‘শিক্ষিত’ পুরুষ এবং লেখকদের পাশাপাশি বেশিরভাগ ‘শিক্ষিতা’ নারী এবং লেখিকারাও তসলিমা নাসরিনকে ভুল বুঝেন এবং হিংসা করেন! আজব!!
২. অনেকেই মনে করেন তসলিমা নাসরিন এবং সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করা অন্যান্য নাস্তিকরা হিটসিকার। কথাটা তারা কোন দিক বিবেচনা করে বলেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। কেউ সত্যি সত্যি হিটসিকার হলে নিশ্চয় যে দিকে গেলে বেশি হিট পাওয়া যাবে, সেদিকে যাবে। তাই নয় কি? আমাদের উপমহাদেশে এবং বাংলাভাষা-ভাষীদের মধ্যে যেখানে অধিকাংশ লোকই আস্তিক, সেখানে তাদের পক্ষে বললে বেশি হিট নাকি বিপক্ষে বললে বেশি হিট হওয়া সম্ভব?
৩. অনলাইনে কারা বেশি জনপ্রিয়–নাস্তিকেরা নাকি আস্তিকেরা। আস্তিকদের অর্থাৎ যারা ধর্মকে ডিফেণ্ড করে এবং নাস্তিকদের পচিয়ে পোস্ট দেয়–তাদের পোস্টের লাইক-শেয়ারের সাথে নাস্তিকদের পোস্টের লাইক-শেয়ার তুলনা করে দেখেছেন?
৪. আস্তিকদের পোস্টে যেখানে আলহামদুলিল্যাহ সোভাহানাল্যাহ মাসাল্যার বন্যা বইয়ে যায় সেখানে নাস্তিকদের পোস্টে নাস্তিকদের মা-বোন তুলে অজস্র গালাগালির কমেন্ট। কেউ হিটসিকার হলে এভাবে যেচে গালাগালি খেতে আসবে?
৫. ফেসবুকে সর্বোচ্চ ফলোয়ার কাদের? লক্ষ্য লক্ষ্য লাইক পাওয়া বাঁশেরকেল্যা-মুন্নারেডিও টাইপ পেজগুলো কাদের?
৬. নেতা-নেত্রীরা দাড়ি-টুপি-তসবি সহ নামাযরত অবস্থায় ছবি তুলে মিডিয়াতে প্রচার করে কেন? জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য, হিট খাওয়া জন্য কোনো পলিটিশিয়ান নাস্তিকতার পক্ষে কিছু বলেন?
৭. ধর্মের বিপক্ষে বলার জন্য যেখানে নাস্তিকরা চাপাতির কোপ খাচ্ছে, খুন পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধু হিট খাওয়ার জন্য কেউ নাস্তিকতার পক্ষে লিখবে?
৮. হিট খেতে চাইলে তসলিমা নাসরিন আর নাস্তিকদের সমালোচনা করে বিপক্ষে পোস্ট দিন। এদের লেখা না পড়া থাকলেও এদেরকে শুধু মাগী-খানকী ইত্যাদি বলে বা এদের মা-বোনদের শুধু চ-বর্গীয় গালাগালি করেও পোস্ট দিতে পারেন। তাতেই আপনি হিট! তখন নিজেই বুঝবেন হিটসিকার কাহাকে বলে, উহা কত প্রকার ও কী কী?
