মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
পর্ব ০১ > পর্ব ০২ > পর্ব ০৩ > পর্ব ০৪ > পর্ব ০৫ > পর্ব ০৬ > পর্ব ০৭ > পর্ব ০৮ > পর্ব ০৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪
নৈতিকতা এবং ন্যায়বিচারের কথা ভাবছেন আপনি? হ্যাঁ, অসহায় নিরপরাধ বন্দিনীদের সাথে দয়াল নবীর ন্যায়বিচারের এই হলো নমুনা। শুধু রায়হানা নয়, জাওয়াহিরা এবং সাফিয়া নাম্নী আরও দুই রক্ষিতা ছিল নবীর। জওয়াহিরা তার হাতে আসে বানু আল-মুস্তালিক অভিযান থেকে, সাফিয়া আসে খায়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান থেকে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মহম্মদের উপপত্নীদের অধিকাংশই ছিল হয় ইহুদি নয়তো খ্রিষ্টান। রায়হান, জওয়াহিরা ও সাফিয়া ছিল ইহুদি, মারিয়া কিবতি ছিল খৃষ্টান। মুখ বাঁচাতে ইসলামপন্থীরা এখনই সমস্বরে কোরাস গেয়ে উঠবেন যে, মহম্মদ বড়োই দয়ালু ছিলেন, ঐসব অসহায় তরুনীদের দুঃখ দেখে তাঁর কোমল প্রাণ কেঁদে উঠল। তাই তিনি তাদের গ্রহণ করে দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছেন। তাঁরা আমাদেরকে আরও বিশ্বাস করতে বলবেন যে, ঐসব বন্দিনীরা মহম্মদকে বিয়ে করে খুবই সুখী হয়েছিল কারণ মহম্মদকে দেখামাত্র তার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিল তারা।
কী অবিশ্বাস্য অপূর্ব যুক্তি, লিখিতভাবে মানুষের ইতিহাস শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অকাট্য যুক্তি কেউ আবিষ্কার করতে পেরেছে বলে অন্তত আমার জানা নেই। মাত্র ঘন্টাকয়েক আগে যার হাতে তার স্নেহময় পিতা প্রাণ দিয়েছে, বড় আদরের ভাইটি অকালে ঝরে গেছে, প্রেমময় স্বামীর প্রিয় মুখটি অশ্বের খুরাঘাতে দলিতমথিত হয়েছে, সেই হত্যাকারীর প্রেমে সে রাতারাতি পাগল হয়ে গেল! মহম্মদ যা করেছেন, সে যুগে তা-ই ছিল রীতি। বর্তমান যুগে এসে কতগুলি খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সেই বন্য রীতিকে জাষ্টিফাই করা অমানবিক। মানবতার প্রতি চরম অবমাননাকর।
এর আগেও বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পরিচালিত অভিযানের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে কাফের রমণীদের রসালো শরীরের প্রতি জিহাদিদের অপরিমিত লোভ। এতই প্রচণ্ড ছিল সেই লোভ যে, কাঙ্ক্ষিত নারীটি করায়ত্ত হওয়ার পর বিন্দুমাত্র বিলম্ব সইতো না জিহাদিদের। বন্দিনীদের ঋতুস্রাবও নিবৃত্ত করতে পারতো না তাদের, তার মাঝেই বন্দিনীদের ওপর চড়ে বসতো তারা। এমতাবস্থায় স্বয়ং আল্লাহপাককে বাণী নিয়ে এগিয়ে আসতে হলো, ডিক্রি জারী করতে হলো যে, পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরেই কেবল বন্দিনীদের ধর্ষণ করা যাবে। ঐসব ইসলামী সৈনিকদের যৌনতাড়না এতটাই বর্বর ও ঘৃণ্য ছিল যে, তারা এমনকি কোনোপ্রকার গোপনীয়তা অবলম্বনেরও ধার ধারত না। এমনও হয়েছে যে, স্বামীদের সামনেই বন্দিনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জিহাদিরা। স্ত্রীকে এক নরপশু খাবলে খাচ্ছে, বন্দী স্বামী চোখ মেলে তাই দেখছে। ধর্মপ্রচারের নামে মানবতার এত বড় অপমান বিশ্ব সংসারে আর কখনও ঘটেছে কি?
