[প্রায় পুরোটাই কপিপেস্ট।]
আমাদের দেশ ও দশের প্রাচীন ইতিহাসের অনেক চিহ্ন এখনো আদিবাসী বা ট্রাইব্যাল সমাজের মধ্যে পাওয়া যাবে। সাঁওতালরা বাংলার ওই আদিবাসী ট্রাইব্যাল সমাজগুলির মধ্যে অন্যতম বড় গোষ্ঠী। সেই প্রাচীন কালে রাষ্ট্রশক্তির আবির্ভাব হওয়ার পর থেকেই এরকম ট্রাইব্যাল সমাজগুলোর উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে কী রকম অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তার সুস্পষ্ট বর্ণনা দেয়া আছে চাণক্য বা কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ নামক রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গ্রন্থে, যা সেই প্রাচীন কালের রাষ্ট্রনীতি ও শাসনসংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ইতিহাসও বটে। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘লোকায়ত দর্শন‘ পড়তে গিয়ে এই দিকটা প্রথম চোখে পড়ে। দেশ বা রাষ্ট্র কী পরিমান খারাপ হতে পারে, বা এর সূচনাটা কিভাবে হয়েছিল–দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ‘অর্থশাস্ত্র’ থেকে তুলে এনে দেখিয়েছেন–রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এসব বিবরণ পড়তে গিয়ে ভয়ে শিউড়ে উঠেছিলাম।
দেবীপ্রসাদ এ নিয়ে লিখেছেন, “সেকালের শাসকশ্রেণী ওই গণ বা সংঘগুলিকে ভাঙবার উৎসাহে যে কতোদূর নির্লজ্জ ও দুর্নীতিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতেও কুন্ঠিত হয়নি তারই নিদর্শন হলো কৌটিল্যের রচনা। কেননা, আমরা একটু পরেই দেখতে পাবো, এই উদ্দেশ্যে কৌটিল্য মদ্য ও গণিকার বহুল ব্যবহার করতে বলেই ক্ষান্ত নন, সধবা ও বিধবা নারী এবং সন্ন্যাসী-বেশধারী গুপ্তচর কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তারও বর্ণনা খুঁটিয়েই দিয়েছেন।”
কৌটিল্য বলছেন, ‘ছলে-বলে-কৌশলে, ঘুষ দিয়েই হোক আর যে-করেই হোক, সর্বপ্রথম গণগুলিকে হাত করবার চেষ্টা করতে হবে।’ কিন্তু কেনো? কারণ ওইসব ট্রাইব্যাল সমাজে তাদের মধ্যে যে একতা বা গণবন্ধন ছিল, সেটা ছিল তখনকার দিনের চরম এক শক্তি উৎস। এদের জীবন সহজ-সরল হলেও বহিরাগত শাসন বা শোষণ কোনোটাই সহজ ছিল না। তাই রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের শাসকরা চাইত এদেরকে হাত করতে, নয়তো ধ্বংস করে দিতে। এবং সেটা কিভাবে করতে হবে বা করা হয়েছিল, সে বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে পাওয়া যাবে “সেকালের বিনায়ক-বিদ্বেষের মধ্যে, সমাজচেতনার স্তরে মহাভারতের বাহীক বর্ণনায় এবং সুস্পষ্ট রাজনীতির স্তরে কৌটিল্যের সংঘবৃত্ত নামের অধিকরণে।”