৯. হিট খাওয়ার আরো কিছু উদাহরণও কিন্তু হাতের কাছেই আছে। সুশীলগিরি ফলান। বিদেশিদের আইডিয়া চুরি করে বাংলায় পোস্ট দেন। ক্যাচালীয় ইস্যু এড়িয়ে চলেন। সবার মন রক্ষা করে সুশীলীয়, আবেগীয় পোস্ট দেন। আপনার কাছে সবই সত্য, তাই কারো বিপক্ষে যাওয়ার দরকার নাই। সবার সাথে জ্বী হুজুর জ্বী হুজুর করে চলেন। পেইড পোস্ট দেন, টাকাও পেলেন, নিজের পোস্টও হিট হলো। এরকম শত শত হিট পোস্টের উদাহরণ তো চোখের সামনেই আছে।
১০. ব্যক্তিগত ভাবে অনলাইনে অনেকদিন হলো। কী ধরনের পোস্ট দিলে লাইক বেশি পাওয়া যায়, সেসব ব্যাপারে সুশীলদের মত মাস্টার না হলেও অনেক কিছুই চোখের সামনে দেখেছি। জানা আছে অনেক কিছুই। আগে খেয়াল না করলেও নিজের ওয়ালের কোন পোস্ট বেশি লাইক পায় আর কোনটা পায় না, সেসবও দেখলাম লাস্ট কয়েকদিনে। যদি হিটসিকার হতাম তাহলে কোনো পোস্ট বেশি লাইক পেলে ঠিক পরের পোস্টগুলো কেন সেই বেশি লাইক পাওয়া পোস্টের মত করে দেই না–কখনো ভেবে দেখেছেন? শুধু একটা-দুইটা শব্দের জন্য পোস্টে লাইক অর্ধেক কমে যায়, তবুও কেন সেইসব শব্দ ব্যবহার অফ রাখি না, ভেবে দেখেছেন?
===============================
১১. অনেকেই বলেন, নাস্তিকদের দৌড় ফেসবুক পর্যন্ত। অনেকেই উপদেশ দেন, ফেসবুকে লিখে কী হবে?…দেশের বৃহত্তম জনসাধারণের পালস ফেসবুকে পাওয়া যাবে না।…ইত্যাদি…। ঘটনা সত্য। আপনি যদি পলিটিক্স করেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকে, তাহলে ফেসবুকে সেটাকে সফল করার সম্ভাবনা খুবই কম। এজন্য আপনাকে মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে, জনসাধারণের সাথে মিশতে হবে। ফেসবুকের ‘হিটসিকার’ নাস্তিকদের সেই স্বার্থ নেই, তাই এরা এখানেই পচছে। আপনার এর জন্য খুশিই হওয়া উচিত।
১২. বেগম রোকেয়া তার সময়ে কত শতাংশ মানুষের কাছে যেতে পারছিলেন তার লেখালেখি দিয়ে? রবীন্দ্রনাথের বই কয়জনে কিনে পড়তেন তার সময়ে? শরৎচন্দ্রের পাঠক বেশি ছিল নাকি হুমায়ুন আহমেদের? আরজ আলী মাতুব্বররের সময়কালে উনার লেখার পাঠক ছিল কত? আহমদ শরীফদের নাম দেশের কয়জনে শুনেছেন? তেনারা নিজেদের সময়ে সামগ্রিক ভাবে দেশের কত শতাংশ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পেরেছিলেন? কতটুকু পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন? সেই পরিবর্তনটা কোথায় হয়েছিল?
১৩. ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনো স্বার্থ নেই। তাই খাই-দাই-ঘুমাই- আর অবসর সময়ে ফেসবুকে মনের কথাগুলা মন খুলে বলি। এই সামান্য কারণে অজস্র গালাগালিসহ খুন হয়ে যাওয়ারও হুমকি পাই। আর এতেই মনোবলটা অনেকখানি বেড়ে যায় যে কাজ হচ্ছে। সো, কে কী বলল, না বলল, তাতে আমার একটা হিন্দি চুলও ফেলানো যাবে না। এই হিন্দি চুল ফেলানোর ভারটা আল্যাকেই দিয়ে রাখছি।
================================
১৪. পরিশেষে তিনটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন–এক) রোগ-শোকের কথা (গোপন রোগসহ) ডাক্তারের কাছে কতটা সংকোচহীন ভাবে এবং খোলা মনে বলতে পারেন? দুই) জানাশোনা, পরিচিত, আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের কেউ ধর্ষণ বা যৌন-নিগ্রহের শিকার হলে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ঘটনা খুলে বর্ণনা করেন কিনা?
১৫. এবং তিন) গোপন-রোগ এবং ধর্ষণ-যৌন-নিগ্রহ–এগুলো কি অশ্লীল শব্দ, বা অশ্লীল বিষয়?
Leave a Reply