লিখেছেনঃ অভিজিৎ রায়
বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে বসে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদের প্রিয় চ্যানেল ‘প্রবাসী টিভি’র অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। কিন্তু এসে তার মন ভরছে না। কেমন যেন দায়সারা গোছের সেট। সেটের উপরের আলোগুলো ফ্লাড লাইটের মতোই চোখে এসে পড়ছে। অনুষ্ঠানের এক কমবয়সী উপস্থাপিকা ইংরেজি উচ্চারণে টেনে টেনে বাংলা বলছে। লেখালিখিতে কার ইন্সপিরেশন আছে, ‘রাভিন্ড্রোনাঠ টেগোরের’ গান শুনেন কিনা, শাওন বাংলাদেশি রান্নার পাশাপাশি ‘ইটালিয়ান পাস্তা কুক’ করে কিনা এইগুলো প্রশ্ন চলল কিছুক্ষণ।
অনুষ্ঠানের শেষে এসে শাওন এবং হুমায়ূন আহমেদকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়া হল। উপস্থাপিকা টেনে টেন বললেন, ‘আপনারা টো ডুই জনি সাংস্কৃটিক জীবেনের সাথে জরিত, দুইজনই একে অপরকে love করে marry করেছেন। আপনারা দুইজনই কাগজে English এ একটি sentence লিখুন যেখানে love এবং s-e-x ঠাকবে’।
শাওন কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলেন-
‘কেন লাভ আর সেএণ্ডক্স দিয়ে বাক্য হতে হবে?’
উপস্থাপিকা বললেন-
এটে আমাডের new generation এর ছেলে মেয়েরা correct ধারণা গেইন করতে পারবে।
অগত্যা দুইজনই কাগজে লেখা শুরু করলেন।
শাওন অনেক চিন্তা ভাবনা করে লিখলেন,
when two people love each other very much just like Humayun and I do, their attraction grow physically and spiritually, it is then morally acceptable to exchange s-e-x romantically.
এবার হুমায়ূন আহমেদের কাগজটি নেয়ার পর দেখা গেল তিনি লিখেছেন তিনটে শব্দ –
I love s-e-x.
——————————–
ডিসক্লেমার -বাই দ্য ওয়ে, এটি একটি নির্দোষ কৌতুক। হুমায়ূনভক্তরা দয়া করে মনঃক্ষুণ্ণ হবেন না। এই কৌতুকের সাথে সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘সুপার হিরো’ শিরোনামের লেখাটিতে আহমদ শরীফকে মূর্খ বলার কিংবা আসিফ মহীউদ্দীনের এই বিশ্লেষণমূলক লেখার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এর আগে রিচার্ড ডকিন্স, জাকির নায়েক, শাফায়েত সহ অনেককে নিয়েই কৌতুক করা হয়েছে, এইটাও সেরকমই একটা কৌতুক।
হুমায়ূন আহমেদ বর বড় বাক্য পছন্দ করেন না (এটা নিয়ে আনিসুল হকের একটা সমালোচনা ছিলো বোধ হয়, যেটা মুহিত হাসান দিগন্ত কোথাও উল্লেখ করছিলেন সম্ভবত)।
উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন –
” কমলা একজন সুন্দর,লম্বাচুলের দীর্ঘ-কর্ণ, তিলবিশিষ্ট ফর্সা নারী। তিলটাই তার চেহারায় আলাদা বিশিষ্টতা এনে দিয়েছে। আপন মনে বসে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছে আর ভাবছে…”
-এই বাক্যটি হুমায়ূন আহমেদের কোন বইয়ে থাকবে না। ‘কমলা একজন সুন্দর,লম্বাচুলের দীর্ঘ-কর্ণ, তিলবিশিষ্ট ফর্সা নারী’র বদলে উনি লিখবেন ,
– ‘কমলা এসেছে । লম্বা ধরণের মেয়ে। ধবধবে ফরসা। লম্বা চুল। মুখে তিল। মায়াবতী মেয়ে। বড়ই মায়াবতী’।
এর পাশাপাশি উনি বিশিষ্ট ফিশিষ্ট, শ্রদ্ধেয় টাইপের কঠিন শব্দ কিংবা যুক্তাক্ষর তার লেখায় আনবেন না। আনতে পারেন যদি কোন চরিত্র নিয়ে ফাজলামো আর গুঁতাগুঁতি করতে ইচ্ছে হয় তার। যেমন সালাম আকবর নামের কোন চরিত্র তৈরি করলেন লেখায়, যিনি সমাজে মান্য গণ্য লোক, কিন্তু ভিতরে ভিতরে চুপা জামাতি টাইপ কেউ। কম বয়সী মেয়ে দেখলেই ছোক ছোক করে। উনার মতোই লিবিডো বেশি। তখন উনি লিখবেন, “সালাম সাহেব একজন ভদ্রলোক। বিশিষ্ট ভদ্রলোক”। শ্রদ্ধেয় শব্দটাও তাই। উনি মূলতঃ মূর্খ মানুষজনকে বোঝাতে ব্যবহার করেন। অনেকেই মনে করেন, প্রথম আলোর ‘সুপার হিরো’ নামের আহমদ শরীফ আর সিরাজুল ইসলামকে ‘শ্রদ্ধেয়’ বলেছেন সেটা কাকতালীয় নয়।
কাজেই লাভ আর সেএণ্ডক্স দিয়ে বাক্য করতে বললে সম্ভবতঃ উনি ওটাই লিখতেন, কারণ এর চেয়ে ছোট বাক্য সম্ভব নয় বলেই মনে হয়।
————————————–
উৎসঃ ফেসবুক
ফেব্রুয়ারী ০২, ২০১২ । ০২৩৫ অপরাহ্ন
Leave a Reply