দেবীপ্রসাদের মতে পুরো সংঘবৃত্ত অধিকরণটি পড়ে নিতে পারলে ভালো। শুধু ঘুষ দিয়ে এদেরকে সহজে হাত করা যেত না, তাই কৌটিল্য এসব সমাজের মূল শক্তিটা যেহেতু একতা বা গণবন্ধন–সেখানে ভাঙন ধরানোর জন্য এদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির দিকেই বেশি নজর দিতে বলছেন। রাষ্ট্রশক্তিগুলো কি এখনো তাই করে না! জনগণের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে তাদেরকে শাসন করা অনেক সুবিধা।
এই ঝামেলা কিভাবে সৃষ্টি করতে হবে বা করা হত, ‘অর্থশাস্ত্র’ থেকে দেবীপ্রসাদ কিছু অংশ তুলে ধরেছেন–(যাদের সময় এবং আগ্রহ আছে পড়ে নিতে পারেন। ভাষাটা একটু কঠিন হলেও পড়তে বিরক্তি লাগবে না–)
================
…সংঘের আসন্নবর্তী হইয়া (বিজিগীযুর) সাত্রিনামক গূঢ় পুরুষগণ সংঘগুলির পরস্পরের মধ্যে দোষ, দ্বেষ বা রোষ, অপকারাদি-নিমিত্তক বৈর বা দ্রোহ ও কলহের কারণ উপলব্ধি করিয়া তাহাদিগের মধ্যে ক্রমশ অনুপ্রবেশিত ভেদ ঘটাইবে এবং বলিবে, ‘অমুখ সংঘ তোমাদিগের সংঘের এইরূপ অপবাদ করে’। (অন্য সংঘের প্রতিও এইভাবে বলিয়া) তাহারা উভয়পক্ষমধ্যে ভেদ আনয়ন করিবে। পরস্পরের প্রতি রুষ্টভাবাপন্ন সংঘীদিগের মধ্যে আচার্যব্যঞ্জন গূঢ়পুরুষগণ বিদ্যা, শিল্প, দ্যুত ও বৈহারিক বিষয়ে বালকলহ উৎপাদন করাইবে।……(সংঘমধ্যে) হীনগণের সহিত বিশিষ্টগণের এক পংক্তিতে ভোজন ও বিবাহসম্বন্ধ তাহারা নিবারণ করিবে।…অথবা, (সংঘমধ্যে) কোনো ব্যবহার ন্যাজ্যভাবে নির্ণীত হইলেও, তাহার ইহার বিপরীত ন্যায় সমর্থন করিয়া শুনাইবে বা বুঝাইবে। অথবা, তীক্ষ্ণ নামক গূঢ়পুরুষেরা, রাত্রিতে সংঘীগণমধ্যে কোনো বিবাদবিষয় উপস্থিত হইলে, (একপক্ষের) দ্রব্য, পশু ও মনুষ্য নষ্ট করিয়া (অপর কোনও পক্ষের উপর সেই নাশের দোষ আরোপ করিয়া) তাহাদের মধ্যে কলহ উৎপাদন করিবে।…বিক্রমের অবসর উপস্থিত হইলে, শৌণ্ডিক ও সৌরিকের বেশধারী গূঢ়পুরুষগণ নিজেদের পুত্র ও স্ত্রীর মরণচ্ছলে, ইহা (প্রেতের উদ্দেশ্যে দেয়) ‘নৈষেচয়িক’ নামক মদ্য—এই বলিয়া মদনরসযুক্ত শতশত মদ্য কুম্ভ (সংঘের নিকট) প্রদান করিবে।………অথবা, কুলটা স্ত্রীর পোষণকারী, অথবা, প্নবক, নট, নর্তক ও সৌভিকগণের (ঐন্দ্রজানিকগণের) বেশধারী গূঢ়পুরুষেরা গুপ্তচরের কার্যে ব্যাপারিত থাকিয়া, পরমরূপযৌবনবিশিষ্টা স্ত্রীলোকদ্বারা সংঘমুখ্যদিগকে উন্মাদিত করিবে। সংঘমুখ্যেরা এইভাবে স্ত্রীকামী হইলে, তাঁহাদের মধ্য হইতে অন্যতমের কোনো স্ত্রীলোকের প্রতি বিশ্বাস উৎপাদন করিয়া (মিলনের সংকেতস্থান ঠিক হইলে) সেই রমণীকে অন্য এক