(২:২৭৫) যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে তারা বলেছে: ক্রয় বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত। অথচ আল্লাহ্ তাআলা ক্রয় বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার ব্যাপার আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
ইব্নে কাসিরের বর্ণনায়:
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৪৭। মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কতকগুলো লোককে দেখেন যে, তাদের পেট বড় বড় ঘরের মত। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ এই লোক গুলো কে?’ বলা হয় এর সুদখোর।’
সহীহ বুখারীর একটা হাদীস উল্লেখ করে ইব্নে কাসীর আরও লিখেছেন:
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৪৭। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তাদের পেট সর্পে পরিপূর্ণ ছিল যা বাহির হতে দেখা যাচ্ছিল। সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে সুদীর্ঘ নিদ্রার হাদীসে হযরত সুমরা’ বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘যখন আমি লাল রং বিশিষ্ট একটি নদীতে পৌঁছি যার পানি রক্তের মত লাল ছিল, তখন আমি দেখি যে, কয়েকটি লোক অতি কষ্টে নদীর তীরে আসছে। কিন্তু তীরে একজন ফেরেশতা বহু পাথর জমা করে বসে আছেন এবং তাদের মুখ ফেড়ে এক একটি পাথর ভরে দিচ্ছেন। তারপর সে পলায়ন করছে। অতঃপর পুনরায় এই রূপই হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে, তারা সুদখোরের দল। তাদের এই শাস্তির কারণ এই যে, তারা বলতো সুদ ব্যবসায়ের মতই। তাদের এই প্রতিবাদ ছিল শরীয়তের উপর এবং আল্লাহ তা’আলার নির্দেশের উপর। তারা সুদকে ক্রয় বিক্রয়ের মত হালাল মনে করতো।
বাংলাদেশ ইসলামীক ফাউন্ডেশন, সুনানু ইবনে মাজাহ্, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৩২৩, হাদীস ২২৭৩। আবু বকর ইবন আবু শায়বা (র)…আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি এমন এক কাওমের পাশ দিয়ে গমন করি, যাদের পেট ছিল ঘরের মত, যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের সাপ বাইরে থেকে যাচ্ছিল আমি জিজ্ঞাসা করি, জিবরাঈল, এরা কারা? তিনি বলেনঃ এরা সূদখোর।
বাংলাদেশ ইসলামীক ফাউন্ডেশন, সুনানু ইবনে মাজাহ্, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৩২৩, হাদীস ২২৭৪। ‘আবদুল্লাহ ইবন সাঈদ (র)…আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সূদ হলো সত্তর প্রকারের পাপের সমষ্টি। তার সবচেয়ে সহজটি হলো আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা।
(২:২৭৬) আল্লাহ্ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান‑খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৫২। আল্লাহ তা’আলা বলেন যে তিনি সুদকে সমূলে ধ্বংস করেন। অর্থাৎ হয় ওটাকেই সরাসরি নষ্ট করেন, না হয় ওর বরকত নষ্ট করে থাকেন। দুনিয়াতেও ওটা ধবংসের কারণ হয় এবং পরকালেও শাস্তির কারণ হয়।
(২:২৭৮) হে ঈমানদারগন, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
