• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

পৃথিবীতে, এত কাছে

You are here: Home / ধর্মকারী / পৃথিবীতে, এত কাছে
November 15, 2016
(মদিনা সনদে পরিচালিত দেশে সাঁওতালদের ওপরে মুছলিমরা ইছলামসম্মত তরিকায় অত্যাচার, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট না চালালেই বরং অস্বাভাবিক হতো সেটা। উচ্চাশাহীন, নিরীহ, নির্বিবাদ ও নির্বিরোধ জীবনদর্শনে বিশ্বাসী এই সম্প্রদায় সম্পর্কে ছোট্ট একটি লেখা পেয়ে গেলাম গত রাতে শুয়ে শুয়ে ভ্রমণ কাহিনী পড়ার সময়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর “পৃথিবীতে, এত কাছে” নামের সেই রচনা থেকে ভারতের এক জঙ্গলে বসবাসকারী সাঁওতাল সম্প্রদায় সম্পর্কিত অংশটি উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে করলো খুব।)
… লাল রঙের ঝরনাটা পার হওয়ার পর আমরা মাদলের শব্দ শুনতে পেলুম। কল্যাণ বলল, কাছেই একটা ছোট গ্রাম আছে, চলুন, সেদিক দিয়ে ঘুরে যাই। 
গ্রাম মানে কী। আট-দশটা কাঁচা বাড়ি। তারই একটা বাড়ির মধ্যে একজন লোক মাদল বাজাচ্ছে, আর একজন নাচছে, আর তাদের ঘিরে হাসছে অনেকে। বাজনাদার বা নাচুনে, কারুরই শরীর নিজের বশে নেই, পা টলমল, মহুয়ার নেশায় একেবারে চুরচুর। কিন্তু বাজনা বা নাচের উৎসাহ ওদের একটুও কম নয়। 
আমাদের খাতির করে একটা খাটিয়ায় বসতে দেওয়া হল। 
এই জঙ্গলে তিন জাতের মানুষ থাকে। লোধা বা শবর, তারা এখনও বাউণ্ডুলে, শিকার-টিকার করে খায়, বা দিন মজুরির কাজ করে, চুরির দক্ষতার ব্যাপারেও তাদের সুনাম আছে, কিন্তু তারা চাষবাস জানে না। দ্বিতীয় দল সাঁওতালরা বেশ সুসভ্য, তারা শিকার ও চাষ দুটােই জানে এবং দুপুরবেলা মহুয়া খেয়ে নাচ-গান নিয়ে আনন্দ করতে জানে শুধু তারাই। আর আছে মাহাতোরা, তারা অন্যদের তুলনায় কিছুটা সচ্ছল। 
এ বাড়িটা যে সাঁওতালদের, তা দেখেই বোঝা যায়। লোকজনের পায়ে-পায়ে ঘুরছে কয়েকটি একেবারে সদ্যোজাত, একদিন বা দুদিন বয়েসি মুরগির ছানা। ওগুলোকে ঠিক চলন্ত কদম ফুলের মতন দেখায়। একটু দূরে বাঁধা একটা ছাগলও নাচ দেখছে এক দৃষ্টি। স্বাতীর কাছে এ সবই নতুন। আগেকার দিন হলে আমিও মহুয়া খেয়ে ওদের সঙ্গে নাচে যোগ দিতাম। স্বাতী সঙ্গে রয়েছে বলেই শান্ত, সুশীল হয়ে বসে রইলুম। কল্যাণ আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি-মুচকি হাসছে। 
দরজার কাছে দাঁড়ানো একজন মাঝ বয়েসি রমণী মাঝে-মাঝে নাচ চাঙ্গা করবার জন্য একটা গান ধরেছে। বেশ গলাটি। গানের ভাষা। কিন্তু একেবারেই দুর্বোধ্য নয়, পুরোপুরি বাংলা, পথের মাঝে বৃষ্টি আসিল, বন্ধু আমার বান্ধা পড়িল – এই ধরনের। যে নাচছে এবং ঢোল বাজাচ্ছে, এই দুজনের মধ্যে কেউ একজন ওই মহিলাটির স্বামী, ঠিক কোনজন তা বুঝতে পারলুম না, বাজনার তালে ভুল হলে কিংবা নাচুনেটি বেশি ঢলে পড়লে সে বকছে দুজনকেই। নাচুনেটির স্বাস্থ্য চমৎকার, চকচকে কালো শরীরটি ঘামে ভেজা, এত নেশাগ্ৰস্ত অবস্থাতে সে কিন্তু একবারও মাটিতে পড়ে যাচ্ছে না। সে যেন আজ সারাদিন ধরে নাচবার জন্য বদ্ধপরিকর। মহিলাটির গানের প্রতি আমি একবার তারিফ জানাতেই সে অপ্রত্যাশিতভাবেই বলল, বাবু, আমার ন’খানা ছেলেমেয়ে। অর্থাৎ সে যেন জানাতে চায় যে ন’টি সন্তানের জননী হওয়া সত্ত্বেও সে গান গাইতে পারে। এটা একটা জানাবার মতন কথাই বটে। 