সংঘমুখ্যদ্বারা অন্যত্র নেওয়াইয়া বা অন্য সংঘমুখ্য তাহাকে অপহরণ করিয়া নিয়াছেন বলিয়া মিথ্যা কথা রটনা করাইয়া, সংঘমুখ্যদিগের মধ্যে তাহারা কলহ উৎপাদন করিবে। এইভাবে কলহ উৎপন্ন হইলে তীক্ষ্ণ নামক গূঢ়পুরুষেরা তাহাদের নিজ কার্য সমাধা করিবে, অর্থাৎ কোনো একজন সংঘমুখ্যের হত্যাসাধন করিবে এবং রটাইয়া দিবে, ‘এই কামুক ব্যক্তি প্রতিকামুক অন্য ব্যক্তি দ্বারা হত হইয়াছে’। অথবা, এই সংঘমুখ্যগণমধ্যে যদি কেহ ঝগড়া করিতে না চাহেন, তাহা হইলে সেই রমণী এই প্রকার বলিবে—‘আপনার প্রতি আমি জাতকামা হই—ইহাতে অমুখ সংঘমুখ্য বাধাপ্রদান করেন অর্থাৎ তিনি ইহা ইচ্ছা করেন না। তিনি জীবিত থাকিলে আমি আর এখানে (আপনার নিকট) থাকিতে পারি না’—এই বলিয়া সে তাঁহার বধের আয়োজন করিবে। অথবা, যদি কোনো সংঘমুখ্য তাহাকে বলাৎকারপূর্বক অপহরণ করিয়া কোনো জঙ্গলে বা ক্রীড়াগৃহে (সংকেতগৃহে) লইয়া যান, তাহা হইলে তাঁহাকে তীক্ষ্ণনামক গূঢ়পুরুষেরা হত্যা করাইবেন, অথবা, সে স্বয়ং বিষপ্রয়োগে তাঁহাকে হত্যা করিবে। তাহার পর সেই রমণী এইরূপ প্রকাশ করিবে—‘অমুখ (প্রতিকামুক) ব্যক্তির দ্বারা আমার প্রিয়জন হত হইয়াছেন’। অথবা, সিদ্ধপুরুষের বেশধারী কোনো গূঢ়পুরুষ কোনো স্ত্রীকে জাতকাম সংঘমুখ্যকে বশীকরণের উপযোগী ওষধিসমূহের প্রয়োগের ছল করিয়া, বিষমিশ্রিত ঔষধের প্রয়োগদ্বারা ঠকাইয়া (তাঁহার বধসাধনপূর্বক) পলাইয়া যাইবে। সে পলাইয়া গেলে পর, অন্য সত্রী পুরুষেরা প্রকাশ করিবে যে, অন্য একজন প্রতিকামুক দ্বারা প্রেরিত হইয়াই সেই সিদ্ধপুরুষ তাঁহার বধসাধন করিয়াছেন। অথবা, ধনী বিধবা স্ত্রীলোক, অথবা (সধবা হইলেও দারিদ্র্যাদিদোষে) গূঢ়ভাবে ব্যাভিচারকারিণী স্ত্রীলোক ও কপট স্ত্রীলোক (অর্থাৎ স্ত্রীবেশধারী পুরুষগণ) দায় ও নিক্ষেপ সম্বন্ধী বিবাদে রত হইয়া (নির্ণয়ার্থ) সংঘমূখ্যগণের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগের উন্মাদিত করিবে। অথবা, অদিতিস্ত্রী (অর্থাৎ, নানাপ্রকার দেবতার ছবি প্রদর্শন করিয়া জীবিকাকারিণী স্ত্রী), কৌশিক-স্ত্রী (সর্পগ্রাহীদিগের স্ত্রী), নর্তকী ও গায়িকা স্ত্রী (এইভাবে) সংঘমূখ্যদিগকে উন্মাদিত করিবে। এই প্রকার ভাবে উন্মাদিত হইয়া বশীকৃত সংঘমূখ্যদিগকে সংকেতের গূঢ়গৃহে রাত্রিতে সমাগমার্থ প্রবেশ করিলে তীক্ষ্ণনামক গূঢ়পুরুষেরা তাঁহাদিগকে বধ করিবে, কিংবা, বন্ধনপূর্বক অপহরণ করিবে। অথবা, কোনো সত্রী গূঢ়পুরুষ সংঘমূখ্যকে এইভাবে জানাইবে—‘অমুখ গ্রামে দরিদ্রকুলজাত অমুখ পুরুষ (জীবিকার জন্য) অন্যত্র চলিয়া গিয়াছে, তাহার স্ত্রী রাজার ভোগের