তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন অনেক প্রশ্নের উত্তর পায় না, তখন সেই অজ্ঞতাকে ঢাকতে গিয়ে আরো বেশি বেশি আস্তিক সাজে। আবার আরজ আলী মাতুব্বরের মতো স্বশিক্ষিত মানুষেরা কমনসেন্স দিয়ে ধর্মীয় কাহিনি বিচার করে নাস্তিক হয়ে যায়!
২) আস্তিক সাজাটা সহজ, কিন্তু কষ্ট করে সেই সব অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করাটা কঠিন। যারা কষ্ট করে উত্তর খুঁজে বেড়ায়, তারাই দিন দিন উন্নত হয়। আর আমাদের মত মুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানরা “আল্যায় সব জানে” বা “কোরানে সব আছে” মনে করে আর আজান দিলে কানে বালিশ চেপে পাশ ফিরে ঘুমায়।
৩) বিজ্ঞান অনেক প্রশ্নের উত্তর জানে না। তার মানে এই না যে “কেউ একজন” আছে। বিজ্ঞান কালকে অনেক কিছু জানত না, কিন্তু আজকে গবেষণা অনেক কিছু জেনে গেছে। আগামিকাল আরো অনেক কিছু জানবে। এভাবে দিন দিন তার জানার পরিধি বাড়বে। বিজ্ঞান জিনিসটাই এমন। আর বিজ্ঞান যদি কোনোদিন এই কেউ একজনের সন্ধান পায়, তাহলে নিশ্চিত থাকেন, তার সাথে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত “একজনের” কোনো মিল থাকবে না।
৪) বিজ্ঞান নাকি দিন দিন চেঞ্জ হয়, কালকে এক কথা বলে, আবার পরের দিন আরেক কথা বলে–এ রকম অভিযোগ অনেক আস্তিকের। আর কোরানের কথা কখনো চেঞ্জ হবে না–এই যুক্তি দিয়ে নাস্তিকদের কুপোকাত করে ফেলে।
এই বিষয়ে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি–আমেরিকাতে ছারপোকা মারার জন্যে এক ধরনের আটার মত গুড়া ওষুধ পাওয়া যায়। সেটা ঘরের চারকোনে দিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে বের হয়ে যেতে হয়, ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছারপোকাসহ আর সব ধরনের পোকা হাওয়া হয়ে যায়। কিছুদিন আগে ওষুধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয় নাই। পরে যেখান থেকে কেনা হয়েছে, তাদেরকে গিয়ে ধরেছি যে ভেজাল/নকল ওষুধ দিছে। তারা যা বলল, তা শুনে চক্ষু চড়কগাছ–পোকামাকড়ের সহ্য ক্ষমতে বেড়ে গেছে, তাই আরো কয়েক ডোজ দিতে হবে!
তার কিছুদিন পরেই পেপারে খবর এলো–“যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ছারপোকাদের কীটনাশক সহ্য করার ক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিনসিন্যাটি এবং মিশিগানে ছারপোকার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা দেখেছেন এদের ধ্বংস করতে হলে আগে যে কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো এখন তার শক্তি আগের চেয়ে একহাজার গুণ বেশি দরকার হয়।” (বিবিসি, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬)
এবার বুঝতে পারছেন কেন বিজ্ঞানের কিছু কিছু ব্যাপার চেঞ্জ হয়?
৫) ইহুদি ধর্ম মিথ্যা, নাকি ইহুদি ধর্মের কিছু বিধিবিধান ও ধর্মীয় কাহিনী এদিক-ওদিক করে খ্রিষ্টান ধর্ম বানানো হয়েছে? খ্রিষ্টান ধর্ম মিথ্যা, নাকি ইহুদি আর খ্রিষ্টান ধর্মের কিছু বিধিবিধান ও ধর্মীয় কাহিনী এদিক-ওদিক করে ইসলাম ধর্ম বানানো হয়েছে?
৬) আল্যার মতে ইসা নবী সত্য। আবার ইসা নবীর মতে খ্রিষ্টান ধর্ম সত্য। তাহলে খ্রিষ্টান ধর্ম মিথ্যা হলে আল্যাও মিথ্যা হয়ে যায় না?
৭) তিনটি আব্রাহামিক ধর্মই (ইহুদিধর্ম, খ্রিষ্টানধর্ম, ইসলামধর্ম) আদম-হাওয়ার কাহিনি বিশ্বাস করে। প্রথম মানব-মানবী আদম-হাওয়ার দুই ছেলে হাবিল-কাবিল। কাবিল হাবিলকে খুন করল। হাবিলকে হত্যা করলে আল্যায় কাবিলরে অভিশাপ দেয়–ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত এলাকায় আর ফসলাদি হবে না। ফলে কাবিল সেই দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে কাবিল বিয়ে করে এবং ছেলের জন্ম দেয়। কিন্তু কাকে বিয়ে করল, কার গর্ভে ছেলে জন্ম নিল? তাহলে কি ঐ ভিনদেশী জনবসতি ছিল?
এইবার বুঝতে পারছেন–“বিসমিল্যায় গলদ” জিনিসটা কী?
Leave a Reply