• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা – দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ২০)

You are here: Home / ধর্মকারী / কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা – দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ২০)
December 2, 2016
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯
{উত্তরণের উপায় খুঁজছেন মুহাম্মদ! যদি মক্কায় টিকে থাকতে হয়, তবে চাচা ‘আবু তালিব’-এর মত একাধিক সমর্থক দরকার। 
‘আবু বকর’ শরীরে পাটকাঠি আর চুপচাপ ধরনের মানুষ, ‘উসমান’ দেখতে মুহাম্মদের মত হলেও ধার করা বুদ্ধিতে চলে সবসময়! ‘সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস’ সাহসী হলেও গোত্রীয় শক্তিতে দুর্বল। মনে বড় আশা, নির্ভীক ‘উমার ইবনে হিশাম’ (আবু জেহেল) অথবা রগচটা ‘উমর ইবনে খাত্তাব’-এর মধ্যে কেউ যদি নবী হিসাবে তাকে স্বীকার করেন; তবে এ যাত্রায় তার নবীত্ব বেঁচে যায়! আজকের পর্বে মুহাম্মদের এই উত্তরণের সন্ধান পাওয়া যাবে; আর তিনি যে ‘চিনি চেয়ে সন্দেশ’ পাবেন, তাও দেখবো আমরা।
মক্কার ১৩ বছরে মুহাম্মদের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় “তিন’শ”, গড়ে প্রতি বছর ২৩ জন। যদিও এ হিসাব স্বীকার করেন না নাস্তিক/আস্তিক কোনো গবেষকই! সবার হিসাবে এই সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৫০ জনের ভেতর!
সম্ভবত, ভুলটা এমন, সবাই ‘আবু বকর’-কে গণনা করেন; কিন্তু তার তিন সন্তান আর স্ত্রী’র হিসাব করতে ভুলে যান! বদরের যুদ্ধে ৮০ জন মক্কাবাসী অংশগ্রহন করেছিলেন, তাদের প্রতি জনের যদি ২ জন পরিবারিক মুসলিম সদস্য (স্ত্রী+সন্তান) থাকে; তবে হিসাব দাঁড়ায় ১৬০+৮০= ২৪০ জন! এর সাথে হাবাশায় (ইথিওপিয়া) থাকা মুসলিমদের যোগ দিন! কী, হিসাব মিললো?
এ পর্যন্ত আমরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কোরআনের প্রকাশ পেয়েছি; যারা কোরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ মনে করেন, তাঁদের অনুরোধ করবো, ১ম পর্ব থেকে পুনরায় পড়ে আসুন; আর কী কী বিজ্ঞান খুঁজে পেলেন; তার তালিকা করে ঝুলিয়ে রাখুন। মক্কার ১৩ বছরের শেষ পর্যন্ত কোরআনের আয়াত এতটাই একই বিষয়ে ঘুরপাক খাবে; ভয় হয়, বিরক্ত হয়ে আপনি হয়ত এই সিরিজটি পড়া বন্ধই করে দেবেন! তবে যদি মক্কা পর্ব অতিক্রম করতে পারেন, মদিনা অংশে কোরআন পাঠের মজা খুঁজে পাবেন; যুদ্ধ, যৌনতা আর গনিমতে মাখামাখি সেসব আয়াতেও বিজ্ঞান থাকবে হোমিওপ্যাথির ৩০সি শক্তির ওষুধে মূল উপাদান থাকার সমপরিমাণ!
৮৫-৮৬ নং প্রকাশে নতুন কিছু নেই বলে দুঃখিত! তবে এতদিনে হয়ত আপনার চোখে পড়েছে, কোনো কোনো প্রকাশের মাঝে ১/২ টি করে আয়াত বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই মদিনা পর্বে খুঁজে পাওয়া যাবে; যেভাবে ৩য় প্রকাশের সূরার শেষ আয়াত ৮৭ নং প্রকাশে প্রকাশ করেছেন মুহাম্মদ! 