নিচের হাদিস দু’টি পড়ুন এবং যুদ্ধবন্দীদের মর্যাদার প্রশ্নে জেনেভা কনভেনশনে রচিত আইনের সাথে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী আইনের তুলনা করুন।
প্রথম হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে, কিছু কিছু বন্দিনী ছিল যারা ছিল বিবাহিতা এবং তাদের স্বামী তখনও বেঁচে, যদিও স্বামীরা ছিল অমুসলিম কাফের। এই ধরনের বন্দিনীদের সাথে সেক্স করতে কোনো কোনো জিহাদি সঙ্কোচ বোধ করত। কেউ কেউ আবার পরাজিত শত্রুটির সামনেই তার স্ত্রীকে ভোগ করতে বেীম পছন্দ করত। এ এক ধরনের যৌনবিকৃতি, যার কিছু নমুনা আমরা দেখেছি একাত্তরে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পাঞ্জাবি এবং পাঠান সৈন্যরা একাত্তরে বাঙালি রমণীদের ওপর যা করেছে, তার পূর্ণ সমর্থন মেলে এই হাদিসগুলোয়। ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী একাত্তরে যা কিছুই করে থাকুক, ইসলামী শাস্ত্রের বাইরে কিছু করেনি। ইসলামের প্রাথমিক গাজওয়াগুলিতে নবীর বাহিনী ঠিক এমনটিই করত।
দ্বিতীয় হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে, অনেক জিহাদিই পৌত্তলিক স্বামীটির সামনে তার স্ত্রীর উপর বলাৎকার করতে দ্বিধান্বিত ছিল। কিন্তু মহম্মদ এখানে বিপদের গন্ধ পেয়েছিলেন, তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, জিহাদিরা যা করতে চায়, তা করতে না দিলে বিপদের সম্ভাবনা আছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আল্লাহ যদি এই আনন্দোৎসবের অনুমতি না দেন, জিহাদিরা বেঁকে বসতে পারে, তাদের সমর্থন শূন্যে মিলিয়ে যেতে খুব বেশী দেরি হবে না। সুতরাং নবী মহামহিম আল্লাহর মধ্যস্থতা যাচ্ঞা করলেন, তরিৎগতিতে আরশ-মোয়াল্লা থেকে মঞ্জুরি নেমে এলো। মহান আল্লাহ কাফের রমণীদের (বিবাহিতা হলেও) ভোগ করার অনুমতি প্রদান করে ধন্য করলেন জিহাদিদের। কিছু কিছু জিহাদি স্বামী বর্তমান থাকতেও বন্দিনীদের সাথে সেক্স করে এবং কেউ কেউ তা করতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়।
সুনান আবু দাউদ, বুক নং-১১, হাদিস নং-২১৫০:আবু সাইদ আল খুদরি বলেন, “হুনায়েন যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাসে এক অভিযান পাঠান। তাদের সাথে শত্রুদের মোকাবেলা হলো এবং যুদ্ধ হলো। তারা তাদের পরাজিত করল এবং বন্দী করল। রাসুলুল্লাহর (দঃ) কয়েকজন অনুচর বন্দিনীদের স্বামীদের সামনে তাদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে অপছন্দ করলেন। তারা (স্বামীরা) ছিল অবিশ্বাসী কাফের। সুতরাং মহান আল্লাহ কোরানের আয়াত নাজেল করলেন- “সমস্ত বিবাহিত স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্যে অবৈধ); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী (যুদ্ধবন্দিনী)- আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন।” অর্থাৎ- পিরিয়ড শেষ হলে তারা তাদের জন্যে বৈধ (৪:২৪)।
যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস বৈধ, তবে শর্ত থাকে যে তার মাসিক স্রাব শেষ গেছে কিংবা গর্ভবতী হলে তার গর্ভ খালাস হয়ে গেছে। তার যদি স্বামী থেকে থাকে, বন্দী হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গন্য হবে। (কোরান-৪:২৪, সহি মুসলিম-৮:৩৪৩২)।
সহি মুসলিম, বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৩২:আবু সাইদ আল খুদরি (রাঃ) বলেছেন যে হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দী তাদের হাতে আসল। রাসুলুল্লার কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন মহান আল্লাহ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন- “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিন হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া”।
(চলবে)
Leave a Reply