ভোগ্যা, তাহাকে আপনি স্বীকার করিয়া লউন’। সেই স্ত্রী (সংঘমূখ্যদ্বারা) গৃহীত হইলে, পনেরো দিবস পরে সিদ্ধবেশধারী এক দূষ্য সংঘমূখ্যদিগের মধ্যে যাইয়া এইরূপভাবে আক্রন্দন বা চিৎকার করিয়া বলিবে,–‘এই মূখ্যপুরুষ আমার ভার্যা, পুত্রবধু, ভগিনী বা কন্যাকে বলাৎকারে ভোগ করিতেছেন’। যদি সংঘ সেই মূখ্যকে নিগৃহীত করে, তাহা হইলে (বিজিগীষু) রাজা তাঁহাকে স্ববশে আনিয়া অন্যান্য প্রতিকুলচারী মূখ্যদিগের উপর তাঁহাকে উদ্যুক্ত করিবেন। আর যদি সেই মুখ্য সংঘকর্তৃক নিগৃহীত না হন, তাহা হইলে তীক্ষ্ণগণ রাত্রিতে সেই সিদ্ধবেশধারী দূষ্য পুরুষকে হত্যা করিবে। তৎপর অন্যান্য সিদ্ধব্যঞ্জক গূঢ়পুরুষেরা চিৎকার করিয়া বলিবে—‘এই সংঘমূখ্য পুরুষ ব্রহ্মঘাতী এবং তিনি ব্রাহ্মণীর সহিত জারকর্মে রত ছিলেন’। অথবা, কার্তান্তিক বা দৈবজ্ঞের বেশধারী গূঢ়পুরুষ (সংঘমূখ্যগণের) অন্যতমদ্বারা বৃতা (কোনো ব্যক্তির) কন্যাসম্বন্ধে অন্যতম সংঘমূখ্যের নিকট এইভাবে বুঝাইবে—‘অমুক ব্যক্তির কন্যা যাঁহার পত্নী হইবে, তিনি রাজা হইবেন এবং সে-কন্যা যে-পুত্র প্রসব করিবে তিনিও রাজা হইবেন; অতএব, সর্বস্বদানে, বলাৎকারপূর্বক সেই কন্যাকে লাভ কর’। (সেই বোধিত সংঘমূখ্যদ্বারা) যদি সেই কন্যা লব্ধ না হয়, তাহা হইলে পূর্ববরণোকারীপক্ষকে তাহারা তাঁহার বিরুদ্ধে উৎসাহিত করিবে। আর যদি (সেই সংঘমুখ) সেই কন্যাকে লাভ করিতে পারে, তবে (পূর্ববরয়িতা ও পরবর্তী যাচক—এই উভয়ের মধ্যে)—কলহ সিদ্ধ হইবে। অথবা, ভিক্ষুকীবেশধারী স্ত্রী-গুপ্তচর ভার্যাপ্রেমরত কোনো সংঘমূখ্যকে এইরূপ বলিবে—‘অমুক যৌবনদৃপ্ত মূখ্য আপনার ভার্যার প্রতি (কামলোলুপ হইয়া) তাঁহার নিকট আমাকে (দূতীরূপে) পাঠাইয়াছেন। তাঁহার ভয়ে আমি এই পত্র ও আভরণ লইয়া এখানে আসিয়াছি। আপনার ভার্যা নির্দোষা। আপনি গূঢ়ভাবে তাঁহার বিরুদ্ধে প্রতিকারের চেষ্টা করুন (অর্থাৎ তাঁহার বধোপায় নির্ধারণ করুন)। (যতক্ষণ আপনি তাহা না কএন) ততক্ষণ আমিও আপনার নিকট অবস্থান অঙ্গীকার করিব’। এই প্রকার কলহকারণ উপস্থিত হইলে, কিংবা, (উপজাপ ব্যতীত) আপনা হইতেই কলহ উৎপন্ন হইলে, অথবা, তীক্ষ্ণ পুরুষগণদ্বারা কলহ উৎপাদিত হইলে, (বিজিগীষু) রাজা অল্পশক্তি-বিশিষ্ট সংঘমূখ্যকে কোষ ও দণ্ডদ্বারা নিজ বশে আনিয়া তাঁহাকে প্রতিকুলচারী অন্যান্য সংঘমূখ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করিতে নিয়োজিত করিবেন…
================