(২:২৭৯) অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মুলধন পেয়ে যাবে তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৫৫। সাকীফ গোত্রের বানু আমর বিন উমায়ের ও বানু মাখযুম গোত্রের বানু মুগীরার সম্বন্ধে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অজ্ঞতার যুগে তাদের মধ্যে সুদের কারবার ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর বানু আমর বানু মুগীরার নিকট সুদ চাইতে থাকে। তারা বলেঃ ইসলাম গ্রহণের পর আমরা তা দিতে পারি না। অবশেষে তাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। মক্কার প্রতিনিধি হযরত আত্তাব বিন উসায়েদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এই সম্বন্ধে পত্র লিখেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এটা লিখে পাঠিয়ে দেন এবং তাদের জন্য সুদ গ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বানু আমর তাওবা করতঃ তাদের সুদ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়। এই আয়াতে ঐ লোকদের ভীষণভাবে ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে যারা সুদের অবৈধতা জেনে নেয়া সত্ত্বেও ওর উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘কিয়ামতের দিন সুদখোরকে বলা হবে—‘তোমরা অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।‘ তিনি বলেনঃ ‘যে সময়ে যিনি ইমাম থাকবেন তাঁর জন্যে এটা অবশ্য কর্তব্য যে, যারা সুদ পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে তাওবা করাবেন। যদি তারা তাওবা না করে তবে তিনি তাদেরকে হত্যা করাবেন।’ হযরত হাসান বসরী (রঃ) ও হযরত ইবনে সীরীনেরও (রঃ) এটাই উক্তি।
(৩:১৩০) হে ঈমানদারগণ। তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার।
(৪:১৬১) আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায়ভাবে। বস্তুতঃ আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।
বাংলাদেশ ইসলামীক ফাউন্ডেশন, বুখারী শরীফ, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ২১, হাদীস ১৯৫০। আবূ নুআঈম (র.)…আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেওয়া হত, আমরা দু’সা’ এক সা’—এর বিনিময়ে বিক্রি করতাম। নবী (সা.) বললেন, এক সা’ এর পরিবর্তে দু’সা’ এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’দিরহাম বিক্রি করবে না।
বাংলাদেশ ইসলামীক ফাউন্ডেশন, বুখারী শরীফ, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৬৪, হাদীস ২০৩৯। আবদুল্লাহ্ ইব্ন ইউসুফ (র.)…মালিক ইব্ন আওস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একবার এক দীনারের বিনিময় সার্ফ (১) এর জন্য লোক সন্ধান করছিলেন। তখন তালহা ইব্ন উবায়দুল্লাহ্ (রা.) আমাকে ডাক দিলেন। আমরা বিনিময় দ্রব্যের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করতে থাকলাম। অবশেষে তিনি আমার সঙ্গে সার্ফ করতে রাযী হলেন এবং আমার থেকে স্বর্ণ নিয়ে তার হাতে নাড়া-চাড়া করতে করতে বললেন, আমার খাযাঞ্জী গাবা (নামক স্থানে) হতে না আসা পর্যন্ত (আমার জিনিস পেতে) দেরী করতে হবে। ঐ সময়ে উমর (র.) আমাদের কথা-বার্তা শুনছিলেন। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ্র কসম! তার জিনিষ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তুমি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, নগদ নগদ না হলে স্বর্ণের বদলে স্বর্ণের বিক্রয় রিবা (সূদ) হবে। নগদ নগদ ছাড়া গমের বদলে গমের বিক্রয় রিবা হবে। নগদ নগদ ছাড়া যবের বদলে যবের বিক্রয় রিবা হবে। নগদ নগদ না হলে খেজুরের বদলে খেজুরের বিক্রয় রিবা হবে।
পাদটীকা (১): স্বর্ণ-রৌপ্যের পরস্পর ক্রয়-বিক্রয়কে সার্ফ বলে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আবু দাউদ শরীফ, চতুর্থ খন্ড, পৃঃ ৩৫৫, হাদীস ৩৩১৫। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসলামা…’উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সোনার বিনিময়ে সোনা বিক্রি করা সূদের অন্তর্ভূক্ত, কিন্তু যদি তা হাতে-হাতে লেনদেন হয়; গমের বিনিময়ে গম বিক্রি করাও সূদ, তবে যদি তা হাতে-হাতে হয়; খেজুরের বিনিময়ে খজুর বিক্রি করাও সুদ, কিন্তু যখন তা হাতে-হাতে হবে, এবং যবের বিনিময়ে যব বিক্রি করাও সূদ তবে যখন তা হাতে-হাতে হবে, তখন সূদ হবে না। (১)
