• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

খায়বার যুদ্ধ – ২৩ (শেষ পর্ব): রক্ত মূল্য!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৫২): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত ছাব্বিশ

You are here: Home / ধর্মকারী / খায়বার যুদ্ধ – ২৩ (শেষ পর্ব): রক্ত মূল্য!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৫২): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত ছাব্বিশ
December 23, 2016
লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)
“যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।”
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা খায়বারের জনপদের ওপর অতর্কিত আক্রমণে তাঁদেরকে খুন, জখম ও বন্দী করার পর তাঁদের যে ভূ-সম্পদ লুণ্ঠন ও হস্তগত করেছিলেন, তা তারা কীভাবে বংশ পরস্পরায় ভোগ করেছিলেন; মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর খায়বারের লুটের মালের হিস্যা থেকে তাঁর একান্ত নিকট আত্মীয়দের যে সম্পদ প্রদান করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর কোন অনুসারীরা তা বাজেয়াপ্ত করে তাঁদেরকে সেই সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন; এই কর্মে তারা কী অজুহাত উত্থাপন করেছিলেন; তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। খায়বারের জনপদবাসীদের ওপর মুহাম্মদের এই আগ্রাসী আক্রমণ ও বিজয় কেতনের রক্ত-মূল্য কত ছিল, তার আংশিক আলোচনা “রক্তের হোলি খেলা – ‘নাইম’ দুর্গ দখল!”পর্বে করা হয়েছে। আদি উৎসে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ও আল-ওয়াকিদি।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) অব্যাহত বর্ণনা: [1] [2]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব-১৫১) পর:
‘খায়বারে যে সকল মুসলমানরা শহিদ হয়েছিলেন তাদের নাম:
কুরাইশ মধ্যে, উমাইয়া বিন আবদু শামস গোত্র ও তাদের মিত্র:
[১] রাবিয়া বিন আখহাম বিন সাখবারা বিন আমর (আল-ওয়াকিদি: ”যাকে আল-নাটায় [পর্ব-১৩৮] হত্যা করেছিলেন আল-হারিথ নামের এক ইহুদি),
[২] রাইফা বিন আমির বিন ঘানম বিন দুদান বিন আসাদ,
[৩] থাকিফ বিন আমর (আল-ওয়াকিদি: ‘যাকে হত্যা করেছিলেন উসায়ের নামের এক ইহুদি), ও
[৪] রাফিয়া বিন মাসরুহ (আল-ওয়াকিদি: ”যাকে হত্যা করেছিলেন আল-হারিথ নামের এক ইহুদি [পর্ব-১৩৩])।
বানু আসাদ বিন আবদ আল-উজ্জা গোত্রের:
[৫] আবদুল্লাহ বিন আল-হুবায়েব।
আনসারদের মধ্যে, বানু সালিমা গোত্রের দুই জন:
[৬] বিশর বিন আল-বারা বিন মা’রুর – যার মৃত্যু হয়েছিল আল্লাহর নবীকে হত্যা চেষ্টায় উদ্দেশ্যে পরিবেশিত বিষ মিশ্রিত ভেড়ার মাংস ভক্ষণের কারণে [পর্ব-১৪৫], ও
[৭] ফুদায়েল বিন আল-নুমান।
বানু যুরায়েক গোত্রের:
[৮] মাসুদ বিন সা’দ বিন কায়েস বিন খালাদা বিন আমির বিন যুরায়েক (আল-ওয়াকিদি: ‘যাকে হত্যা করেছিলেন মারহাব’ [পর্ব-১৩৪])।
বানু আউস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু আবদুল-আশহাল গোত্রের:
[৯] মাহমুদ বিন মাসলামা [পর্ব-১৩০] বিন খালিদ বিন আদি বিন মায়েদা বিন হারিথা বিন আল-হারিথ, ও
[১০] তাদের মিত্র বানু হারিথা গোত্রের এক লোক।
বানু আমর বিন আউফ গোত্রের:
[১১] আবু দেইয়াহ বিন থাবিত বিন আল-নুমান বিন উমাইয়া বিন ইমরুল-কায়েস বিন থালাবা বিন আমর বিন আউফ;
[১২] আল-হারিথ বিন হাতিব;
[১৩] উরওয়া বিন মুররা বিন সুরাকা [পর্ব-১৩৬];
[১৪] আউস বিন আল-কায়েদ;
[১৫] উনায়েফ বিন হাবিব;
[১৬] থাবিত বিন আথলা, ও
[১৭] তালহা।
বানু গিফার গোত্রের:
[১৮] উমারা বিন উকবা – যে তীর-বিদ্ধ হয়েছিল।
বানু আসলাম গোত্রের:
[১৯] আমির বিন আকওয়া (আল-ওয়াকিদি: ‘যিনি নাইম দুর্গে নিজেনিজেই আহত হন,আল-রাজী নামক স্থানে তাকে ও মাহমুদ বিন মাসলামা কে একই  কবরে দাফন করা হয়।’)।