মহাভারতে ভীষ্ম বলেছিলেন, “গণগুলির মধ্যে লোভ, ক্রোধ ইত্যাদি দেখা দিলে পর সেগুলির অভ্যন্তরীণ একতা ভেঙে যায় এবং এইভাবেই গণের বিনাশ হয়।…” এ ব্যাপারে দেবীপ্রসাদ বলছেন, “…কিন্তু কৌটিল্যের রচনা পড়লে বোঝা যায়, গণসমাজের ওই সহজ-সরল মানুষগুলির মধ্যে লোভ, ক্রোধ ইত্যাদি আপনি-আপনি জাগে না—তা জাগাবার জন্যে রাষ্ট্রশক্তির তরফ থেকে সাধু-বেশধারী গুপ্তঘাতক, সধবা বিধবা ও গণিকা, মদনরসমিশ্রিত মদ্য ইত্যাদি অনেক কিছুই পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হয়।”
তারপর “কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই জাতীয় নীতিগর্হিত নানান উপায়ে গণ বা সংঘের একতা ভাঙবার পর সে-সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে ঠিক কী ব্যবস্থা করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে কৌটিল্য যা বলছেন তা শুধুই চিত্তাকর্ষক নয়, ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বোঝবার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।”–বিশ্লেষণ করা আছে পরের অধ্যায়ে–এরা রাষ্ট্রের দেয়া ‘দাসত্ববৃত্তি’ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
যেখানেই রাষ্ট্রশক্তির উদ্ভব হয়েছে, সেখানেই রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণী চেয়েছে মানুষকে ইতিহাসবিমুখ করতে, তার অতীত জানতে না দিতে। রাষ্ট্র এইসব সাধারণ জনগণকে শাসন করার জন্য ধর্ম নামক আরেকটি হাতিয়ারও তৈরী করেছে। যেখানে রাষ্ট্র সরাসরি পারেনি, সেখানে ধর্মের নামে কৌশলে কাজ হাসিল করেছে, ঝামেলা বাঁধিয়েছে, ধ্বংস করেছে মানুষের অতীত, ঐতিহ্য। উদাহরণ হিসাবে ইসলামের কাবার মূর্তি ধ্বংস, এবং ইসলাম-পূর্ব আরবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সব ধ্বংসের কথা বলা যেতে পারে। বলা যেতে পারে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের চার্বাকদের উপর অত্যাচার এবং চার্বাকদের সব পুঁথিপত্র পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলার কথা। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রশক্তি এবং তার পক্ষের লোকেরা এখনো এরকম আদিবাসী ট্রাইব্যাল সমাজের উপর অত্যাচার চালায়, এদের ধ্বংস করে ফেলতে চায়। মানুষের অতীত জানার যা কিছু নিদর্শন আছে, সবই ধ্বংস করে ফেলতে চায়। অত্যাচার চালানো হচ্ছে পাহাড়ে-সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের উপর, সাঁওতালদের উপর। আগে হত নীরবে। এখন সংখ্যাগুরুদের সমর্থন পেয়ে করছে সরবে। আর এখন আমরা বাঙালী/বাংলাদেশী/সংখ্যাগুরুরা ভুলে যাচ্ছি–আমরাও এককালে ওরকম সংখ্যালঘু ছিলাম, আমরাও এককালে আদিবাসী, সাঁওতাল ছিলাম…ওরা আমাদেরই পূর্বপ্রজন্ম…
Leave a Reply