মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
রঙ্গরস ও কামকেলির জন্য কুমারী সর্বশ্রেষ্ঠ
ইসলাম মনে করে- কুমারীত্ব স্ত্রীজাতির শ্রেষ্ঠ ভূষণ। বিয়ের আগে কুমারীত্ব খোয়ানোর সমতূল্য আর কোনো পাপ নাই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে! ইসলামি সমাজে যথেষ্ট সাবালিকা মেয়েরাও প্রাক-বৈবাহিক সেক্সের কথা চিন্তা করতে পারে না (পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বতন্ত্র নিয়ম। পরবর্তীতে আমরা দেখাব – বিয়ের আগেই একজন মুসলমান পুরুষ ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যথেচ্ছ যৌনবিহার করতে পারে। তবে মুক্ত নারীদের সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সেক্স সম্পুর্ণ রূপে নিষিদ্ধ)।
পাঠক মনে রাখবেন, বিবাহ-বহির্ভুত সেক্স ইসলামে একটি গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য, অপরাধীকে এর জন্যে গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হয়। অপরাধী অবিবাহিত/অবিবাহিতা হলে শাস্তি এক শত দোররা বা বেত্রাঘাত। অপরাধী বিবাহিত (বিবাহিতা) হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। এই বিধান পবিত্র “হদুদ” আইন নামে পরিচিত; এর অর্থ – অপরাধ করে ফেললে এই বর্বর আইনের হাত এড়ানোর কোন উপায় নেই। একবার রায় হয়ে গেলে একে রদ করার ক্ষমতা কারও নেই, যে কোন ভাবে তা কার্যকর করতেই হবে। ইসলামি ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কী অপূর্ব নমুনা ! আমার বক্তব্য যদি কারও নিকট অতিরিক্ত বিদ্বেষমুলক প্রতীয়মান হয়, তবে তাকে একটি বিষয় স্মরণ করতে বলি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী অননুমোদিত সেক্স নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। কারণ – হত্যাকারী ‘কিয়াস’ (বদলা) বা ‘দিয়া’র (রক্তপণ) বিনিময়ে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে এরূপ কোনো ক্ষমার সুযোগ নেই! ভালবাসা খুন করার চেয়েও জঘন্য অপরাধ ইসলামে (বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে)! কতো বড় ঘৃণ্য ও অদূরদর্শী আইন, ভাবা যায়! আমাদের যৌন অঙ্গগুলির ‘প্রকৃত মালিক’ কে? আমরা? না পাঠক, এগুলির প্রকৃত মালিক আমরা নই, এর প্রকৃত মালিক ইসলাম। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি মুসলমান নরনারীর যৌনপ্রত্যঙ্গের মালিক ইসলাম।
এর সবকিছুর, এমন কি এর চারপাশে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ যৌনকেশ গজায়, তারও একমেবাদ্বিতীয়ম মালিক ইসলাম! নিচের হাদিসটি পড়ুন। পবিত্র সহিহ হাদিস। মেয়েদের যৌনাঙ্গে উদ্গত লোমরাশিকে কীভাবে সামলাতে হবে তার নির্দেশনামা।
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে স্বামী রাত্রে ঘরে ফিরলে স্ত্রী তার যৌনকেশ উত্তমরূপে শেভ করে রাখবে।
সহি বোখারিঃ ভলিউম-৭, বুক নং-৬২, হাদিস নং-১৭৩: জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিতঃ নবী বলেছেন – “যদি তুমি রাত্রিতে (তোমার শহরে) প্রবেশ কর (দীর্ঘ ভ্রমন শেষে), সাথে সাথে গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্য্যন্ত না প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী তার যৌনকেশ শেভ করে এবং আলুলায়িত কুন্তলা তারকেশগুলিকে ভালভাবে বিন্যস্ত করে।” আল্লাহর রসুল আরও বলেন- “হে জাবের, সন্তান লাভের চেষ্টা করো, সন্তান লাভের চেষ্টা করো”।
ফিতরার (সৎকাজ) পাঁচটি অনুশীলনঃ ১. খৎনা করা, ২. যৌনকেশ শেভ করা, ৩. নখ কাটা, ৪. গোঁফকে ছোট করে ছেটে রাখা, ৫. বগলের লোম পরিস্কার করা।
সহি বোখারিঃ ভলিউম-৭, বুক নং-৭২, হাদিস নং-৭৭৭: আবু হুরাইরা হতে বর্নিত: আল্লাহর রাসুল বলেছেন- “ফিতরার পাঁচটি নিদর্শনঃ- খৎনা করা, যৌনকেশ শেভ করা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছোট করে ছেটে রাখা”।
এখন কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, নরনারীর ঊরুদ্বয়ের মাঝখানে কী আছে, তার প্রতি আল্লাহর এত ইন্টারেস্ট কেন? তার তো জরুরি বহুত কাজ থাকার কথা! যদি মনে করে থাকেন যে আল্লাহ আপনাকে যৌনাঙ্গ দিয়েছে আপনার ইচ্ছেমতো সেগুলি ব্যবহার করার জন্যে, তা’হলে সে চিন্তা বাদ দিন। আপনার একান্ত নিজস্ব একান্ত গোপন অঙ্গটি কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারণের ভার আপনার উপর নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, গৃহের নিভৃত কন্দর থেকে সুবিশাল মরুপ্রান্তরপর্যন্ত – সর্বত্র তা নির্ধারণ করবে তথাকথিত আল্লাহর আইন নামক একসেট শরিয়া আইন।
বিবেকহীন, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য, নিষ্প্রাণ কতগুলো বিধান! এ প্রসঙ্গে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন এসে যায় – শরিয়া যদি আল্লাহর আইনই হয়, তবে কেন তা মানুষ ছাড়া অন্য জীবজন্তুর যৌনাঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে না? কেন গরু,ছাগল, ঘোড়া, শুয়োর, বাঘ, সিংহ, পাখী, সাপ, কচ্ছপ – এক কথায় সমস্ত প্রাণীকুল – সম্ভোগ কিংবা প্রজননের জন্যে ইচ্ছেমতো রতিক্রিয়া করতে পারে? দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে পশুদের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের ততটুকু নেই! ভাবুন একবার! আমার প্রাইভেট পার্টটি আমার একান্ত নিজস্ব, অথচ আমার এই মৌলিক অধিকারটিও ইসলাম কুক্ষিগত করে নিয়েছে। ইসলামের এই চরম বর্বরতার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য একটাই – কৌমার্য রক্ষার অজুহাতে প্রাণীর সহজাত এবং প্রাকৃতিক কাম প্রবণতা ও তজ্জনিত তৃপ্তি থেকে বিশেষভাবে মেয়ে প্রজাতিকে জোর করে বঞ্চিত রাখা। যেভাবেই হোক, একজন মুসলমান নারীকে তার কুমারীত্ব বজায় রাখতেই হবে। বিবাহবহির্ভূত কোনো অনৈসলামিক উপায়ে একজন মুসলমান নারী যৌনতৃপ্তি মেটাবে তা কখনও হতে পারে না। এজন্যে যদি তাকে হত্যা করতে হয় – তাও ভি আচ্ছা।
অক্ষতযোনী কুমারীর প্রতি ইসলামের এই অবসেশন কেন? কাফেরদের দেশে আসার পর এ নিয়ে বিস্তর ভেবেছি আমি।
(চলবে)
Leave a Reply