[২০] মেষপালক আল-আসওয়াদ (খায়বারবাসী এক মেষপালক), যার নাম ছিল আসলাম। [2] 
ইবনে শিহাব আল-যুহরি হইতে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক খায়বারে যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন:
[২১] মাসুদ বিন রাবিয়া, আল-কারা অঞ্চলের বানু যুহরা গোত্রের এক মিত্র; ও
[২২] আউস বিন কাতাদা, বানু আমর বিন আউফ গোত্রের এক আনসার।’
– অনুবাদ, টাইটেল, [**] ও নম্বর যোগ – লেখক।
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বর্ণনা: [2]




আদি উৎসে আল-ওয়াকিদির বর্ণনা মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনারই অনুরূপ। তাঁর বর্ণনা মতে মুসলমানদের মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৫ জন। মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনায় শুধু মুসলমানদেরই নাম ও গোত্র পরিচয়সহ নিহতের সংখ্যার উল্লেখ আছে; ইহুদিদের নিহতের সংখ্যার বিষয়টি তাঁর বর্ণনায় অনুপস্থিত। অন্যদিকে, আল-ওয়াকিদি তাঁর বর্ণনায়  নিহত ইহুদিদের মোট সংখ্যা উল্লেখ করেছেন, “৯৩ জন ইহুদি পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল!”
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের খায়বার আগ্রাসনের সংক্ষিপ্তসার:
আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো খায়বারের জনপদবাসী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করতে আসেননি। বরাবরের মতই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরাই ছিলেন আক্রমণকারী (পর্ব-১৩০)! মুহাম্মদ তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও তাঁর নবী-গৌরব ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে হুদাইবিয়া সন্ধি শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে ‘সুরা আল-ফাতাহ’ রচনার মাধ্যমে তাঁর ঐ অনুসারীদের যে লুটের মালের ওয়াদা প্রদান করেছিলেন (পর্ব-১২৪), তারই পূর্ণতা প্রদানের প্রয়োজনে খায়বারের এই নিরপরাধ সম্পদশালী জনগণের ওপর মুহাম্মদের এই আগ্রাসী আক্রমণ! খায়বারে অধিষ্ঠিত এই ইহুদি জনপদবাসীর অনেকেই ছিলেন মুহাম্মদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে মদিনা থেকে নির্বাসিত বনি নাদির গোত্রের লোকেরা [পর্ব: ৭৫]।
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই হামলাটি ছিল “অতর্কিত!” খায়বারের জনপদবাসীর অতি প্রত্যুষের ঘুমের আমেজ যখন তখনও কাটেনি, কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে কিছু শ্রমিক শ্রেণীর মানুষরা যখন সবে মাত্র কাজে বের হয়েছেন, তখন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অতর্কিতে তাঁদের ওপর এই নৃশংস আক্রমণটি চালান। তাঁরা এই হামলাকারীদের দেখতে পেয়ে “মুহাম্মদ ও তার বাহিনী”, বলে চীৎকার করে লোকদের সতর্ক করতে করতে দৌড়ে পালিয়ে এসে তাঁদের দুর্গ মধ্যে আশ্রয় নেন। আর মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে “আল্লাহু আকবর! খায়বার ধ্বংস হয়েছে!” বলে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণকালে তাদের সিংহনাদ ছিল “হত্যা করো হত্যা করো!”
অতর্কিত আক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর খায়বারবাসী তাঁদের নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় তাঁদের দুর্গ-মধ্য থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন (পর্ব-১৩২)। অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদের বিপুল সংখ্যক আগ্রাসী যুদ্ধবিগ্রহে বিভিন্ন সময়ে আলী ইবনে আবু তালিব যেমন বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, খায়বারের এই আগ্রাসী হমালাও তার ব্যতিক্রম ছিল না (পর্ব-১৩৩)!