৮৮ নং প্রকাশের কিছুদিন আগে, মাত্র ৭ দিন সময়ের মধ্যেই মুহাম্মদের চাচা; সাহসী শিকারী যোদ্ধা ‘হামজা’ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন; আর তার ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ‘উমর ইবনে খাত্তাব’ মুসলমান হয়ে যান! কীভাবে তা ঘটে, তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রায় সকলেই জানেন; তবে এই ‘চিনি চেয়ে সন্দেশ প্রাপ্তি’ মুহাম্মদকে এতটা সুখী আর অহংকারী করে, যার ছাপ ৮৮ নং প্রকাশের প্রতিটি আয়াতে খুঁজে পাবেন; তার সাথে এই প্রকাশের ১৪ নং আয়াতে মুহাম্মদের (আল্লার) ভ্রূণবিদ্যার জ্ঞানের দৌড় নিশ্চয়ই আপনার চোখ এড়াবে না! 
পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২০ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা – দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৩ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৫ তম প্রকাশ: সূরা ক্বাফ (৫০) (ক্বাফ), ৩৮ আয়াত বাদে ১ থেকে ৪৫ আয়াত:
১. কাফ; মর্যাদাপূর্ণ কুরআনের কসম।
২. কিন্তু কাফিরেরা তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হতে দেখে বিস্ময় বোধ করে এবং বলে: এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার।
৩. আমরা মরে গেলে এবং মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও কি পুনরুত্থিত হব? এ প্রত্যাবর্তন সুদূরপরাহত।
৪. মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।
৫. বস্তুতঃ তাদের নিকট সত্য আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে তারা সংশয়ে দোদুল্যমান।
৬. তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কীভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোনো ছিদ্রও নেই।
৭. আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং ওতে উদ্গত করেছি নয়ন-প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ
৮. এটা জ্ঞান আহরণ ও স্মরণ করার মত ব্যাপার প্রত্যেক অনুরাগী বান্দার জন্যে।
৯. আকাশ হতে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তদ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও উদগত করি শস্য।
১০. ও সমুন্নত খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ খেজুর
১১. বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে।
১২. তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে নূহের সম্প্রদায়, কুপবাসীরা এবং সামুদ সম্প্রদায়।
১৩. আদ, ফেরাউন, ও লূতের সম্প্রদায়,
১৪. বনবাসীরা (আইকার অধিবাসী) এবং তোব্বা সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই রসূলগণকে মিথ্যা বলেছে, অতঃপর আমার শাস্তির যোগ্য হয়েছে।
১৫. আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে, পুনঃসৃষ্টি বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করছে?
১৬. আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
১৭. যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।
১৮. মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।
১৯. মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এটা হতেই তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ।
২০. এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।
২১. প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে। তার সাথে থাকবে চালক ও তার কর্মের সাক্ষী।
২২. তুমি এই দিন সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, এখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা উম্মোচন করেছি। অদ্য তোমার দৃষ্টি প্রখর।
২৩. তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে: আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই।
২৪. তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে,
২৫. কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে
২৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।
২৭. তার সহচর শাইতান বলবে: হে আমাদের রাব্ব! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত।
২৮. আল্লাহ বলবেন: আমার সামনে বাক-বিতণ্ডা কর না; তোমাদেরকে আমি তো পূবেই সতর্ক করেছি।
২৯. আমার কথার রদ বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করি না।
৩০. সেই দিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব: তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবে: আরও আছে কি?
