লিখেছেন বোকা বলাকা
সতী কুন্তীর জারজ সন্তান যুধিষ্ঠির। তিনি কখনও মিথ্যে বলতেন না। এজন্য তার নাম হয় ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্য তাঁর বিপক্ষে ছিলেন। কোনো অপ্রিয় সংবাদ শ্রবণ করলে অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্য অস্ত্র পরিত্যাগ করতেন এবং কেবলমাত্র তখনই তাঁকে বধ করা সম্ভব, অন্যথায় নয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন কোনভাবেই দ্রোনাচার্যকে পরাস্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন তাঁকে মিথ্যে অপ্রিয় বাণী শোনানো হল। আর সেটি হল: তাঁর সন্তান অশ্বথামা নিহত হয়েছেন।
কিন্তু একথা দ্রোনাচার্য বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাই তিনি অস্ত্র পরিত্যাগ করলেন না। তিনি বললেন, একমাত্র যুধিষ্ঠির ছাড়া অন্য কারও কথা তিনি বিশ্বাস করেন না। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হল যুধিষ্ঠিরকে দিয়েই এই মিথ্যে কথাটা বলানো হবে। কিন্তু যুধিষ্ঠির হলেন ধর্মরাজ, তিনি তো মিথ্যে বলবেন না। সামান্য একটা যুদ্ধের জন্য তিনি মিথ্যে বলে নরকবাস করতে রাজী নন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুরোধে ও মেজোভ্রাতা ভীমের তীর্যকবানে অবশেষে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রোণকে বলেছিলেন যে, অশ্বথামা হত ইতি গজঃ। “ইতি গজঃ” এই কথাটি তিনি নাকি নিম্নস্বরে বলেছিলেন যাতে অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্য সেটা শুনতে না পান। কথাটির অর্থ এই যে অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে, সেটি দ্রোনাচার্যের পুত্র অশ্বথামা নয়, অশ্বথামা নামের একটি হাতী।
যুধিষ্ঠির মিথ্যে বলেন নি, কিন্তু ছলনা করেছেন। না ঠিক হল না, তিনি আসলে ছলনা করেন নি, তাঁকে দিয়ে ছলনা করানো হয়েছে। কিন্তু যুধিষ্ঠির যে ওঁর সঙ্গে এরকমভাবে ছলনা করবেন, সেটা দ্রোণের পক্ষে চিন্তা করাও অসম্ভব ছিল। তাই তিনি অস্ত্রত্যাগ করলেন আর সেই সুযোগে ধৃষ্টদ্যুম্ন পিতৃ-অপমানের পরিশোধ নিতে দ্রোণের শিরশ্ছেদ করলেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তিনি নাকি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক। তিনি কী করে একজন সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে মিথ্যে বা ছলনার আশ্রয় নিলেন? তিনি তো ত্রিভূবনের মালিক। তিনি ইচ্ছে করলেই এক দ্রোনাচার্যই নয়, গোটা বিশ্বটা তছনছ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তিনি তা করেননি। কেন? তিনি কি নিজ ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন? জানা যায় যে এই মিথ্যে বলা বা ছলনার কারণে যুধিষ্ঠিরকে নরক দর্শন করতে হয়েছিল। এটাই নাকি তাঁর শাস্তি। যদি তা-ই হয়, তাহলো তো এই শাস্তিটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সাহেবেরই পাওয়া উচিত ছিল।
Leave a Reply