খায়বার আগ্রাসনের প্রাক্কালে বানু আসলাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু সাহম গোত্রের লোকেরা মুহাম্মদের কাছে এসে যখন তাদের দুরবস্থার কথা জানায়, তখন মুহাম্মদ তাদের দুরবস্থার কথা শুনে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এই বলে যে, আল্লাহ যেন তাদেরকে খায়বারের সবচেয়ে খাদ্য ও সম্পদশালী দুর্গটি দখলের ব্যবস্থা করে তার ভেতরের সমস্ত খাদ্য ও সম্পদ লুণ্ঠন কারার তৌফিক দান করেন! বানু আসলাম গোত্রটি ছিলো মুহাম্মদের সাথে জোটবদ্ধ বানু খোজা গোত্রেরই এক অংশ (‘হুদাইবিয়া সন্ধি: চুক্তি ভঙ্গ -পাঁচ’)। উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে অবিশ্বাসী জনপদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাঁদেরকে খুন, জখম, দাস ও যৌনদাসীকরণ, সম্পদ লুণ্ঠন, তাঁদের ধরে নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি; ইত্যাদি সমস্তই মুহাম্মদের প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত মতবাদে ‘জিহাদ’ নামের সর্বশ্রেষ্ঠ সৎকর্মের অংশ (পর্ব-১৩৫)।
অমানুষিক নৃশংসতায় নাইম দুর্গ দখলের পর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গ দখল করেন (পর্ব-১৩৭)। এই দুর্গটি দখলের সময় তারা মুহুর্মুহু উচ্চস্বরে “আল্লাহু আকবর” বাক্যটি ব্যবহার করেন! মুহাম্মদ অনুসারীদের এই মুহুর্মুহু “আল্লাহু আকবর” চিৎকার ইহুদিদের শক্তিকে দুর্বল করে দেয় ও তাঁরা ভীতিগ্রস্ত অবস্থায় চতুর্দিকে পলায়ন করেন। তাঁদের মধ্যে যারা মুসলমানদের সম্মুখে আসে, তাঁদের সবাইকে করা হয় খুন (পর্ব-১৩৬)। যারা পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে করা হয় বন্দি।  খায়বারের আল-নাটা নামক স্থানে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সর্বশেষ যে দুর্গটি দখল করে নিয়েছিলেন, তা হলো “কালাত আল-যুবায়ের” দুর্গটি। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে আল-নাইম, আল-সাব বিন মুয়াধ ও নাটায় অবস্থিত অন্যান্য দুর্গের প্রায় সকল ইহুদিরা পালিয়ে এই দুর্গম দুর্গে আশ্রয় নেন। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা এই দুর্গটি চারিদিক থেকে ঘেরাও করে রাখেন, ইহুদিরা এই দুর্গ মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ‘কালাত আল-যুবায়ের’ দুর্গটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তারা তার ভিতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই মুহাম্মদ এই দুর্গের সম্মুখে পাহারার ব্যবস্থা করেন ও যে ইহুদিরায় তাদের সম্মুখে আসে তাঁদের সকলকেই করেন খুন! অতঃপর ঘাযযাল নামের এক ব্যক্তির পরামর্শে মুহাম্মদ তাঁদের একমাত্র পানির উৎসটি বন্ধ করে দেন। পানিবঞ্চিত অবস্থায় সকল বয়সের শিশু-কিশোর, গর্ভবতী মহিলা ও বৃদ্ধ-অতিবৃদ্ধ মানুষরা পিপাসিত অবস্থায় তিলে তিলে কষ্ট ভোগ করেন! অতঃপর তাঁরা তা সহ্য করতে না পেরে মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন (পর্ব-১৩৮)।
আল-নাটার দুর্গগুলো খালি করে ইহুদিরা তাঁদের নারী ও শিশুদের আল-কাতিবা নামক স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আল-নিযার দুর্গ মধ্যে যে অল্প সংখ্যক নারী অবস্থান করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব (পর্ব-১২৪), তাঁর কাজিন ও আরও কিছু তরুণী। