সভ্যতা যাচাইয়ের অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে সংখ্যালঘুদের সাথে সংখ্যাগুরুদের আচার-আচরণটাকে উপরের দিকে রাখি। তারপর পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী…
২) বাথরুম-টয়লেট ব্যবহারের ধরণ দিয়ে পরিবেশ-চরিত্র-রুচি–অনেকাংশেই নির্ণয় করা সম্ভব।
৩) ছোটবেলা মাদ্রাসায় পরীক্ষাচলাকালীন সময়ে একবার বড়টা চাপলে এক সহপাঠী পরামর্শ দিছিল–নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকতে। কাজ হইছিল।
৪) নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকার পদ্ধতিটা জীবনে একবারই কাজ হয় নাই–প্রায় ৬ ঘণ্টার একটা বাস জার্নিতে।
৫) ছোটটার বেলায় পুরুষেরা না হয় যেখানে সেখানে কাজ চালায়, বড়টার বেলায় কে কী করে কে জানে! আর মেয়েরাই বা কিভাবে দুইটাই চাপাই রাখে!
৬) গাবতলীর বাসস্টাণ্ডের একেবারে দক্ষিণ দিকে টয়লেট ছিল। পুরাটাই ফ্রি! একবার বাধ্য হয়ে ঢুকে নাড়িভুড়ি উলটে যাওয়াও অবস্থা। তার মধ্যেই কাজ সারতে হয়েছিল।
৭) লঞ্চে কাজ সারা যেত। কিন্তু সবটাই গিয়ে পড়ত নদীর মধ্যে। বের হয়ে দেখি নদীর ঘাটে অনেকে নাইতে নেমেছে। আর পল্লীর বধূরা কলসি ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছে। এর পর থেকে আর রুচি হয় নাই।
৮) পাকা পায়খানা থাকলেও বন্যা হলে কমোডের মধ্যে পানি চলে আসত। ভয়ংকর অবস্থা। আমরা বাপ-চাচারা নৌকা নিয়ে চলে যেতাম পাট-ধইঞ্চা-ধান ক্ষেতের মধ্যে। মা-বোনেরা কিভাবে কাজ সারত, সেই রহস্য আজও উদ্ধার করতে পারি নাই।
৯) যাদের নৌকা ছিল না, তারা চলে যেত গ্রামের শেষ দিকটায়, কারো পুকুরপাড়ে। সেখানে আড়ালের দিকটায় কোনো গাছের সাথে দুই পিস বাঁশ লাগিয়ে খোলা টাট্টিখানা বসানো হত…
১০) পাকা পায়খানার আগে ছিল টাট্টিখানা। বাড়ির পিছন দিকটায়, ঝোড়-ঝাপের আড়ালে, কোনো গাছের ডালে বা নিচু গাছের সাথে বাঁশ লাগিয়ে… এখন এসব তেমন চোখে পড়ে না। সবার পাকা না হলেও অন্তত রিং বসানো আছে। ভাগ্যিস আগের মত আর বন্যা হয় না!
১১) পথের পাশে, মাঠের কিনারায়, খালের পাড়ে, ডাঙার পাড়ে কাজ সারত অনেকে।
১২) ডাঙ্গার পাড়েই মাঠ। মাঝে ছিল হিজল গাছ। হিজলের ডালে বসে হাগু করা ছিল একটা ক্রেডিটের বিষয়। আবার মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে প্রায়ই বল যাইত ডাঙ্গার মধ্যে। অনেক সময় মাখামাখি হয়ে যেত। ঘষে, ধুয়ে আবার খেলা শুরু হত। অদ্ভুত! অদ্ভুত!!
১৩) এক বড় ভাই ডাঙ্গার পাড়ে-পথের ধারে বসত প্রায়ই। একবার মেয়েরা পথ দিয়ে হেঁটে গেল। বড় ভাইরে তো পরে ক্ষেপাতে শুরু করলাম সবাই–দেইখা ফেলাইছে! উত্তর দিত–আরে আমারে দেখছে তো কী হইছে, আমি তো দেখি নাই!
১৪) স্কুলে খোলা জায়গায় পায়খানা করার ক্ষতিকর দিকগুলো পড়ার পরে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি যথাসম্ভব। আর সবাইকেও নিষেধ করছি।
১৫) এখন সবার আগে সুন্দর একটা বাথরুমের স্বপ্ন থাকে… একপাশে থাকবে বই ভরা বুকসেলফ। কমোডের উপর বসে বই পড়ার মজাই আলাদা।
১৬) অনেকে আমেরিকা এসেও বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার শিখলো না! কোন ব্লগে যেন একটা ফানি পোস্ট ছিল টয়লেট ব্যবহারের নিয়মকানুন নিয়ে!
১৭) বাথটাব থাকার পরেও গোসল করতে গিয়ে অনেকে ফ্লোর ভিজায়। বিশ্রী ব্যাপার!
১৮) এখন কি দেশের দূরযাত্রার বাসগুলোতে টয়লেট আছে?
১৯) লঞ্চগুলোতে সিস্টেম কী?
২০) সবাই জানেন, নবীর বিবি-মেয়ে সবাই বাড়ির বাইরে এসে পথের পাশে বসে হাগু করত। আর বদ পোলাপানে মজা নিত। একবার হাগুরত অবস্থায় হাফসার সাথে ওমরের চোখাচোখি হয়ে গেলো। ওমর আইসা নবীরে কইল কিছু একটা ব্যবস্থা নিতে। তারপর একদিন নবীর সাথে তার ভাইবউ ফাতিমার চোখাচোখি হয়ে গেলো! কী লজ্জা কী লজ্জা! ভাসুরে দেইখা ফেলাইলো! কিন্তু আল্যা বা নবী–কারো মাথাতেই উন্নতমানের টয়লেট-বাথরুমের চিন্তা আসল না। আসল মুখ ঢাকার আইডিয়া… মানে সেই “আমারে দেখেছে, আমি তো দেখি নাই” বিষয়, তাতে আর যাই হোক, চোখাচোখি হবে না, লজ্জারও কিছু হবে না। তারপর সূরা আহযাব-এর ৫৯ নাম্বার আয়াত নাজিল হইলো–তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। তারপর থেকে ভাসুর দেখলেই মাথার চাদর টেনে দেয়া বা ঘোমটা দেয়ার প্রচলন শুরু হলো।
Leave a Reply