…অনেকে বলেন আরব সমাজে বহু বিবাহ অবাধে প্রচলিত ছিল কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তেমন ছিলনা। যতটুকু মনে করা হয় বহুবিবাহ প্রথা তার চাইতে অনেক কম ছিল। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ ছিল বহুল প্রচলিত এবং সহজ। এছাড়াও বেশ্যাবৃত্তি, যার অপর নাম ছিল অস্থায়ী বিবাহ তাও প্রচলিত ছিল। ধর্মের রীতিনীতি সমর্থিত যৌনসংগম অনেক সময় করা যেত। খুব সহজেই কেনা যেত সুন্দরী এবং তরুণী যৌন-দাসীদের। খুব সম্ভবত তাঁদের বিবাহের শর্ত ছিল যে মুহাম্মদ কোন দ্বিতীয় স্ত্রী নিতে পারবেন না। ধনবতী খদেজার পক্ষে এই দাবী করা ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক।
খাদিজার মৃত্যুর দুই অথবা তিন মাসের ব্যবধানে মুহাম্মদ সওদাকে বিবাহ করলেন এবং সেই সাথে আবু বকরের কন্যা আয়েশাকে বাগদত্তা স্ত্রীও বানালেন। অনেকেই বলেন আয়েশার সাথে বিবাহের কারণ ছিল দুই বন্ধুর মধ্যে বন্ধুত্ব গাড় করা।
এই একই বছরে (খুব সম্ভবত: ৬১৯ ৬২০ সালে) যখন খদিজার মৃত্যু ঘটল তখন নবী এক স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নটা ছিল এই রকম: নবী দেখলেন এক পুরুষ লোক কাউকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ ব্যক্তি তাঁকে বলল: “এই-ই হচ্ছে তোমার নববধূ। তুমি একে খুলে দেখ।“ নবী রেশমি কাপড়টা উন্মুক্ত করে দেখলেন যে ঐ মেয়েটি হচ্ছে আয়েশা। কিন্তু আয়েশা তখন মাত্র ছয় বছরের। আর নবী পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেছেন। তা ছাড়াও আবু বকর কথা দিয়েছেন মুতিম কে যে তিনি আয়েশাকে তুলে দিবেন মুতিমের পুত্র যুবায়েরের হাতে। তার পর নবী স্বগতোক্তি করলেন: “এই-ই যদি আল্লাহর ইচ্ছা, তবে তাই হোক।’’ কয়েক রাত্রির পর নবী দেবদূতকে (ফেরেশতা) বললেন: “আমাকে দেখান”।’ ফেরেশতা রেশমি কাপড় উঠালো, আবার দেখা গেল আয়েশাকে। আবার নবী বললেন: “এই-ই যদি আল্লাহ্র কাছ থেকে, তবে তাই-ই হোক।’’
আয়েশা (রা:) হইতে বর্ণিত আছে, হযরত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাঁহাকে বলিয়াছেন, স্বপ্নে আমায় দুই বার তোমাকে দেখান হইয়াছে—এক লোক রেশমি কাপড়ে তোমাকে বহন করিয়া নিয়া আসিয়াছে, অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, এইটি আপনার স্ত্রী। সেমতে আমি রেশমি কাপড়ের আবরণ উন্মোচন করিলাম এবং দেখিতে পাইলাম তুমি-ই।
নিদ্রা ভঙ্গের পর আমি ভাবিলাম, ইহা যখন আল্লাহর তরফ হইতে তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই বাস্তবায়িত করিবেন। (বোখারী শরীফ, মাওলানা আজিজুল হক অনুদিত, খণ্ড ৫, হাদিস ১৬৯২)
হযরত আয়েশার (রাঃ) সাথে বিবাহ
ওয়াকেদী ও হাকেম ওরয়ার মুক্ত ক্রীতদাস হাবীব থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত খাদিজার (রাঃ) ইন্তিকালের কারণে নবী করীম (সাঃ) খুবই মর্মাহত হন। হযরত জিবরাইল আয়েশা (রাঃ) কে দোলনায় নিয়ে তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন: এই বালিকা আপনার দুঃখ বেদনা লাঘব করে দিবে। সে খাদিজার (রাঃ) স্থলাভিষিক্ত হবে।
আবূ ইয়ালা, বাযযার, ইবনে ওমর, আদনী ও হাকেমের রেওয়ায়েতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন: রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বিয়ে করেননি, যতদিন না জিবরাঈল আমার আকার আকৃতি তাঁর সামনে প্রকাশ করে দেন। তিনি আমাকে এমন অবস্থায় বিয়ে করেন যে, আমি শিশুদের পোশাক পরিহিত ছিলাম। আমার বয়স কম ছিল। তিনি যখন আমাকে বিয়ে করলেন, তখন আল্লাহতায়ালা কম বয়সেই আমার মধ্যে লজ্জা শরম সৃষ্টি করে দেন। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৪৩)
হযরত সওদা বিনতে যমআর সাথে বিবাহ
ইবনে সা’দ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত সওদা বিনতে যমআ (রাঃ) সুহায়ল ইবনে আমরের ভাই সকরান ইবনে আমরের বিবাহে ছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, রসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর সম্মুখ দিয়ে আসছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘাড়ে পা রেখে দিয়েছেন। তিনি স্বীয় স্বামীর কাছে এই স্বপ্ন বর্ণনা করলেন। স্বামী বললেন: এই স্বপ্ন সত্য হলে আমি মারা যাব এবং রসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাকে বিয়ে করবেন। এরপর সওদা (রাঃ) দ্বিতীয় রাতে স্বপ্ন দেখলেন সে, আকাশ থেকে একটি চাঁদ তাঁর উপর নেমে এসেছে এবং তিনি শায়িত। এ স্বপ্নের কথা স্বামীর কাছে ব্যক্ত করলে স্বামী বললেনঃ যদি তোমার স্বপ্ন সত্য হয়, তবে আমি আর কয়েকদিন মাত্র জীবিত থাকব, এরপর ইন্তেকাল করব। আমার পরে তুমি বিয়ে করবে। সকরান সেদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েকদিন পরেই ইন্তেকাল করেন। এরপর হযরত সওদা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবাহে আসেন। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৪৩-৩৪৪)
Leave a Reply