প্রভাসতীর্থে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে যদুবংশ ধ্বংস হলো। তারপর বলরাম দেহত্যাগ করলে কৃষ্ণ একা বনের মধ্যে বসে থাকে। হরিণ ভেবে এক ব্যাধ তীর ছুঁড়লে সেই তীর এসে লাগে কৃষ্ণের পায়ে। কৃষ্ণ মারা যায়। পরে অর্জুন এসে কৃষ্ণের লাশ উদ্ধার করে। তারপর?…
কৃষ্ণের শরীর পার্থ কোলেতে করিয়া।
বিলাপ করেন বহু কান্দিয়া কান্দিয়া॥…
শিরেতে হানিয়া ঘাত কান্দিয়া অধীর।
ভূমে গড়াগড়ি যান পার্থ মহাবীর।।…
তারপর অর্জুনের সারথি দারুক অর্জুনকে সান্ত্বনা দেয় এবং না কেঁদে লাশের সৎকার করা উচিত–সেটা অর্জুনকে মনে করিয়ে দেয়। তারপর?…
চন্দনের কাষ্ঠ তথা করি রাশি রাশি।
জ্বালিলেন চিতা-অগ্নি গগন পরশি॥
দেবকী রোহিণী বসুদেবের সহিত।
অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করিল হরষিত॥
হরষিত মানে কৃষ্ণ। অর্থাত যদুবংশের অন্যান্যদের সাথে কৃষ্ণের লাশও চিতায় তোলা হয়। অর্জুন সবার মুখাগ্নি করে…
সবাকার অগ্নিকার্য্য করি সমাপন।
বিধিমতে করিলেন শ্রাদ্ধাদি তর্পণ॥
শ্রাদ্ধ-তর্পন ইত্যাদি বিধান পালন করে। অর্জুন কৃষ্ণের বিধবা স্ত্রীদের নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে যাওয়ার পরে দ্বারকা নগরী সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যায়–
কৃষ্ণের রমণীগণে লইয়া সংহতি।
গেলেন হস্তিনাপথে পার্থ মহামতি॥
দ্বারকা গ্রাসিল আসি সমুদ্রের জল।
প্রভুর মন্দির মাত্র জাগয়ে কেবল॥
অনেক হিন্দু মনে করেন কৃষ্ণ মারা যায় নাই, বা তার মৃতদেহ পাওয়া যায় নাই। কৃষ্ণ নাকি স্বশরীরে বিষ্ণুলোকে চলে যায়। ভুল। বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন মহাভারতের মুষলপর্বের “অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণাদির ঔর্দ্ধদেহিক কার্য্য সম্পাদন” অধ্যায়টি।
আর একটি কথা–কৃষ্ণ বলে যদি কেউ আসলেই থেকে থাকে তো সে সাধারণ একজন মানুষ ছিল। হয়তো তার কিছু ম্যাজিক্যাল পাওয়ার ছিল। তার মানে এই না যে সে ভগবান। গল্প বলার সময় আমরা সবাই কমবেশি বাড়িয়ে বলি। ধর্মীয় ফিগার হলে তার চরিত্রে কিছু অলৌকিকতা আরোপ করি। কিন্তু মানুষের অলৌকিক কোনো ক্ষমতা নেই। যা থাকতে পারে, সেটা হলো কিছু ম্যাজিক দেখানোর ক্ষমতা। আজও আমরা ম্যাজিসিয়ানদের ম্যাজিক দেখি, কিন্তু তারা কিভাবে ওসব করে সেটা আমাদের জানা নেই বলে অভিভূত হই। এদের মধ্যে যারা ভণ্ড, তারা সেই ম্যাজিক দেখানোর ক্ষমতাটাকে ধর্মীয় লেবাস লাগিয়ে ধর্মগুরু সেজে মানুষকে ধোকা দেয়। আর এই কাজে তাদেরকে সাহায্য করি আমরা সাধারণ মানুষরাই, যারা তাদের ওই ম্যাজিকের কাহিনী ধরতে পারি না।
আবারও বলছি, মানুষের অলৌকিক ক্ষমতা বলে কিছু নেই। আছে শুধু কিছু ম্যাজিক দেখানোর ক্ষমতা। তার মানে এই না যে তাদেরকে ধর্মীয় ভাবে বিশ্বাস করে আমাদেরকে ধোকা দেয়ার সুযোগ তৈরী করে দেব।
Leave a Reply