৩১. জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে।
৩২. তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
৩৩. যে না দেখেই দয়াময়কে ভয় করত এবং বিনীত হৃদয়ে উপস্থিত হত।
৩৪. তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন।
৩৫. সেখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক।
৩৬. আমি তাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, তারা এদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল এবং দেশে-বিদেশে বিচরণ করে ফিরত। তাদের কোনো পলায়ন স্থান ছিল না।
৩৭. এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।
৩৯. অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
৪০. রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।
৪১. শোন, যেদিন এক ঘোষণাকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহবান করবে
৪২. যেদিন মানুষ অবশ্যই শ্রবণ করবে মহানাদ, সেই দিনই পুনরুত্থান দিন।
৪৩. আমিই জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং সকলের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে।
৪৪. যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং মানুষ ছুটাছুটি করে বের হয়ে আসবে, এই সমবেত সমাবেশ করণ আমার জন্য সহজ।
৪৫. তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের ওপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৬ তম প্রকাশ: সূরা ইয়াসীন (৩৬) (ইয়াসীন), ৪৫ আয়াত বাদে ১ থেকে ৮৩ আয়াত:
১. ইয়া সীন।
২. শপথ জ্ঞানগর্ভ কুরআনের।
৩. তুমি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।
৫. কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ,
৬. যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে, যাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে তারা উদাসীন।
৭. তাদের অধিকাংশের জন্য সেই বাণী অবধারিত হয়েছে; সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
৮. আমি তাদের গলদেশে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি, ফলে তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গেছে। 
৯. আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর ও পশ্চাতে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে আবৃত করেছি, ফলে তারা দেখতে পায় না।
১০. তুমি তাদেরকে সতর্ক কর কিংবা না কর, তাদের জন্য উভয়ই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
১১. তুমি শুধু তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় রাহমানকে ভয় করে। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের সংবাদ দাও।
১২. আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।
১৩. তাদের নিকট উপস্থিত কর এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত; তাদের নিকট এসেছিল রাসূলগণ।
১৪. যখন আমি তাদের নিকট পাঠিয়েছিলাম দু’জন রাসূল, কিন্তু তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল; তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা এবং তারা বলেছিল: আমরা তো তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।
১৫. তারা বলল: তোমরা তো আমাদের মত মানুষ, দয়াময় কিছুই অবতীর্ণ করেন নি, তোমরা শুধু মিথ্যাই বলছ।
১৬. তারা বলল: আমাদের পালনকর্তা জানেন যে, আমরা অবশ্যই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।
১৭. স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।
১৮. তারা বলল: আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি। যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে তোমাদেরকে অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ হতে তোমাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবশ্যই আপতিত হবে।
১৯. তারা বলল: তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই সাথে, এটা কি এ জন্য যে, আমরা তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি? বস্তুতঃ তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
২০. নগরীর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এলো, সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! রাসূলদের অনুসরণ কর।
২১. অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চায় না এবং তারা সৎ পথপ্রাপ্ত। 
২২. আমার কী যুক্তি আছে যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না?
২৩. আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনোই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।
২৪. এরূপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত হব।
২৫. আমি তো তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, অতএব তোমরা আমার কথা শোন।
২৬. তাকে বলা হল: জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলে উঠল: হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত
২৭. কী কারণে আমার পালনকর্তা আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং সম্মানিত করেছেন।
২৮. আমি তার মৃত্যুর পর তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হতে কোনো বাহিনী প্রেরণ করিনি এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না।
২৯. ওটা ছিল শুধুমাত্র এক মহানাদ। ফলে তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
৩০. পরিতাপ বান্দাদের জন্য! তাদের নিকট যখনই কোনো রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে।
৩১. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা তাদের মধ্যে ফিরে আসবে না?
৩২. এবং অবশ্যই তাদের সকলকে একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে।
৩৩. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।
৩৪. তাতে আমি সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্রবণ
৩৫. যাতে তারা আহার করতে পারে এর ফলমূল হতে, অথচ তাদের হাত ওটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?
৩৬. পবিত্র মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না, তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।
৩৭. তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।
৩৮. এবং সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
৩৯. এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মানযিল, অবশেষে ওটা শুষ্ক বক্র পুরাতন খেজুর শাখার আকার ধারণ করে।
৪০. সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এরং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটে।
৪১. তাদের এক নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদের বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম।
৪২. এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে।
৪৩. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি; সেই অবস্থায় তারা কোনো সাহায্যকারী পাবে না এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না
৪৪. কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।
৪৬. যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোনো নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়।
৪৭. যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন তা হতে ব্যয় কর তখন কাফিরেরা মুমিনদেরকে বলে: যাকে ইচ্ছা করলে আল্লাহ খাওয়াতে পারতেন আমরা কেন তাকে খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ।
৪৮. তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে বল: এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে?
