অনেককাল আগের কথা–কী এক অনুষ্ঠান–চেয়ারে বসে আছি। দূর সম্পর্কের এক আণ্টি এসে তার ছোট্ট পিচ্চিটাকে কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে ‘এক্ষুণি আসছি, একটু সময় দেখে রাখো’ বলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর নিম্নাঙ্গে পরিবর্তন হতে শুরু করল। দ্রুত পিচ্চিটাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। ও কিছু বোঝেনি, কিন্তু আমি লজ্জায় এবং ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। চারদিকে অনেক লোকজন, গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। কেউ দেখছে কিনা–চোখ বুলালাম চারদিকে। একটু পর আরেকটি মেয়ে এসে চেয়ারে বসবে কিনা জিজ্ঞেস করল। বসতে বলে পিচ্চিটাকে তার কোলে রেখে আমি সরে গেলাম। আবিষ্কার করলাম–নিজের ভেতরেও একটা ধর্ষকের বসবাস!
ভেতরের এই ধর্ষককে আমি ভয় পেতে শুরু করলাম। এই ঘটনার পর থেকে পিচ্চিদের আর কোলে নেয়া তো দূরের কথা, স্পর্শই করতে চাইতাম না। চোরের মনে পুলিশ পুলিশ, কেমন যেন ভয় লাগে, আর সেই দিনের ঘটনাটা মনে পড়ে। শুধু তাই নয়, মেয়েদের সাথে মিশতে, সামনা সামনি কথা বলতে, পাশাপাশি বসতেও কেমন জানি অস্বস্তি লাগে। বাস্তব জীবনে সেভাবে প্রেম-ভালোবাসা না হওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ। কেউ বলতে পারেন, সেএণ্ডক্স্যুয়াল ব্যাপারে ভালো ধারণা বা যথাযথ শিক্ষা নেই বলে হয়তো এমন মনে হচ্ছে… অনেকের কাছে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিক হলে সেটা হত প্রেম-ভালোবাসার দিক দিয়ে–ভালোবাসার মানুষের প্রতি ফিলিংস থেকে; এভাবে পিচ্চি-সম্পর্কিত নয়।
তারপরে সামাজিকতার খাতিরে মাঝে মাঝে মেয়েদের কাছাকাছি যেতে হয়েছে। কিন্তু সেভাবে সহজ হতে পারিনি কোনোদিন। নিজেকে বুঝিয়েছি–আমার থেকে দুনিয়ার সবাই নিরাপদ। সংকুচিত হয়ে থাকি যাতে আমাকে নিয়ে কেউ ভয় না পায়। যদিও ওরকম ঘটনা আর তেমন একটা হয় নাই, তবুও নিজের সেই এক ঘটনার কারণে অন্য কোনো পুরুষকেও আমার তেমন একটা বিশ্বাস হয় না। আর যেসব মেয়েরা এধরনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে যায়, না জানি পুরুষদের ব্যাপারে তাদের মানসিকতা কেমন!
জানি অনেকে বলবেন–নিজকে দিয়া দুনিয়া বিচার করা ঠিক নয়… সবাই এক নয়। কিন্তু এটাও প্রচলিত–পাতিলের সব ভাত নাকি টিপা দেখা লাগে না… নিজ ভালো তো দুনিয়া ভালো। তেমনি এটাও তো হতে পারে–নিজ খারাপ তো দুনিয়া খারাপ। পরের দিকে আশে-পাশের মানুষগুলারেও নজরে রাখা শুরু করলাম। এদের আশেপাশে মেয়েরা আসলে আমি তাকাই পুরুষদের চোখের দিকে–চকচকে চোখ দিয়ে যে চাটে সেটা ভালো করেই টের পাই। এছাড়া কয়েকজনরে কমবেশি এসব করতেও দেখেছি। আমার কাছে সার্বিকভাবে খারাপের পাল্লাটাই বেশি ভারী মনে হয়। তাই দুই-চারজন ভালো পুরুষ–ব্যতিক্রম হিসাবেই ধরি।
জানিনা অন্য কারো এক ধরনের অভিজ্ঞতা আছে কিনা, থাকলেও স্বীকার করবেন কিনা। না করলেও অসুবিধা নাই। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকেই দুনিয়া দেখব। আর জানি তো, জীবনের কুৎসিতদিকগুলা মনেপ্রাণে আড়ালে রাখাটাও তথাকথিত সভ্য মানুষের এক ধরনের লক্ষন। হয়তো সুযোগের অভাবেই…
Leave a Reply