পাদটীকা (১): একই ধরণের জিনিস হলে এর একটির বিনিময়ে অন্যটি ধার নেওয়া, ক্রয়-বিক্রয় ‘রেবা’ বা সূদের অন্তর্ভূক্ত। জিনিস একই ধরণের হলে তা নগদ ক্রয়-বিক্রয় করা উচিত, অর্থাৎ একটি জিনিস নিয়ে ঐ ধরণের অন্য জিনিস তৎখণাৎ আদায় করতে হবে। অবশ্য যদি কেউ সেই জিনিসের মূল্য দিতে চায়, তবে তা বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে (অনুবাদক)
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৪৯। ক্রয়-বিক্রয়ের এই পদ্ধতিগুলোকে শরীয়তে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যেন সুদের মূল কর্তিত হয়। এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ বর্ণনায় আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ বলেছেন এক রকম এবং কেউ বলেছেন অন্য রকম। বাস্তব কথা এই যে, এটা একটা জটিল বিষয়। এমনকি হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, তিনটি জিজ্ঞাস্য বিষয় পূর্ণভাবে আমার বোধগম্য হয়নি। বিষয় তিনটি হচ্ছেঃ দাদার উত্তরাধিকার, পিতা-পুত্রহীনদের উত্তরাধিকার এবং সুদের অবস্থাগুলো…
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে প্রদেয় অতিরিক্ত পণ্য বা দ্রব্যই হ’ল রিবা। ইমাম আবুবকর আল-জাসসাস ‘আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, রিবা দু’রকম। একটি ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে অপরটি ক্রয়-বিক্রয় ছাড়া। দ্বিতীয় প্রকারই জাহিলী যুগের রিবা। তিনি আরও বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে ঋণ গ্রহণের সময়ে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে মূলধনের উপর একটি নির্ধারিত পরিমাণ অতিরিক্তসহ আসল মূলধন ঋণগ্রহীতাকে আদায় করতে হবে।
প্রফেসর শাহ্ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, কাজলা, রাজশাহী, ফেব্রুয়ারী ২০০৯, পৃঃ ৬। প্রখাত তাফসীরবিদ ইবনু জারীর বলেন, ‘জাহেলী যুগে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ রিবা হ’ল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা’। আরবরা তাই-ই করত এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সূদ বাড়িয়ে দেওয়ার শর্তে পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।
(২:২৪৫) এমন কে আছ যে আল্লাহ্কে করজ দেবে উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ্ তাকে দ্বিগুণ‑বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহ্ই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৬৮৫। অতঃপর বিশ্বপ্রভু তাঁর পথে খরচ করার উৎসাহ দিচ্ছেন। এরূপ উৎসাহ তিনি স্থানে স্থানে দিয়েছেন। হাদীস-ই-নযুলেও রয়েছেঃ ‘কে এমন আছে যে, সেই আল্লাহ্কে ঋণ প্রদান করবে যিনি না দরিদ্র, না অত্যাচারী?’…(২:২৪৫) এই আয়াতটি শুনে হযরত আবুদ দাহ্দাহ আনসারী (রাঃ) বলেছিলেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ‘আল্লাহ্ কি আমাদের নিকট ঋণ চাচ্ছেন?’ তিনি বলেন ‘হাঁ’। হযরত আবুদ দাহ্দাহ্ তখন বললেনঃ ‘আমাকে আপনার হাত খানা দিন।’ অতঃপর তিনি তাঁর হাতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হাত নিয়ে বলেনঃ ‘আমি আমার ছয়শো খেজুর বৃক্ষ বিশিষ্ট আমার সর্বশ্রেষ্ঠ মহান সম্মানিত প্রভুকে ঋণ প্রদান করলাম।’ সেখান হতে সরাসরি তিনি বাগানে আগমন করেন এবং স্ত্রীকে ডাক দেনঃ ‘হে উম্মুদ্দাহ্দাহ্!’ স্ত্রী উত্তরে বলেনঃ আমি উপস্থিত রয়েছি।’ তখন তিনি তাঁকে বলেনঃ ‘তুমি বেরিয়ে এসো। আমি এই বাগানটি আমার মহা সম্মানিত প্রভুকে ঋণ দিয়েছি (তাফসির-ই-ইবনে আবি হাতীম)।’ ‘করয-ই-হাসানা’-এর ভাবার্থ আল্লাহ তা’আলার পথেও খরচ হবে, সন্তানদের জন্যেও খরচ হবে এবং আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতাও বর্ণনা করা হবে।
