…
আমি খেয়াল করি নি যে, একটি নাস্তিক মসজিদের সামনের কাতারে বসে চুপচাপ আমার বয়ান শুনছিল। নামাজ শেষে আমি যখন মসজিদ থেকে বের হলাম, নাস্তিক আমাকে বলে উঠল, “হুজুর আমাকে দশ হাজার ড্যানিশ ক্রোনা (১ লক্ষ বিশ হাজার টাকার মতন) ধার দিতে পারবেন? আমি দরিদ্র মানুষ, তাই ইহকালের পরিবর্তে আখিরাতে আপনার টাকা শোধ করে দিবো।”
নাস্তিকের কথা শুনে আমার ওযু নষ্ট হয়ে গেল। আমি ‘আস্তাগফিরুল্লা’ বলে ওযু করতে দৌড় দিলাম।
Leave a Reply