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সাফিয়া, তাঁর কাজিন ও অন্যান্য যুবতী মেয়েদের আল-শিইক এ অবস্থিত আল-নিযার দুর্গ থেকে হস্তগত করেছিলেন (পর্ব-১৩৯)। তাঁদেরকে বন্দী করার পর মুহাম্মদ আল-কাতিবা, আল-ওয়াতিহ, আল-সুলালিম নামক স্থানের লোকদের ওপর আক্রমণ চালান। আল-কাতিবার আল-কামুস দুর্গটি থেকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অন্যান্য নারী ও শিশুদের বন্দী করেন। আল-কাতিবায় ছিলো দুই হাজারের ও বেশী ইহুদি, তাদের মহিলা ও সন্তানরা। আল-কাতিবার আক্রান্ত জনপদবাসী যখন উপলব্ধি করেন যে, যদি তাঁরা আত্মসমর্পণ না করেন, তবে মুহাম্মদ তাঁদেরকে ধ্বংস করে ফেলবেন, তখন তাঁরা মুহাম্মদের কাছে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। মুহাম্মদ তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেন এই শর্তে যে, তাঁরা তাঁদের পরিধেয় বস্ত্র-সামগ্রী ও পরিহিত গহনাগুলো ছাড়া তাঁদের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি মুহাম্মদের কাছে হস্তান্তর করবেন। নিজেদের প্রাণরক্ষার আকুতিতে তাঁরা এই প্রস্তাবে রাজি হন (পর্ব-১৪০)।
>> সাফিয়ার পিতা হুয়েই বিন আখতাব-কে হত্যা করা হয়েছিল বনি কুরাইজা গণহত্যার দিনটিতে (পর্ব: ৯১-৯২)! নববধূ থাকা অবস্থায় সদ্য বিবাহিত সাফিয়ার স্বামী কিনানা বিন আল-রাবি কে করা হয় নির্যাতন ও খুন! কিনানা বিন আল-রাবি বিন আবুল হুকায়েক নামের এই লোকটির অপরাধ ছিলো এই যে, তিনি তার পরিবারের সঞ্চিত ধনভাণ্ডার মুহাম্মদের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন(পর্ব-১৪১)! তাঁকে অমানুষিক নিষ্ঠুরতায় নির্যাতন করার জন্য মুহাম্মদ তাঁর ফুপাতো ভাই আল-যুবায়ের-কে হুকুম করেন, যতক্ষণে না কিনানা তার কাছে যা কিছু আছে তার সবকিছুর সন্ধান জানায়। এক জ্বলন্ত কাষ্ঠখণ্ড তাঁর বুকে বিদ্ধ করা হয়! অতঃপর মুহাম্মদ তাঁকে মুহাম্মদ বিন মাসলামা নামের আর এক অনুসারীর কাছে হস্তান্তর করেন, মুহাম্মদ বিন মাসলামা তাকে হত্যা করে। কিনানার ভাইকেও নির্যাতন করা হয়, অতঃপর তাঁকে হত্যা করার জন্য বিশর বিন আল-বারা নামের মুহাম্মদের আর এক অনুসারীর কাছে হস্তান্তর করা হয়!
সাফিয়া-কে প্রথমে যৌন-দাসী হিসাবে হস্তগত করেছিলেন দিহায়া আল-কালবি নামের মুহাম্মদের এক অনুসারী। তাঁর সৌন্দর্যের খবর যখন মুহাম্মদকে অবহিত করানো হয়, মুহাম্মদ তাঁকে ধরে নিয়ে আসার জন্য বেলালকে নিয়োগ করেন। সাফিয়ার স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনসহ যে সকল লোকদেরকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা হত্যা করেছিলেন, তাঁদের লাশের পাশ দিয়ে বেলাল তাঁকে ও তাঁর কাজিন-কে মুহাম্মদের কাছে ধরে নিয়ে আসেন। মুহাম্মদ হুকুম করেন যে সাফিয়া-কে যেন তাঁর পেছনে রাখা হয় ও তিনি তাঁর ঢিলা বড় জামাটা তাঁর ওপর নিক্ষেপ করেন, যাতে মুসলমানরা জানতে পারে যে, তিনি তাঁকে তাঁর নিজের জন্য পছন্দ করেছেন (পর্ব-১৪২)।
অতঃপর মুহাম্মদ সাফিয়া-কে যে দু’টি প্রস্তাব দেন, তা হলো, সাফিয়া তাঁর ধর্মে অবিরত থেকে মুহাম্মদের যৌনদাসী হিসাবে বাকি জীবন কাটাতে পারে, কিংবা তিনি মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করে তাঁর স্ত্রী হিসাবে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারে। সাফিয়া মুহাম্মদের দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। বিনিময়ে মুহাম্মদ তাঁকে মুক্ত করেন ও বিবাহ করেন। সাফিয়ার বিবাহের মোহরানা ছিল তাঁর দাসত্ব হতে মুক্তি লাভ(পর্ব-১৪৩)! অতঃপর, আনাস বিন মালিকের মাতা উম্মে সুলালিম বিনতে মিলহান সপ্তদশী সাফিয়াকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে ৫৮ বছর বয়স্ক মুহাম্মদের বাসর রাতের জন্য উপযুক্ত করেন; মুহাম্মদ তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর তাঁবুতে বাসর রাত উদযাপন করেন।
