লিখেছেন আসিফ মহিউদ্দীন
ইসলাম নাকি শান্তির ধর্ম, সহনশীলতা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার সবচাইতে আধুনিক ধর্ম!!!
আমাদের মডারেট মুসলিমগন যখন এই ধরনের হাস্যকর কথা বলেন, এবং এই কথা বলে মৌলবাদী মুসলিমদের কর্মকাণ্ডকে ব্যক্তিগত মারামারি বানিয়ে ফেলেন, তখন আসলেই হাসি পায়। মডারেট মুসলিমগন সোনা মুখ করে বলবে, এতে ইসলামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, “ইহা ছহি ইসলাম নহে!” ইহা সামান্য কয়েকজন বিচ্ছিন্নতাবাদীর অপকর্ম!
বেশ! তাহলে প্রশ্ন জাগে, মুহাম্মদ কাবার ৩৬০ টা মূর্তি কেন ভেঙ্গেছিল? সেই সময়ে অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা কই ছিল? শুধু মুহাম্মদ কেন, ইব্রাহিম থেকে শুরু করে মুসা, সকলেই মূর্তি ভেঙ্গেছেন, বিধর্মী হত্যা করেছেন, বিধর্মীদের স্ত্রী কন্যাকে গনিমতের মাল বানিয়ে উপভোগ করেছেন। এখন যদি জামাত শিবির বা অন্যান্য ইসলাম পন্থী মানুষগুলো তাদের পয়গম্বরের দেখিয়ে যাওয়া পথ অনুসরণ করে একইভাবে হিন্দুদের মূর্তি ভাঙ্গে, একইভাবে হিন্দু নারীদের গনিমতের মাল বলে ধর্ষণ করে, একইভাবে জিজিয়া কর আদায় করে, জিজিয়া কর না দিলে হত্যা করে, তখন কাকে দোষ দেবো? সেই সব ইসলামে বিশ্বাসী মুসলিমদের? তাদের পয়গম্বরদের? নাকি এটাকে শুধুই ব্যাক্তিগত অপরাধ বলেই চালিয়ে দেবো?
আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন আজকের ঘটনা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক বলে নিজেদের দাবী করা দলটি ক্ষমতায় থাকার পরেও দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, হিন্দুদের মূর্তি, মন্দির ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। একইভাবে ভারতের হিন্দুবাদে বিশ্বাসী জয়বজরঙ্গবলী আর শিবসেনারাও তাদের রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছে। এই ধর্মবাজরা যেখানেই থাকে, সেখানেই তারা অত্যাচার নির্যাতন করবে। অথচ তাদের সমালোচনা শুরু করতে গেলেই তারা একদল ভদ্র সুশীল মডারেটকে পাঠিয়ে দেবে, তারা এসে আমাদের জানাবে যে, ইহা ছহি ইসলাম নহে বা ইহা ছহি হিন্দুবাদ নহে। অথচ আধুনিক হিন্দুবাদের প্রবক্তারাই বলে গেছেন, মুসলিমরা ভারতবর্ষে ক্যান্সার স্বরুপ, এদের যেভাবেই হোক উচ্ছেদ করতে হবে! মন্দির ভাঙ্গে ধার্মিকরা, মসজিদ পোড়ায় ধার্মিকরা, অথচ ধর্মই শ্রেষ্ঠ!!! কী হাস্যকর এদের চিন্তাভাবনা!
শ্রদ্ধেয় আহমদ শরীফ বলেছেন, “সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের মূল নিহিত ধর্মতত্ত্বের ভেতরেই। ধর্মতত্ত্বের সমালোচনা না করে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের সমালোচনা করা অবান্তর।” যারা সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের সমালোচনায় মুখর, অথচ দেশে ইসলাম কায়েম করতে চান, বা ভারতের ক্ষেত্রে হিন্দুবাদ কায়েম করতে চান, তারা আসলে কিসের ভিত্তিতে এই সব ফাজলামী করেন আমি জানি না।
ধর্ম যতদিন থাকবে, ধর্মপ্রবর্তকদের যতদিন অনুসরণ করা হবে, এই মৌলবাদ থাকবেই। এখন সরাসরি স্পষ্ট করে সত্য স্বীকারের সময় হয়েছে। এখন মিনমিন করে “ধর্মকে বগলে রেখে” সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদের সমালোচনায় মুখর হওয়াটা শুধুই হিপোক্রেসী। নিজেদের সাথেই নিজেদের প্রতারণা।
ধর্মতত্ত্বের সমালোচনার সময় একপক্ষ মডারেট ধার্মিক আমাদের মুখ চেপে ধরবে, আহত হয়ে আমাদের কথা বন্ধ করতে অনুরোধ করবে, আরেকপক্ষ সেই সুযোগে বিধর্মী হত্যা করবে, মন্দির ভাঙবে, মসজিদ পোড়াবে। এই চক্র চলতেই থাকবে, যতদিন আমরা এই সত্যটা স্বীকার না করি যে, ধর্ম আছে বলেই, ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মানুষের বুদ্ধিহীন নতজানু শ্রদ্ধা আছে বলেই ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি চলে, ধর্মকে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা চলে। ধর্ম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করে ফেলা যাবে না, নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে, এটা সঠিক নাকি ভুল? সত্য সুন্দর নাকি বিষাক্ত?
অধিকাংশ মানুষ ধর্ম শুনলেই, ঈশ্বরের কথা শুনলেই তাদের বুদ্ধি হাটুতে নেমে আসে। নতজানু হয়ে আত্মসমর্পন করে। তাদের বিবেক বুদ্ধি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই শ্রদ্ধার জায়গাটার অপব্যবহার হতেই থাকবে, একে নিয়ে রাজনীতি চলতেই থাকবে। একে শ্রদ্ধার জায়গা থেকে সরিয়ে প্রশ্ন করতে না শিখলে, যাচাই বাছাই গ্রহণ বর্জন করার মানসিকতা তৈরি না হলে কোন লাভ হবে না।
চট্টগ্রামে লোকনাথ মন্দিরে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামাত শিবিরের নোংরা আক্রমন এবং লুটপাটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং সেই সাথে সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ আশা করছি। এদের কিছুতেই সহ্য করা যাবে না, এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে এদের আইনের হাতে সোপর্দ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যেন আর কেউ এই ধরণের গুণ্ডামি করতে না পারে। এই দেশ আমাদের, ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে দিতে হবে এই দেশ কোনো ধর্মভিত্তিক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র নয়। অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, দেশ স্বাধীন করেছিল, এই দেশকে কিছুতেই ধর্মীয় হায়নাদের লীলাক্ষেত্র বানানো যাবে না। এই দেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানানো যাবে না।
Leave a Reply