লিখেছেন শুভজিৎ ভৌমিক (Bhowmik Da)
ফেসবুকে ইদানিং বেশ কিছু অশ্লীল পেইজ খোলা হচ্ছে, যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু পর্দা তথা বস্তা প্রথা সম্পর্কে নারীদের সচেতন (!) করা। সমাজের কল্যাণার্থে, বলাই বাহুল্য, এই মহান দায়িত্বটি নিয়েছেন কিছু ধার্মিক ব্যক্তি।
এখন, মোকসুদুল মোমেনীন খতম দিয়ে লিঙ্গের অগ্রভাগে ঢেলা চেপে ধরে পদব্রজে চল্লিশ কদম যাদের অভ্যাস, তাদের আউটপুট কেমন হতে পারে? উত্তর পাওয়া যায় সেসব পেইজের নামে:
১. ওই ছেড়ি, ওড়না গলায় না দিয়া বুকে দে, কামে দিবো
২. উত্ত্যক্ত হওয়া বেহায়া মেয়েদের মৌলিক অধিকার, আসুন তাদের অধিকার সংরক্ষণ করি
৩. ওই মাগিরা, ওড়না ক্যান বুকে দিতে হয় জানোস?
৪. মেয়েরা গৃহপালিত প্রাণী, কারণ এদের ২টি হাত, ২টি পা এবং ১টি মাথা আছে
… ইত্যাদি।
পেইজগুলোর মূল কার্যক্রম মেয়েদের ব্যক্তিগত ছবি আপলোড করা, যেখানে মেয়েটি হয়তো স্বাধীন কোনও পোশাক পরেছে। এরপর শুরু হয় সেসব মেয়েদের উদ্দেশ্য করে গালিবাজির মহড়া এবং বস্তা পরিধান করার জন্য তাদের প্রতি বিনামূল্যে উপদেশ বিতরণ। চলে দৈনিক রাস্তাঘাটে দেখা মেয়েদের পোশাক এবং দেহের অনাবৃত অংশের অশ্লীল বর্ণনা এবং সেই নিয়ে ধার্মিকদের আক্ষেপ।
আশ্চর্যের ব্যাপার, এসব পেইজের সদস্য সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি। কোনও কোনও পেইজে সংখ্যাটা ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার পর্যন্ত গেছে। নিজেদের ফ্রেন্ডলিস্ট চেক করলে দেখা যায়, আমাদেরই কোনও না কোনও ফেসবুক বন্ধু এসব পেইজ পছন্দ করেছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন। স্রোতের বিপরীতে মূমুর্ষু মানবতাকে নিয়ে সাঁতার কাটার জন্য ফেসবুকের কিছু মুক্তমনা এসব পেইজে গিয়ে পর্দার বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। লাভ হয়নি। ব্যক্তি আক্রমণ করে, গালাগালি করে, ভোগবাদী ট্যাগ লাগিয়ে তাদের ব্লক করা হয়েছে পেইজ থেকে এবং ক্রমাগত তাদের বিরুদ্ধে আসতে থেকেছে হুমকি।
এসব পেইজ বন্ধ করার জন্য এবং এসব বিকৃত রুচির মানুষের ব্যাপারে সকলকে সচেতন করার জন্য খোলা হয় “ফেসবুকের সকল নারীবিদ্বেষী পেইজ বন্ধ করা হোক” ইত্যাদি পেইজ। এই প্রচেষ্টা সফল হয়। বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়ে রিপোর্ট করার ফলে বন্ধ হয়ে যায় ১৬ হাজার সদস্যের শীর্ষ নারীবিদ্বেষী পেইজ “অই ছেড়ি ওড়না গলায় না দিয়া বুকে দে, কামে দিবো।”
পেইজে মেয়েদের ব্যক্তিগত ছবি দেখে এবং তাদের সম্পর্কে অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ করে হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত ধার্মিকদের অশালীনতা চর্চার দীর্ঘদিনের রাস্তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তেজনায় খাড়া হয়ে যায় ধর্মীয় লিঙ্গ। জিহাদি জোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা মুক্তচিন্তার প্রসারে কার্যরত পেইজগুলোর সদস্যদের ওপর। “যেহেতু তারা পর্দার বিরুদ্ধে কথা বলে, তাই তারা মুর্তাদ, নাস্তিক” ইত্যাদি ওয়ালপোস্ট জাতীয় মলত্যাগে দুর্গন্ধময় করে তোলে ইহুদি তরুণের বানানো খোমাকিতাব। তাই দেখে অনুপ্রাণিত হয় আরও অনেক ধার্মিক। ধর্মের স্বরূপ প্রকাশ পেতে থাকে ধীরে ধীরে। হুমকির জোয়ারে ভেসে যায় মুক্তচিন্তকদের ফেসবুক মেসেজ ইনবক্স।
আমার ফেসবুক মেসেজ ইনবক্সে এই ধার্মিক ভাইদের পাঠানো কিছু হুমকির স্ক্রিনশট (সর্বমোট ২৬ খানা) দেখে ধর্মবিশ্বাসীদের মানসপট সম্পর্কে কিছুটা করে নিতে পারবেন।
সবগুলিই অতি অবশ্যপাঠ্য। কারণ একটির চেয়ে আরেকটি মধুরতর।
Leave a Reply