মুহাম্মদ যখন সাফিয়া-কে নিয়ে বাসর রাত উদযাপন করছিলেন, তখন মুহাম্মদের অজ্ঞাতে আবু আইয়ুব নামের মুহাম্মদের এক বিশিষ্ট অনুসারী তরবারি সমেত সারা রাত্রি যাবত মুহাম্মদের ঐ তাঁবুটি প্রদক্ষিণ করে তাঁকে প্রহরা দেন, যতক্ষণে না সকাল হয়। পরদিন প্রত্যুষে মুহাম্মদ যখন আবু আইয়ুব-কে সেখানে দেখতে পান, তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চান যে, কী উদ্দেশ্যে আবু আইয়ুব এই কাজটি করেছেন। আবু আইয়ুব জবাবে বলেন যে, সাফিয়া মুহাম্মদের সঙ্গে থাকায় তিনি ছিলেন আশংকাগ্রস্ত এই কারণে যে, মুহাম্মদ সাফিয়ার পিতা, ভাই, চাচা-মামা-ফুপা, স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করেছেন। তিনি মুহাম্মদের জীবন আশংকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এই ভেবে যে, সাফিয়া প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মুহাম্মদকে হত্যা করতে পারে। এই ভাবনায় তিনি এত বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, মুহাম্মদ কে রক্ষার চেষ্টায় তিনি সারা রাত্রি জেগে মুহাম্মদের প্রহরায় নিযুক্ত ছিলেন (পর্ব-১৪৪)।
>> খায়বার জনপদবাসীদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যে সীমাহীন নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন, তারই প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টার সম্ভাবনা ছিল প্রত্যাশিত। যখন মুহাম্মদ খায়বার বিজয় করেন যয়নাব বিনতে আল-হারিথ নামের এক ইহুদি মহিলা তাঁর এক ভেড়া জবেহ করে তার মাংসে ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু বিষ মিশ্রিত করেন। অতঃপর তিনি এই খাবারটি উপহার স্বরূপ মুহাম্মদকে প্রদান করেন। মুহাম্মদ ও তাঁর কিছু অনুসারী বিষ মিশ্রিত খাবারটি ভক্ষণ করেন। সেই খাবার খেয়ে বিশর বিন আল-বারা নামের এক মুহাম্মদ অনুসারী সেখানেই নিহত হন। মুহাম্মদ সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান! অতঃপর মুহাম্মদ যয়নাবকে ধরে নিয়ে এসে জানতে চান যে, কী কারণে তিনি তাঁকে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন। যয়নাব জবাবে বলেন যে, তিনি মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন এই কারণে যে, মুহাম্মদ তাঁর পিতা আল-হারিথ, চাচা ইয়াসার, ভাই যাবির ও অসুস্থ স্বামী সাললাম বিন মিশকাম কে খুন করেছে; তাঁর লোকদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে! তাঁর লোকেরা যেন মুহাম্মদের কাছ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন, এই অভিপ্রায়েই তিনি মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন। অতঃপর মুহাম্মদ এই অকুতোভয় মহিলা-টি কে হত্যার আদেশ জারি করেন।
খায়বারের এই বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়ে মুহাম্মদের তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেননি সত্য, কিন্তু মুহাম্মদ তাঁর মৃত্যুকালীন অসুস্থতার সময় যে প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করেছিলেন, যে ব্যথার প্রকোপে তিনি মৃত্যু বরণ করেছিলেন, তার কারণ ছিল খায়বারের এই বিষ মিশ্রিত খাবার। মুহাম্মদের ভাষায়, “খায়বারে যে খাবারটি আমি খেয়েছিলাম তার সৃষ্ট ব্যথা আমি এখনও অনুভব করি, এবং এই মুহূর্তে আমি যা অনুভব করছি তা হলো এমন যে সেই বিষের প্রতিক্রিয়া যেন আমার মহাধমনীটি কেটে ফেলেছে(পর্ব-১৪৫)।”