(৬৪:১৭) যদি তোমরা আল্লাহ্কে উত্তম ঋন দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ গুণগ্রাহী, সহনশীল।
(২:২৬১) যারা আল্লাহ্র রাস্তায় স্বীয় ধন‑সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যকটি শীষে একশ’ করে দানা থাকে। আল্লাহ্ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
তাফসীর ইব্নে কাসীর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭২৬-৭২৭। … মুসনাদে-ই-আহমাদের আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, একটি লোক লাগাম বিশিষ্ট একটি উষ্ট্রী দান করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘লোকটি কিয়ামতের দিন সাত কোটি লাগাম বিশিষ্ট উষ্ট্রী প্রাপ্ত হবে।’
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তিরমিযী শরীফ, তৃতীয় খন্ড, পৃঃ ৫২০, হাদীস ১২৪২। কুতায়বা (র.)…জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি দাস নবী (সা)-এর কাছে তাঁর হিজরতের উপর বায়আত হয়। সে যে একজন দাস এই কথা নবী (সা) বুঝতে পারেন নি। অনন্তর এই দাসটির মালিক এসে এটিকে নিয়ে যেতে চাইল। তখন নবী (সা) তাকে বলেন, এটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও। অনন্তর তিনি এটিকে দুজন কাল গোলামের বিনিময়ে কিনে নেন। এরপর থেকে আর তিনি, গোলাম কি—না, এই কথা জিজ্ঞাসা না করে কাউকে বায়আত করতেন না।
এই বিষয়ে আনাস (রা.) থেকেও হাদীছ বর্ণিত আছে। জাবির (রা.) বর্ণিত হাদীছটি হাসান-সাহীহ।
এতদনুসারে আলিমগণের আমল রয়েছে যে, দস্ত বদস্ত (নগদ) হলে দুজন দাসের বিনিময়ে একজন দাস ক্রয়ে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু বাকীতে হলে তাদের মতবিরোধ রয়েছে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আবু দাউদ শরীফ, চতুর্থ খন্ড, পৃঃ ৩৫৯, হাদীস ৩৩২৪। হাফ্স ইব্ন ‘উমার (র.)…’আবদুল্লাহ্ ইব্ন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে যোদ্ধা-বাহিনী তৈরীর জন্য নির্দেশ দেন। এ সময় উট শেষ হয়ে গেলে তিনি তাকে সাদাকার উট আসার শর্তে উট গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। তখন তিনি দু’টি উট প্রদানের শর্তে সৈন্যদের জন্য একটি উট গ্রহণ করতে থাকেন।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আবু দাউদ শরীফ, চতুর্থ খন্ড, পৃঃ ৩৪৮, হাদীস ৩২৯৮। মুহাম্মদ ইব্ন (র.)…আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন কেউ-ই সূদ খাওয়া ছাড়া থাকবে না। আর যদিও কেউ সূদ না খায়, তবে সে এর প্রভাব থেকে বাঁচতে পারবে না।
ইব্ন ‘ঈসা বলেনঃ (যদি কেউ সূদ নাও খায়) তবু সে সূদের ধুলা ময়লা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। (১)
পাদটীকা (১). বর্তমান যুগের ব্যবসা, বাণিজ্য, লেন-দেন, কাজ-কার-বার এমনকি দেশের অর্থনৈতিক উন্নত ও অগ্রগতির জন্য যে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যায়, তা সূদভিত্তিক। এই ঋণের সাহায্যে দেশে যে শিল্প, কল-কার-খানা গড়ে তোলা হয় এবং সেখানে যা কিছু উৎপন্ন হয়, সবই সূদের সাথে সম্পৃক্ত। এ দৃষ্টিতে বর্তমানে কেউ-ই সূদের প্রভাব মুক্ত নয়। (অনুবাদক)
Leave a Reply