৪৯. তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতণ্ডাকালে।
৫০. তখন তারা অসীয়াত করতে সমর্থ হবে না এবং নিজেদের পরিবার পরিজনের নিকট ফিরেও আসতে পারবে না।
৫১. যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।
৫২. তারা বলবে: হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল হতে ওঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।
৫৩. এটা হবে শুধুমাত্র এক মহানাদ; তখনই তাদের সকলকে উপস্থিত করা হবে আমার সম্মুখে।
৫৪. আজ কারও প্রতি কোনো যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা করতে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে।
৫৫. এ দিন জান্নাতবাসীরা আনন্দে মগ্ন থাকবে।
৫৬. তারা এবং তাদের সঙ্গিনীরা সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।
৫৭. সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।
৫৮. করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।
৫৯. আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।
৬০. হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
৬১. আর আমার উপাসনা কর, এটাই সরল পথ? 
৬২. শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বোঝনি?
৬৩. এটা সেই জাহান্নাম যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
৬৪. আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর; কারণ তোমরা একে অবিশ্বাস করেছিলে।
৬৫. আমি আজ এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।
৬৬. আমি ইচ্ছা করলে এদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিতে পারতাম, তখন এরা পথ চলতে চাইলে কী করে দেখতে পেত?
৬৭. এবং আমি ইচ্ছা করলে এদেরকে স্ব স্ব স্থানে বিকৃত করে দিতে পারতাম, ফলে এরা চলতে পারতো না এবং ফিরেও আসতে পারতো না।
৬৮. আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিই। তবুও কি তারা বোঝে না?
৬৯. আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দিইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।
৭০. যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতদেরকে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে।
৭১. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিজ হতে সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে তাদের জন্য আমি সৃষ্টি করেছি গৃহপালিত পশু এবং তারাই ওগুলির অধিকারী।
৭২. এবং আমি ওগুলিকে তাদের বশীভূত করেছি। ওগুলির কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা আহার করে।
৭৩. তাদের জন্য ওগুলিতে রয়েছে বহু উপকারিতা, আর আছে পানীয় বস্তু। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না?
৭৪. তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।
৭৫. অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।
৭৬. সুতরাং তাদের কথা তোমাকে যেন চিন্তিত না করে, নিশ্চয় আমি জানি, তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে।
৭৭. মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডাকারী।
৭৮. আর সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। বলে: অস্থিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে, যখন ওটা পচে গলে যাবে?
৭৯. বল: ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি ওটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত।
৮০. তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ হতে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা ওটা দ্বারা প্রজ্জ্বলিত কর।
৮১. যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
৮২. তিনি যখন কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে যায়।
৮৩. অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৭ তম প্রকাশ: সূরা আল আছর (১০৩) (সময়), ৩ নং আয়াত:
৩. কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্ধুদ্ধ করে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৮ তম প্রকাশ: সূরা আল মু’মিনূন (২৩) (মুমিনগণ), ১২ থেকে ১১৮ আয়াত:
১২. আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে।
১৩. অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে।
১৪. পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিণ্ডে এবং মাংসপিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!
১৫. এরপর অবশ্যই তোমরা মৃত্যু বরণ করবে।
১৬. অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
১৭. আমিতো তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্ত স্তর এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই।
১৮. এবং আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আমি ওকে অপসারিত করতেও সক্ষম।
১৯. অতঃপর আমি ওটা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার কর।
২০. এবং সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ, যা জন্মে সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।
২১. এবং তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।
২২. তাদের পিঠে ও জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।
২৩. আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে বলেছিল: হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?
২৪. তার সম্প্রদায়ের কাফির প্রধানরা বলেছিল: এ লোক তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, সে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতা পাঠাতেন; আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের যামানায় এরূপ ঘটেছে বলে শুনিনি।
২৫. সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়; সুতরাং এর সম্পর্কে তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা কর।
২৬. নূহ বলেছিল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর; কেননা, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
২৭. অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরি কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।
২৮. যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বল: আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।
২৯. আরও বল: পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।
৩০. এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে; আমি তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
৩১. অতঃপর তাদের পর আমি অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম।
৩২. এবং তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
৩৩. তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা কাফের ছিল, পরকালের সাক্ষাৎকে মিথ্যা বলত এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিলাম, তারা বলল: এতো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে।
৩৪. যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩৫. সে কি তোমাদেরকে এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা মারা গেলে এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?