>> খায়বার আক্রমণে মুসলমানরা যা কিছু লুণ্ঠন করেছিলেন তার সমস্তরই এক-পঞ্চমাংশ ছিল মুহাম্মদের জন্য বরাদ্দকৃত। অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশের হিস্যা পেয়েছিলেন হুদাইবিয়া অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদ অনুসারীরা (পর্ব: ১১১-১২৯), তা তারা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করুক কিংবা না করুক। খায়বারের লুণ্ঠন সামগ্রী যখন ভাগাভাগি করে নেয়া হয়, মুহাম্মদ অনুসারীদের ভাগে পড়ে আল-শিইখ ও আল-নাটার সম্পদ, চার পঞ্চমাংশের হিস্যা বাবদ। আর আল-কাতিবার সমস্ত সম্পদ ছিল শুধুই মুহাম্মদের, এক পঞ্চমাংশ অংশ (কুরান: ৮:৪১) হিসাবে। উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে খায়বারের জনপদবাসীদের যে সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা লুণ্ঠন করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিলেন, তা তারা ভোগ করেছিলেন বংশপরস্পরায় (পর্ব-১৫১)।লুটের মালের এই অংশ থেকে মুহাম্মদ  তাঁর নিজ পত্নী, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের ভরণপোষণ বাবদ ব্যয় করেন। তাঁর এই অংশ থেকে তিনি আরও দান করেন অনাথ, দরিদ্র ও মুসাফিরদের (পর্ব: ১৪৬-১৪৯)।
ইসলামী পরিভাষা (Islamic Vocabulary) সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে এই “অনাথ, দরিদ্র ও মুসাফির” শব্দগুলোর সর্বজনবিদিত সাধারণ অর্থের সাথে ইসলামের পরিভাষায় এই শব্দগুলোর মারপ্যাঁচে পাঠক বিভ্রান্ত হতে বাধ্য। ইসলামিক পরিভাষার এই মারপ্যাঁচ বিষয়ের আলোচনা “খুন ও নৃশংসতা অতঃপর ঘোষণা ‘আল্লাহই তাদেরকে হত্যাকরেছেন’ (পর্ব-৩৩)” পর্বে করা হয়েছে।
>> মুহাম্মদ খায়বারের জনপদবাসীদের প্রাণে না মেরে বিতাড়িত হবার সুযোগ দান করেছিলেনে এই শর্তে যে, তাঁরা তাঁদের পরিধেয় বস্ত্র-সামগ্রী ও পরিহিত গহনাগুলো ছাড়া তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি মুহাম্মদের কাছে হস্তান্তর করবেন। অতঃপর, তাঁরা মুহাম্মদের কাছে তাঁদেরই ঐ জমিগুলোতে শ্রমিক-রূপে কাজ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন, যেন তাঁরা এই জমিগুলো থেকে উৎপন্ন কৃষিজাত দ্রব্যের অর্ধেক পেতে পারেন। মুহাম্মদ তাঁদের এই প্রস্তাবে রাজি হন এই শর্তে যে, “যদি আমরা তোমাদের বিতাড়িত করতে চাই, তোমাদের বিতাড়িত করবো।” মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তাঁরা এই শর্তে তাঁদের পৈত্রিক ভিটে মাটিতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। মুহাম্মদ তাঁর মৃত্যুকালে ঘোষণা করে যান যে, “আরব উপদ্বীপে যেন দু’টি ধর্মের উপস্থিতি মেনে না নেয়া হয়“। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উমর ইবনে খাত্তাব তাঁদের-কে খায়বার থেকে বিতাড়িত করেন(পর্ব-১৫০)!
(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১৮; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf

[2] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”:  ইবনে হিশামের নোট নম্বর ৭৬৬, পৃষ্ঠা ৭৭০
[3] অনুরূপ বর্ণনা: “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৯৯-৭০০; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫
http://www.amazon.com/The-Life-Muhammad-Al-Waqidis-al-Maghazi/dp/0415864852#reader_0415864852
Category: ধর্মকারীTag: ইসলামের নবী, রচনা
Previous Post:নোবেল-উল মুস্তাকিম
Next Post:সূরা আল্যা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top