লিখেছেন অনন্ত বিজয়
বছর দুয়েক আগে এক নোটারি উকিলের বাসায় গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন কোনো এক কারণে। ভদ্রলোক আমাদের সাথে আসা একজনের বন্ধুর বাবা। আমাদের আগমনের হেতু জানার পর তিনি বেশ চমকিত হলেন। আস্তে আস্তে কথাবার্তাগুলো মোড় নিল ধর্মবিশ্বাস, অলৌকিকতা ইত্যাদি আবোল তাবোল বিষয় নিয়ে। কথার পিঠে কথা জন্মাতে লাগলো। বয়সের বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও কিছুটা রাখঢাক করে কথাবার্তা বলতে হচ্ছিল।
তিনি বারে বারে বলতে লাগলেন পৃথিবীতে অবশ্যই অলৌকিকতার অস্তিত্ব আছে এবং মানুষ সেটা সময়ে সময়ে ধরতে পারে। উদাহরণ দিলেন:
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।নিশ্চল নিশ্চুপআপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।
কাজী নজরুলের চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি’ কবিতার মধ্যের কিছু লাইন এগুলো। উকিল ভদ্রলোকের মত হচ্ছে, জীবনের শেষ মুহূর্তের অসুস্থতার খবর নজরুল আগেই জানতেন এবং এই কবিতাতেই সেটা প্রকাশ করেছিলেন কবি।
আবিষ্কারকর্তার বলিহারি আবিষ্কার দেখে আমাদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। আমরা বললাম, তাহলে জীবনানন্দকেও ভবিষ্যদ্বক্তা বানানো যাবে। ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতার প্রথম দুই লাইন হচ্ছে এরকম:
শোনা গেল লাশকাটা ঘরেনিয়ে গেছে তারে…
জীবনানন্দ ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর একটি ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২২ অক্টোবর মারা যান। লাইন দুটো থেকে কি ধরে নিব, কবি আগেই নিজের মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন?
তিনি কি বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না! আমতা আমতা করতে লাগলেন। একবার বললেন, হ্যাঁ ধরে নেয়া যায়, আরেকবার বললেন, না… না…
এটা আলাদা বিষয়। বেশ মজা লাগছিল ভদ্রলোকের কথা শুনে। কথা বলার সময় তাঁর অঙ্গভঙ্গিও আরো বেশি মজার। হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছিল। আরেকবার বললেন, তিনি নাকি স্বপ্নে মুহাম্মদকে দেখেছেন!
বললাম, আপনি হিন্দু, মুহাম্মদের কোনো ছবিও মনে হয় না জীবনে দেখেছেন? তাহলে চিনলেন কী করে স্বপ্নে দেখা লোকই মুহাম্মদ?
জবাব দিলেন, একবার স্বপ্নে দাড়িওয়ালা এক লোক দেখেছেন, তখন আকাশে বাতাসে চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছিল মুহাম্মদ! মুহাম্মদ! মুহাম্মদ!
Leave a Reply