৩৬. অনেক দূর, তোমাদের যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা অনেক দূর।
৩৭. আমাদের পার্থিবজীবনই একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই এবং আমরা পুনরুত্থিত হবো না।
৩৮. সে তো এমন ব্যক্তি বৈ নয়, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।
৩৯. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
৪০. আল্লাহ বললেন: কিছু দিনের মধ্যে তারা সকাল বেলা অনুতপ্ত হবে।
৪১. অতঃপর সত্য সত্যই এক বিকট শব্দ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি তাদেরকে তরঙ্গ তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম; সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল পাপী সম্প্রদায়।
৪২. এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
৪৩. কোনো জাতিই তার নির্ধারিত কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, আর না পারে বিলম্বিত করতে।
৪৪. অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোনো জাতির নিকট তাদের রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এককে ধ্বংস করলাম; আমি তাদেরকে কাহিনীর বিষয় করেছি; সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা!
৪৫. অতঃপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে পাঠালাম
৪৬. ফেরআউন ও তার অমাত্যদের কাছে। অতঃপর তারা অহংকার করল এবং তারা উদ্ধত সম্প্রদায় ছিল।
৪৭. তারা বলল: আমরা কি আমাদের মতই এ দুই ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব; অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস?
৪৮. অতঃপর তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।
৪৯. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।
৫০. এবং আমি মরিয়ম তনয় ও তাঁর মাতাকে এক নিদর্শন দান করেছিলাম। এবং তাদেরকে এক অবস্থানযোগ্য স্বচ্ছ পানি বিশিষ্ট টিলায় আশ্রয় দিয়েছিলাম।
৫১. হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎ কাজ কর; তোমরা যা কর, সেই সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।
৫২. এবং তোমাদের এই যে জাতি এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় কর।
৫৩. কিন্তু মানুষ নিজেদের মধ্যে তাদের কর্তব্য কর্মকে বহুধা বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট।
৫৪. সুতরাং কিছুকালের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।
৫৫. তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি তদ্দারা
৫৬. তাদের জন্য সর্ব প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বোঝে না
৫৭. নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
৫৮. যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
৫৯. যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
৬০. এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
৬১. তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।
৬২. আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। আমার এক কিতাব আছে, যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
৬৩. না, তাদের অন্তর এ বিষয়ে অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এ ছাড়া তাদের আরও কাজ রয়েছে, যা তারা করছে।
৬৪. এমনকি, যখন আমি তাদের ঐশ্বর্যশালী লোকদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখনই তারা চিৎকার জুড়ে দেবে।
৬৫. অদ্য চীৎকার করো না। তোমরা আমার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।
৬৬. আমার আয়াত তোমাদের কাছে পাঠ করা হত, কিন্তু তোমরা পিছন ফিরে সরে পড়তে
৬৭. অহংকার করে এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করে যেতে।
৬৮. তাহলে কি তারা এই বাণী অনুধাবন করে না? অথচ তাদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি?
৬৯. অথচ তারা কি তাদের রাসূলকে চেনে না বলে তাকে অস্বীকার করে?
৭০. অথবা তারা কি বলে যে, সে উন্মাদ? বস্তুতঃ সে তাদের নিকট সত্য এনেছে এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
৭১. সত্য যদি তাদের কামনার অনুগামী হত তাহলে বিশৃংখল হয়ে পড়ত আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের মধ্যবর্তী সব কিছুই। পক্ষান্তরে আমি তাদেরকে দিয়েছি উপদেশ, কিন্তু তারা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৭২. অথবা তুমি কি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চাও? তোমার পালনকর্তার প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিয্কদাতা।
৭৩. তুমি তো তাদেরকে সরল পথে আহবান করছ।
৭৪. যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তারা তো সরল পথ হতে বিচ্যুত।
৭৫. আমি তাদের ওপর দয়া করলেও এবং তাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করলেও তারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরতে থাকবে।
৭৬. আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের রবের প্রতি নত হল না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।
৭৭. অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দ্বার খুলে দিই, তখনই তারা হতাশ হয়ে পড়ে।
৭৮. তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
৭৯. তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্রিত করা হবে।
৮০. তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তাঁরই অধিকারে রাত ও দিনের পরিবর্তন, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
৮১. এতদসত্ত্বেও তারা তাই বলে, যেমন বলেছিল পূর্ববর্তীরা।
৮২. তারা বলে: আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মাটি ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?
