কেউ কি কখনো ভাবছেন–পুরুষেরা ঘুষ খাইছে, পুরুষেরা দুর্নীতি করছে, পুরুষেরা লুলামি করছে, পুরুষেরা পরকীয়া করছে, পুরুষেরা ছ্যাকা দিছে, পুরুষেরা শারীরিক নির্যাতন করছে, পুরুষেরা যৌন-নির্যাতন করছে, পুরুষেরা ধর্ষণ করছে, পুরুষেরা খুন করছে, পুরুষেরা হেন করছে, পুরুষেরা তেন করছে–শুধু এই ধরনের খবর ‘নিউজ’ হয় কেন? নারীরা কি ঘুষ খায় না? নারীরা কি দুর্নীতি করে না? নারীরা কি পরকীয়া করে না? নারীরা কি ছ্যাকা দেয় না? নারীরা কি শারীরিক নির্যাতন করে না? নারীরা কি লুলামি করে না? নারীরা কি যৌন-নির্যাতন করে না? নারীরা কি ধর্ষণ করে না? নারীরা কি ব্লেড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে দেয় না? নারীরা কি খুন করে না?
এক কথায় উত্তর–করে। কিন্তু এই ধরনের খবর ‘নিউজ’ হয় না কেন? তাহলে কি নিউজ-মিডিয়ায় সব পুরুষবিদ্বেষীরা বসে আছে? তারা কি ইচ্ছে করেই নারীদের কুকীর্তির কথা ছাপায় না? নাকি দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকার–সবাই নারী…শুনতেছি সারা বিশ্বের উপর ছড়ি ঘুরাইতেও নাকি আরেক নারী আসতেছ…–এ জন্যই কি সবাই নারীদের কুকীর্তির কথা প্রকাশ করতে ভয় পায়? নাকি সবাই কি আসলেই পুরুষবিদ্বেষী হয়ে গেলো?
এক কথায় উত্তর–না। তাহলে কাহিনী কী? আমার মনে হয়, কাহিনী হলো–নারীরা পুরুষদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে, সব কাজে তাদেরকে টেক্কা দিচ্ছে–এসব খবর পুরুষেরা প্রচার করতে লজ্জা পায়। তাদের পুরুষত্ব-প্রভুত্বের আসন খর্ব হয়ে যায় কিনা, সেই ভয়ে সবসময় ভীত বলেই নারীদের কাছে হেয় হওয়ার ঘটনাগুলো এড়িয়ে যায়।
যেমন ধরেন, আমার পুরুষত্বের উপর আমার প্রভুগিরির উপর আঘাত আসতে পারে বিধায় অনেকদিন বোরখাওয়ালীর আপডেট দেই না। দিব কেন? বিগত কয়েকমাসে যা যা ঘটছে, সব আমার বিপক্ষে গেছে! বোরখাওয়ালীর জয়জয়কার সবখানে। আর আমি ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দিরে… । এসব ফাঁস করলে তো মান-সম্মান যা অবশিষ্ট আছে তা-ও যাবে।
এই যে যেমন ধরেন–বাচ্চা নিব না, সংসার করব না বলে তার সাথে আমার ঝামেলা। অনেকটা দিন আলাদা হয়ে ছিলাম। বলেছিলাম আমাকে বিদায় করো, তারপর আবার বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার করো। বলত এই বুড়া বয়সে আবার কবে নতুন করে বিয়েটিয়ে করব, কবে বাচ্চা নেব, তার চেয়ে তোমার কাছ থেকেই একটা নিয়ে রাখি, তুমি তারপর তোমার পথ দেখো, আমি আমার বাচ্চা নিয়ে আমার মত করে থাকব। আমি শর্ত দিতাম–আগে ডিভোর্স, পরে বাচ্চা। আমাকে বিশ্বাস করত না। সে বলত উলটাটা–আগে বাচ্চা, পরে ডিভোর্স, না হলে সারা জীবনেও ডিভোর্স দেব না, লাইফ হেল করে দেব, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমেরিকার মত জায়গায়, জানেনই তো, এসব ব্যাপারে আইনকানুন বেশিরভাগ মেয়েদের পক্ষে।
ভাবছিলাম অন্য কোথাও প্রেম-ট্রেম করি–এসব বললে হয়তো আমার প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে। তাই ভালোবাসার মানুষটার ছবিটবি দেখাই, এক তরফা ভালোবাসার ডায়লোগ, লুলামি, ইত্যাদির স্নাপশট প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করি…আরো কত কি! কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা তো সবসময় সমান যায় না… ভালোবাসার মানুষটা যখন ভালোবাসলো না, পাত্তা দিল না, লাইফ এঞ্জয় করতে বলে ভদ্র ভাবে সরে গেল, তখন রাগে-দুঃখে-কষ্টে-শোকে মন খারাপ করে শুয়ে আছি, আর সেই সুযোগে সমবেদনা জানাতে এসে শোয়া অবস্থা থেকে বসা, বসা অবস্থা থেকে খাড়া করল, মুখে বলল–সেইফ টাইম…ভিতরে দাও…কিছু হবে না… ওম্মা, মাসখানেক পরে চোখ টিপি মাইরা কয়–হয়ে গেছে!
এখন আপনারাই বলেন, ভার্চুয়ালে এত শক্ত পাল্লা, আর বাস্তবে বোরখাওয়ালীর কাছে এইভাবে ধরা খেলাম–এই কথা কি আমি পুরুষ হয়ে কাউকে বলে বেড়াতে পারি? আমার পুরুষত্ব, প্রভুগিরি, মান-সম্মান কিছু কি আর অবশিষ্ট থাকবে?
যা হোক, এখন ফাঁদ ছিড়ে বের হওয়ার চেষ্টায় আছি। বোরখাওয়ালী প্রায়ই খোঁচায়–আগে তো বড় বড় কথা বলতা, এখন তো তুমি মুক্ত, কোথায় যাবা যাও না কেন এখন? আমেরিকায় কাজবাজ করে বোরখাওয়ালী তার লাইফ গুছিয়ে নিতে পারবে। এটা জাস্ট সময়ের ব্যাপার। এদিকে আমি… চলে যাব বললেই তো আর চলে যাওয়া যায় না। মানসিকভাবে একটু একটু সব গুছিয়ে নিচ্ছি। সংসার-ধর্মে অনীহা, ভীতু উদাসীন অযোগ্য অশিক্ষিত মূর্খ আলসে ঘরকুনো একটা মানুষ। সময় লাগছে। একদিন সব পেছনে ফেলে কোনো একদিকে উধাও হয়ে যেতে পারব। আর প্রেমে পড়া হবে না, আর ভালোবাসা হবে না… এতে অবশ্য লাভও আছে একটা–আর ছ্যাকাও খেতে হবে না।
Leave a Reply