লিখেছেন: আরিফুর রহমান
আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে ‘ইদ মোবারক’ বলি না। এটা সউদি আবিষ্কার, আরবীতে কি বোঝানো হয়, তা বোঝার আমার কোন দরকার নাই। সংযমের নামে পুরো একটা মাস যেভাবে মুসলিমদের ওপর এক ধরনের অত্যাচার চাপিয়ে দেয়া হয়, আর বাকিদের বাধ্য করা হয় নানা প্রকার বিধিনিষেধে, তা রীতিমতো মানবতাবিরোধী।
ইসলামের নামে মুসলিমপ্রধান দেশগুলিতে ভিন্নধর্মী ও নিধর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়, তা মানবতাবিরোধী।
এহেন ঈমানী জোশ বাড়াবার মাসের পর যে ঈদের আয়োজন করা হয়, তার কোন প্রচলণ এই অঞ্চলে ছিলো না। ইন ফ্যাক্ট প্রতিটা অঞ্চলের নিজস্ব আনন্দানুষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে, নির্যাতন করে (মনে করার চেষ্টা করুন একুশে ফেব্রুয়ারীর বোমা হামলা, বাউলদের ওপর ইসলামিস্টদের নির্যাতন) প্রতিষ্ঠা করে সউদি উপনিবেশবাদ, এবং তাদের ধর্মের নামে সংস্কৃতির আছর।
ধর্ম যদি সত্যিই সুস্থ ও শক্তিশালী নৈতিক চরিত্রের মানুষ গড়ে তুলতে পারতো তাহলে পাকিস্তান এমন একটি দুর্নীতিপরায়ন রাষ্ট্র হতো না, পাকিস্তানীরা বিশ্বজুড়ে চরিত্রহীন জাতি বলে নিন্দিত থাকতো না।
বাংলাদেশও কম যায় না। আমরাও দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই। ভাগ্য ভালো এখনো শিক্ষার নামে কিছুটা পরিশোধনের চেষ্টা চলে শিশুদের, নয়তো মাদ্রাসায় ছেয়ে যেতো বাংলাদেশ (চলছি আমরা, সেদিকেই), আর পাকিস্তানের চেয়েও বীভৎস হতো আমাদের জাতীয় চেহারা।
এহেন ধর্মীয় সংযমের নামে বিবিধ অ-সংযম এবং উদ্ভটত্বের চর্চার পরে আবার ঈদের নামে অদ্ভুত একটা দিন আমরা পালন করি। সবাই আনন্দ করে। কিন্তু আনন্দটা কি? সবার বাসায় সবাই যায়, একই ভাজাপোড়া খায়। আজকে আনন্দের দিন, তার একটা ভাব সবাই মুখে নিয়ে ঘুরে।
কিন্তু সত্যিই কি এটা আনন্দের দিন? আমরা কি অর্জন করেছি? আদৌ কি কোন অর্জনের এই আনন্দ? সবার সাথে আনন্দ ভাগের নামে দেখলাম বিবিধ বেনিয়া ব্যবসা ফেঁদে বসে, কোন কোন সচ্চরিত্র বেনিয়া আবার বেতনই দিতে চায় না।
বাংলাদেশ এখনো সেই ভাগাড়েই পড়ে থাকে, মেগাসিটির নাম নিয়ে একটা ধোঁয়াময় জঙ্গলে নাগরিকেরা বাস করে, একটা ভালো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করতে পারি নাই, সব চেষ্টা চোরারা খেয়ে ফেলে ঘুষের মোড়কে, কুইক রেন্টাল দিয়ে বিদ্যুত কিনে উচ্চমুল্যে টিভি দেখা চলে, স্কুল কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উৎসব করে ফাঁস হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা, যার বড়াই উপরে করলাম সামান্য, তাকে ধ্বংস করতে সকল প্রচেষ্টা চলে, সরকারী তত্বাবধানেই। রানা প্লাজার শ্রমিকেরা আত্মহত্যা করে চিকিৎসার অভাবে। রাষ্ট্রের নাগরিক, তা যে যতোই অচ্ছ্যুৎ হোক না কেন, আগুনে পুড়ে হত্যাকান্ডের শিকার হয়, সরকারী দলের গুন্ডাদের তত্বাবধানে। সেই গুন্ডারা ঘাড়ের কেশর দুলিয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশকারীদের হত্যার ফতোয়া দেয়, ৫৭ ধারার ভয় দেখিয়ে।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নাকি রিজার্ভ, কিন্তু এখনো নিজেদের সেই বিলিয়ন ডলার দিয়ে একটা ভালো পদ্মাসেতু করা গেলো না, সেখানেও পারষ্পরিক ক্লিকবাজি চলছে। ঢাকা – চট্টগ্রাম, এবং বিবিধ শহরগুলির মাঝে কোন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয় নাই।
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা কি আদৌ তুলবো? ইটা খাবার ভয় আছে বিলকুল। জনগনের পয়সার চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় সেবন করে গোলামাজম বেঁচে থাকবে রাজার হালতে। বাকিগুলিরও স্বাভাবিক মৃত্যু হবে, এমনটাই বিশ্বাসঘাতক আমাদের গনতন্ত্রী সরকার।
তাহলে বলুন, এই বালছাল সউদি আনন্দ কিসের? এসব ভুলে থাকার সেলিব্রেশন? জাতি হিসেবে সত্যিকার কোন অর্জন করতে পারতাম যদি, সেই আনন্দে সবাই শরীক হতে পারতো। কিন্তু পুঁজি, অকার্যকর গনতন্ত্র, ধর্মীয় চোর চোট্টাদের সাথে মাখামাখি আমাদের এক হতে দেয় না।
জনগন নাকি শক্তি, কাদের শক্তি? মোল্লাদের আর গার্মেন্ট মালিকদের।
বাকিরা ডুবে থাকুন ব্যর্থতার থকথকে ড্রেনে, সফলতার স্বাদ মনে করে।
Leave a Reply