৮৩. অতীতে আমাদেরকে এবং আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এই ওয়াদাই দেয়া হয়েছে। এটা তো পূর্ববতীদের কল্পকথা বৈ কিছুই নয়।
৮৪. জিজ্ঞেস কর: এই পৃথিবী এবং এতে যা আছে তা কার, যদি তোমরা জান তো বল?
৮৫. এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
৮৬. বলুন: সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?
৮৭. এখন তারা বলবে: আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
৮৮. জিজ্ঞেস কর: যদি তোমরা জান, তাহলে বল, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, কে আশ্রয় দান করেন, যাঁর ওপর আশ্রয়দাতা নেই?
৮৯. এখন তারা বলবে: আল্লাহর। বলুন: তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে? 
৯০. বরং আমি তো তাদের নিকট সত্য পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তারা মিথ্যাবাদী।
৯১. আল্লাহ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
৯২. তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করে, তিনি তা থেকে ঊর্ধ্বে।
৯৩. বল: হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে, তা যদি আপনি আমাকে দেখাতেন
৯৪. হে আমার পালনকর্তা! তবে আপনি আমাকে গোনাহগার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করবেন না।
৯৫. আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছি, তা আমি তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
৯৬. মন্দের জওয়াবে তাই বল, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।
৯৭. আর বল: হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,
৯৮. এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
৯৯. যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে: হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ
১০০. যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি পূর্বে করিনি। না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত।
১০১. অতঃপর যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না।
১০২. সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম।
১০৩. আর যাদের পাল্লা হালকা হবে ,তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।
১০৪. আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।
১০৫. তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি হত না? অথচ তোমরা ওগুলি অস্বীকার করতে!
১০৬. তারা বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দুর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি।
১০৭. হে আমাদের পালনকর্তা! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা গোনাহগার হব।
১০৮. আল্লাহ বলবেন: তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বল না।
১০৯. আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের উপর দয়া করুন, আপনি তো দয়ালুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
১১০. কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে।
১১১. আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।
১১২. আল্লাহ বলবেন: তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?
১১৩. তারা বলবে: আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, আপনি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
১১৪. আল্লাহ বলবেন: তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে?
১১৫. তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?
১১৬. মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোনো মাবূদ নেই; সম্মানিত আরশের তিনিই মালিক।
১১৭. যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।
১১৮. বল: হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মুহাম্মদের হাতে আর এক বছর সময় আছে! ‘আবু জেহেল’ মুহাম্মদকে এতটাই বিপদে ফেলে দেবেন, আয়াত প্রকাশের স্বাভাবিক সকল গতি হারিয়ে যাবে! নবুয়্যতের ৭ থেকে ১৩ বছরে (৬ বছর সময়ে) মুহাম্মদ যত প্রকাশ নিয়ে আসবেন, তার ভাষা হবে এখনকার থেকে ভিন্নতর; তাতে চ্যালেঞ্জের জবাব থাকবে, চাঁদ দু’ভাগ করার ভণ্ডামি থাকবে; আর একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে না পারার আকুতি নিয়ে মিরাজ/মেরাজ গমন থাকবে; সবশেষে আমাদের জন্য থাকবে একরাশ পাঠ-বিরক্তি!
(চলবে)
Category: ধর্মকারীTag: ইসলামের নবী, কোরানের বাণী, রচনা
Previous Post:সাইমুম (উপন্যাস: পর্ব ১৫)
Next Post:ধর্মকারীর কুফরী কিতাব – ২৪: ইসলামি পাটিগণিত

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top