আমি একটু কৌতুক করে বললুম, পুরোপুরি দশটা হলেই তো ভালো হত। 
তার উত্তরে সে উদাসীন গলায় বলল, হয়ে যাবে। দশটাও হয়ে যাবে। এই তো আমাদের একমাত্র সুখ! 
স্বাতী আমার দিকে চেয়ে ভ্রূভঙ্গি করল। প্রায় ঘণ্টাখানেক নাচ দেখার পর আমরা উঠে পড়লুম। একটু দূরে এসেছি, তখন দেখি পেছনে-পেছনে সেই মহিলাটিও আসছে। অযাচিতভাবেই সে বলল, ওটা আমার বাড়ি নয়, আমার বাড়ি ওই সামনে। আমার বাড়ি দেখবে না? 
বিশেষত সে স্বাতীকে বলল, ও মেয়ে, তুমি আমার বাড়ি দেখবে না? 
গেলুম তার বাড়িতে। এর বাড়ির উঠোনটিও অত্যন্ত পরিচ্ছন্নভাবে নিকোনো। এক পাশের চালাঘরে একটি ঢেঁকি, তার পাশের খাটিয়ার বসলুম আমরা। মহিলাটি কথা বলতে ভালোবাসে। আমাদের সব বৃত্তান্ত জিগ্যেস করে জানবার পর সে বলল যে তার বড় মেয়ে অনেকদিন পর বাপের বাড়িতে এসেছে বলে সেই আনন্দের চোটে তার মেয়ের বাপ মহুয়া খেয়ে নাচতে গেছে। ব্যাপারটা যে অত্যন্ত কৌতুকের, এইভাবে সে হাসতে লাগল খিলখিল করে। 
তিন গেলাস কুয়োর জল খেয়ে আমরা উঠে পড়তে যাচ্ছি, তখন মহিলাটি অত্যন্ত বিস্মিতভাবে বলল, এ কী, তোমরা চলে যাচ্ছ? খেয়ে যাবে না, আমি যে ভাত চাপাচ্ছি?
আমরাও হতভম্ব। এদের দারিদ্র্যের প্রকৃত স্বরূপ বোঝা আমাদের পক্ষে সত্যিই বুঝি অসম্ভব। অচেনা কোনও মানুষ বাড়িতে এলে আমরা কোনওদিনই তাকে খেয়ে যেতে বলতে পারব না। 
রমণীটি আবার দুঃখিতভাবে বলল, আমার বাড়িতে এসে তোমরা না খেয়ে চলে যাবে? 
আমরা অত্যন্ত অপরাধীর মতন, বিনীতভাবে বললুম, আজ নয়, আর একদিন আসব, নিশ্চয়ই এসে খেয়ে যাব। 
সে অবিশ্বাসের সুরে বলল, হ্যাঁ, আর এসেছ। 
সারাবছর ভাত খাওয়া ওদের কাছে বিলাসিত। মন্দির থেকে ফেরার পথে একজন স্ত্রীলোককে দেখেছিলাম, তার কাঁকালে একটি রোগা শিশু। মাথায় এক বোঝা শুকনো ডালপালা আর হাতে দুটি সবুজ পাতায় মোড়া কী যেন। সে স্ত্রীলোকটি বাংলা বুঝতে পারে না, কল্যাণ তার সঙ্গে আদিবাসীদের ভাষায় কথা বলে ঠোঙা দুটি দেখতে চাইল। তাতে আছে কিছু থেঁৎলানো বুনো জাম আর কিছু ব্যাঙের ছাতার মতন জিনিস। কল্যাণ আমাদের বলেছিল, ওইগুলোই ওই মা-ছেলের সারাদিনের খাদ্য। এই জঙ্গলের অনেকে মাটি খুঁজে-খুঁজে এক ধরনের বুনো আলু পায়, তাই খেয়েই দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়। অনেকে শাল গাছের ডগার কচি পাতাও সেদ্ধ করে খেয়ে নেয়। আর ওই স্ত্রীলোকটি আমাদের তিনজনকে অকারণে ভাত খেয়ে যেতে বলেছিল। হয়তো, কিছু বিক্রি করে হাতে কিছু ধান এসেছে।
বাংলোয় ফিরে এসে আমরা কিছুক্ষণ চুপ করে বসলুম। এখান থেকে সেইসব বাড়িঘর কিছুই দেখা যায় না। শুধু দিগন্ত ছোঁয়া জঙ্গল আর পাহাড়। চোখকে আরাম দেওয়া প্রকৃতি। এরই মধ্যে মধ্যে রয়ে গেছে ক্ষুধার্ত মানুষ, আবার দুপুরবেলা নেশা করে নাচবার মতন মানুষ, অতিথি সেবার জন্য ব্যাকুল মানুষ।…
Category: ধর্মকারীTag: রচনা
Previous Post:অপদার্থ বিজ্ঞান
Next Post:blow মানে বিস্ফোরণ

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top