যদি আপনি মনুষ্য প্রজাতির একজন হন, তবে জেনে রাখুন, আমি আপনার থেকে কোনো না কোনো দিক দিয়ে আলাদা, মানে আমরা দু’জন পরস্পর বিপরীত; প্রকৃতিগত ভাবে বৈপরীত্য লালন করে মানুষ এবং এটা স্বাভাবিক। কোরান দাবি করে, সে বিপরীত তথ্য ধারণ করে না, কারণ সে এক এবং অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা (!) কর্তৃক প্রেরিত এবং তাতে কোনো বৈপরীত্য নেই! (সূরা ৪, আয়াত ৮২)
কোরান গবেষকরা জানেন, কোরানে শতাধিক গাণিতিক, বৈজ্ঞানিক, তথ্যগত বৈপরীত্য আছে; কিন্তু, যেখানে অন্ধ বিশ্বাসের মহাপ্লাবনে হিমালয় পর্যন্ত ডুবে যায়, সেখানে মুমিনীয় মস্তিস্ক ডুবে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। নিরপেক্ষতার স্বার্থে তাই আমি গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক বৈপরীত্য নিয়ে এই সংকলন সাজানোর চেষ্টা করিনি।
কোরান সংকলনের পর থেকেই ‘সাহাবী’, ‘তাবেঈন’ এবং ‘তাবে-তাবেঈন’-দের মধ্যে কোরানের কিছু কিছু আয়াতে চরম বৈপরীত্য চোখে পড়তে থাকে; প্রচণ্ড ধর্মভীরু কোরান ব্যাখ্যাকারীগণ ‘তাফসীর’ এবং ‘শানে-নুযুল’ গ্রন্থে প্রায় তিন শতাধিক বৈপরীত্য লিপিবদ্ধ করেন। ছিদ্রযুক্ত পাত্রে পানি জমা রাখা যায় না জেনেও এসব বৈপরীত্য উপেক্ষা করে এসবের নতুন নাম রাখা হয় নাসিখ এবং মানসুখ আয়াত (An-Nasikh-wal-Mansukh) – কোনো একটি আয়াত দ্বারা অন্য একটি আয়াতকে বাতিল ঘোষণা করা; যে আয়াতটি বাতিল হচ্ছে, তাকে বলা হয় ‘মানসুখ’ আয়াত; আর যে আয়াতটি দ্বারা বাতিল হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘নাসিখ’ আয়াত।
ভেবে দেখুন, কোরান এমন একজন সৃষ্টিকর্তা (!) কর্তৃক বিশেষ যত্নে প্রেরিত, যেখানে শত-শত বাতিল আয়াত বিদ্যমান! তাও আবার একে অন্যের বিপরীত। তার পরেও বুক ফুলিয়ে বলতে শোনা যায়, “ইহা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই” (সূরা ২, আয়াত ২)।
এই ইবুকটি তৈরিতে আমি কোরানের একাধিক অনুবাদ, ‘তাফসীর’, এবং ‘শানে-নূযুল’ গ্রন্থের সহায়তা নিয়েছি, এই সংকলনের সকল বৈপরীত্য-এর আবিষ্কারক প্রবলভাবে ধর্মভীরু কোরানের তাফসীর সংকলকগণ; বিশেষত: ‘তাফসীর ইবনে আব্বাস’, ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’ ও ‘তাফসীর জালালাইন’ এর বাংলা অনুবাদ এবং কোরানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ শানে-নূযুল গ্রন্থ Asbab al-Nuzul-এর ইংরেজি সংস্করণ আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে।
Leave a Reply