সেই ছোট বেলায় হুমায়ূন আহমেদের, খুব সম্ভবত, একটা লেখা পড়ে জেনেছিলাম, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রেমিক-প্রেমিকাদের হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। ফেসবুকেও মাঝে মাঝে এরকম একটা ছবি দেখি—প্রেমিক-প্রেমিকা হাত ধরাধরি করে বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে। অন্যতম প্রিয় একটি ছবি যা আজও মনে গেঁথে আছে। আচ্ছা, ওরা কি প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল? ভাই-বোনও তো হতে পারে। তবুও বাঙালী মেণ্টালিটি—জুটি দেখলেই প্রেমিক-প্রেমিকা ধরে নেয়াই যেন আমাদের কাজ।
আমেরিকাতে এসে মনে হয়েছে—প্রেমিক-প্রেমিকাদের চুমু খাওয়ার দৃশ্য আরো বেশি সুন্দর।
হিংসা লাগে না? লাগে। সেই বাঙালী মেণ্টালিটি! বিশেষ করে বোরখাওয়ালীর সাথে যখন আর প্রেম-ভালোবাসা নেই, একা; সো, বুঝতেই পারছেন। (বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না।) কিন্তু নিজে পারছি না, তাই বলে অন্যরা যখন কারো ক্ষতি করছে না, তখন কোনো যুক্তিতেই আমি কাউকে চুমু খেতে বাধা দিতে পারি না।
যারা বাধা দেয় বা দিতে চায়, তারা কোন যুক্তিতে এটা করে? এরা তাহলে কাজ চালায় কিভাবে? হাত মারে শুধু? আরে হাত-মারাও তো ইসলাম হারাম! তাহলে মেয়েরা যে পরিবারের লোকজনদের দ্বারা যৌন-নির্যাতনের শিকার হয়, সেগুলা কি এরাই করে?!
ইসলামে প্রেম-ভালোবাসাও হারাম। আরাম শুধু শাদীতে। প্রেম করবে কিভাবে! মেয়েদের তো ঘর থেকে বের হওয়াই নিষেধ। যদিও বা বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সাথে অবশ্যই প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে না এমন কেউ, যেমন পিতা, ভাই, সন্তান বা স্বামীকে সাথে থাকতে হবে। আর বের হতে হবে সর্বাঙ্গ ঢেকে।
এরকম ইসলামকে সুদে দিতে চান? না না, নাস্তিক হতে হবে না। ইসলামকে সুদে দেওয়া খুবই সহজ। আরো সহজ করে বললে, ইসলাম এমনি এমনিই সোদা খায়—বিয়ে না করে প্রেম করেন, ইসলাম সোদা খাবে; সঙ্গীকে চুমু খান, ইসলাম সোদা খাবে; সেএণ্ডক্স করেন, ইসলাম সোদা খাবে; গান করেন, ইসলাম সোদা খাবে; নাচ করেন, ইসলাম সোদা খাবে; বাদ্যযন্ত্র বাজান, ইসলাম সোদা খাবে; আর্ট করেন, ইসলাম সোদা খাবে; কবিতা লেখেন, ইসলাম সোদা খাবে; মেয়ে হয়ে একা বাইরে বের হন, ইসলাম সোদা খাবে; বোরখা পরবেন না, ইসলাম সোদা খাবে; জিন্স পরবেন, ইসলাম সোদা খাবে; মাদ্রাসায় পড়বেন না, ইসলাম সোদা খাবে; ছবি তুলেন, ইসলাম সোদা খাবে; মোট কথা হলো—শরিয়া আইনের বাইরে যান, ইসলাম সোদা খাবে।
বাতাসে চুম্বন দিলি ধরতে পারি নাই—সেই কবে নগর বাউল জেমস গেয়েছিলেন—আকাশটা যে বদলায়/গোধূলি সিঁদুর ছড়ায়/তোর চুম্বন পড়ল আকাশের গায়… আর কত! এবার না হয় চুম্বনটা ভালোবাসার মানুষটার ঠোঁটেই পড়ুক।
কবি বলেছিলেন, সবচেয়ে সুন্দর আমাদের এই বেঁচে থাকা… কিন্তু আমি মনে করি, সবচেয় সুন্দর হলো ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষ নেই? বুঝতেই যখন পারছেন ভালোবাসার একটা মানুষ দরকার, তার পরেও যদি না থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার কিছু না কিছু সমস্যা আছে। অতি সত্ত্বর মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনুন, দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করুন, অন্যদের হিংসা না করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে খুঁজে বের করুন… কোথাও কেউ নিশ্চয়ই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
বিঃদ্রঃ যাদের চুমু খাওয়ার কেউ নাই, তাদের হাজরে আসওয়াদ আছে।
Leave a Reply