১. মহাভারতে কি নরকের উল্লেখ আছে?
২. মহাভারত পড়ে প্রথম যে উপলব্ধিটা হয়েছিল–কর্মই ধর্ম। সাধুর কর্ম সৎ পথে চলা। চোরের কর্ম চুরি করা। যার যার কর্মই তার তার ধর্ম। দোষবাচক কর্ম বা গুণবাচক কর্ম–সেগুলা পরের কথা। আপেক্ষিক।
মহাভারতে যতগুলো ঘটনা ঘটে–সবই কর্মফল। গান্ধারী সেই কবে শত ফড়িং দিয়ে মালা গেঁথে ছিল, ফলে তারও শতপুত্রশোক সইতে হলো। গান্ধারীকে এই কর্মফল ভোগ করাতে কৃষ্ণের হাত ছিল। তাই গান্ধারীর অভিশাপে কৃষ্ণের বংশও বিনাশ হলো নিজেদের মধ্যে কলহের থেকে। আবার দুর্য্যোধনের উরুভঙ্গ হয়, কেননা সে সেখানে দ্রৌপদীকে বসাতে চেয়েছিল। ওদিকে দ্রৌপদী দুর্য্যোধনকে আন্ধার ছেলে বলে পরিহাস করেছিল। এরকম অনেক উদাহরণ টানা যায়। ব্যাপারগুলো একটু ভালো করে দেখলে দেখা যায় প্রত্যকের পরিণতির পিছনে তাদের কর্ম দায়ী। খুব সম্ভবত এটাই মহাভারতের প্রধান শিক্ষা।
৩. বাঙালীর সত্য কথা বলার সৎ সাহস নেই বলে বাংলায় আত্নজীবনী লেখা হয় না বললেই চলে। ব্যতিক্রম তসলিমা নাসরিন। সাহিত্য আলোচনায় না যাই। কিছু গোপন করে নিজেকে মহৎ হিসাবে উপস্থাপন করেন নাই। সোজা কথা–আমি আমি ভাবটা নাই। সহজ সরল ভাবে একের পর এক জীবনের কথা বলে গেছেন।
যা বলেছেন তা আমাদের প্রায় অধিকাংশের জীবনের সাথে কোনো না কোনো ভাবে মিলে যাবে। আর মাঝে মাঝে যে শুনি দেশের অধিকাংশ মেয়ে যৌন হয়রানির স্বীকার হন–কথাটা নেহাত মিথ্যা নয়। তসলিমা নাসরিন সেসব ঘটনাও তুলে ধরেছেন কোনো প্রকার জড়তা ছাড়াই। এই নিয়ে অনেকের আবার আপত্তি। এই দিকটা নাকি এত খোলামেলা ভাবে বলা ঠিক নয়। আসলেই তাই। বললে প্রতিটা পুরুষ তার আসল রূপ দেখে নিজেরাই যে লজ্জা পায়!
যা বলতে চাইছি, মহাভারতের যুগ পুরানো। বর্তমানে কি করলে কি হয়, কেন হয়, কিভাবে হয়–তার অনেক স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যাবে তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীতে। কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের মেয়েরা সেসব কি পড়ে? পড়ে কি কিছু শেখে? আর মা বাবারাই বা তাদের সন্তানের জীবনে এসব অযাচিত সম্ভাব্য ঘটনাগুলো এড়াতে কতটা পদক্ষেপ নেন?
৪. এখন অনেকেই ধর্ম নিয়া প্রশ্ন কইরা তালগাছবাদীগো দৌড়ের উপর রাখেন। এসব বেসিক প্রশ্নগুলো খুব সম্ভবত আরজ আলী মাতুব্বর আমাদের সামনে তুলে আনছেন। তবে মনে হয় আবাল-বকরিগুলারে আসল দৌড় শুরু করাইছেন তসলিমা নাসরিন। তার “আমার মেয়েবেলা” পড়তে পড়তে কত কিছু পাইলাম যেসব টপিক আমরা এখন তুইলা বকরিগুলারে দৌড়ের উপর রাখি–
– চাঁদের নিজস্ব আলো আছে!
– পৃথিবী স্থির হয়ে আছে, পাহাড়গুলো পৃথিবীকে কিলকের মত আটকে রেখেছে, তাই পৃথিবী কোথাও হেলে পড়ছে না।
– পুরুষের পাঁজরের একটি হাড় থেকে বানানো হয়েছে তার সঙ্গিনী। – মেয়েদের ঘাড়ের একটি হাড় বাঁকা, তাই তারা সিধে কথা বলে না, সিধে পথে চলে না।
– মেয়েরা হচ্ছে শস্যক্ষেত্র, পুরুষেরা যেমন ইচ্ছে গমন করবে, মেয়েরা স্বামীর অবাধ্য হলে স্বামী তাদের বিছানা থেকে তাড়াবে, তারপর বোঝাবে, তারপরও অবাধ্য হলে পেটাবে।
– মেয়েরা বাপের সম্পত্তির ভাগ পাবে তিন ভাগের এক ভাগ, পুরুষেরা পাবে দুইভাগ।
– পুরুষেরা এক দুই তিন করে চারটি বিয়ে করতে পারে। নারীদের সে অধিকার নেই।
– পুরুষেরা তালাক দিতে পারে কেবল তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই। নারীদের অধিকার নেই তালাক দেবার।
– সাক্ষী দিতে গেলে এক পুরুষ সমান দুই নারী।
আরো কত কি। পড়লেই যে কত কিছু জানা যায়!
৫. মাটি দিয়া আদমরে বানানি নিয়া একটা পয়েন্ট দেখলাম। তাতে এই ঘটনাটা আমার মনে পড়ল–
গরমের সময় চামড়ার উপরে আঙুল টিপে ডলা দেই–মাটি আর মাটি। এত মাটি কই থিকা আসে!
–আল্যায় তুমাগো মাটি দিয়া বানাইছে না? বোরখাওয়ালী উত্তর দেয় আর হাসে।
৬. ইসলামে কুত্তার অনেক দুর্নাম-বদনাম। বাড়িতে কুত্তা থাকলে ফেরেস্তারা বাড়িতে আসে না। কুত্তায় আরো অনেক আকাম-কুকাম করে। যেমন এই পয়েন্টটা দেখেন (পুরাই ক্লাসিক)–
“গায়ে সাবান মাখতে মাখতে উঠোনে বসে জিভ বের করে হাঁপাতে থাকা কুকুরটিকে বলি–এই কুত্তা, কাডল আর গুএর রঙও ত একরকম, সত্যি না?
কুকুরের লাল জিভখানা বেরিয়েই থাকে, উত্তর নেই। এই কুকুরটির বড় দুর্নাম পাড়ায়। পাকঘরে ঢুকে পাতিলে মুখ দেয়, মাংস মুখে নিয়ে লেজ তুলে দেয় দৌড়। পাড়ার ছেলেরা একে দেখলেই ঢিল ছোঁড়ে।
সাবান মেখে লোটা ভরে পানি নিয়ে গায়ে ঢালি, আর কুকরটিকে বলি–হজ্বে যাইবি? তর সাত খুন মাপ হইব। কবিরা গুনাও।”
৭. হজ্বে যাইয়া আমগো আশরাফুল যদি ফুলের মত পরিত্র হইয়া যাইতে পারে, তাইলে কুত্তায় কী দোষ করল?
Leave a Reply