ইংরেজি ভাষায় বিশেষজ্ঞ, মানে বিশেষ-ভাবে-অজ্ঞ হওয়ার কারণে দেশের বাইরের ব্যাপার-স্যাপারেও পাল্লারে বিশেষ ভাবে অজ্ঞ অর্থে বিশেষজ্ঞ বলা যেতে পারে। তাই তাদের আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়েও এই ধমাধমের জানা-শোনা সামান্যই। যা জানি তা-ও আপনাদের মত শিক্ষিত জ্ঞানী লোকদের সৌজন্যে।
এককালে সামুতে তেমনই এক শিক্ষিত জ্ঞানী লোকের পাল্লায় পড়েছিলাম। তিনি পাল্লার একটা পোস্টে ঠিক এরকম একটা কমেণ্ট করে বসলেন—আপনারা যে নিজেদেরকে এত বড় নাস্তিক বলে মনে করেন, অথচ আপনাদের গুরু রিচার্ড ডকিন্স তো তার নিজের “নাস্তিকতার স্কেলের” টপেই যাইতে পারেন নাই।
ব্লগিং-এর সূত্র ধরে মাঝে মাঝে রিচার্ড ডকিন্স-এর নাম শুনলেন তার “নাস্তিকতার স্কেল” (মতান্তরে, ঈশ্বর বিশ্বাস পরিমাপের স্কেল) সম্পর্কে বিশেষ ভাবেই অজ্ঞ ছিলাম। অন্যরা নিজেদেরকে কত বড় নাস্তিক বলে মনে করে, সেটা জানিনা, তবে নিজে কখনো কোথাও নিজেকে আস্তিক বা নাস্তিক হিসাবে পরিচয় দেইনি। তবুও উনার কথায় খুব লজ্জা পেলাম এবং বিনীত ভাবে এই স্কেলের ব্যাপারটা জানতে চেয়েছিলাম।
তখন অন্য একজন এসে ব্যাপারটা সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিলেন– রিচার্ড ডকিন্স নাস্তিকতা নিয়ে ১ থেকে ৭ পর্যন্ত একটা স্কেল বানিয়েছেন, এবং নিজে টপে অর্থাৎ ৭-এ না গিয়ে ৬-এ অবস্থান করছেন।
তখনো হয়তো এখনকার মত নাস্তিকতা নিয়ে এতটা চিন্তাভাবনা ছিল না, তবু ব্যাপারটা নিয়ে আমার তৎক্ষণাত উত্তর ছিল এরকম (কারো কাছে স্ক্রীনশট থাকলে দয়া করে হেল্পান)–
নাস্তিকতার সাথে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপার নেই। আস্তিকরা দাবী করে আল্যা আছে। এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ আস্তিকদের কাছে আল্যার অস্তিত্বের প্রমাণ চায় মাত্র। কারণ কেউ যদি কিছু দাবী করে তবে সেটা প্রমাণ করার দায়ও তাদের। আর প্রমাণ পেলে ঐ মানুষগুলাও আল্যাতে আস্থা আনবে। আস্তিকরা এই টাইপের মানুষগুলারেই নাস্তিক হিসাবে আখ্যায়িত করে। এখানে নাস্তিকরা আলাদা ভাবে কিছু দাবী করে না। কেউ বা কোনো নাস্তিক যদি দাবী করে যে আল্যা বইলা কিছু নাই, তবে তাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে যে নাই। রিচার্ড ডকিন্স হয়তো মনে করেছেন তিনি সেই প্রমাণ দিতে পারবেন না, তাই আল্যা নাই—এমন দাবী সরসরি করতে চান নাই বলেই হয়তো স্কেলে ৭-এ না গিয়ে এক ধাপ নিচে ৬-এ অবস্থান করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছেন।
এই উত্তরে সেই প্রশ্নকর্তা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কিনা, সেটা এতদিন পর ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে মাঝে মাঝে এই টপিকে কিছু লেখালেখি বা মন্তব্য চোখে পড়ে। সেই থেকে এই পুরানো কাহিনীটা মনে পড়েছিল। অনেকদিন ধরে ঘটনাটা আবার লিখে রাখার ইচ্ছে হচ্ছিল কেননা সামুতে সেসব পোস্ট মুছে গেছে, স্ক্রীনশটও আপাতত নেই।
আজ গুগল করে রিচার্ড ডকিন্স-এর নাস্তিকতার সেই স্কেল-এর অনেক ইমেজ পেলাম। তার একটা এখানে দিলাম—
বাংলায় গুগল করে মুক্তমনার একটা পোস্টের লিঙ্কও পেলাম (mukto-mona.com/bangla_blog/?p=4696 )। তাতে স্কেল নিয়ে বাংলায় বিস্তারিত এভাবে বলা হয়েছে–
১. প্রবল আস্তিক। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন রকম সন্দেহ নাই।
২ .ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত তবে একশত ভাগ নয়। তবে বাস্তবে এদেরকে আস্তিকই বলা চলে। ঈশ্বর আছেন এটা ধরেই তারা জীবন যাপন করেন।
৩. এদের ঈশ্বরবিশ্বাস শতকরা ৫০ ভাগের ওপর তবে অতোটা জোরালো নয়। তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও একে অস্বীকারেও রাজি নন। ক্রমশ আস্তিকতার দিকেই এগিয়ে যাছেন।
৪. ঈশ্বরবিশ্বাস ফিফটি-ফিফটি।আদর্শ অজ্ঞেয়বাদী। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পাল্লা সমান সমান।
৫. ঈশ্বরবিশ্বাস শতকরা হিসেবে ৫০ ভাগের কম তবে একেবারে কম নয়। এরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান এবং ধীরে ধীরে নাস্তিকতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
৬. এরা মনে করেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম তবে একেবারে শূন্য নয়। কার্যক্ষেত্রে এদেরকে নাস্তিকই বলা চলে।
৭. প্রবল নাস্তিক। তারা একেবারে নিশ্চিত যে ঈশ্বর বলে কোথাও কেউ নেই।
এ ক্ষেত্রে রিচার্ড ডকিন্স নিজেকে তালিকার ৬ নম্বরে ফেলেছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে তিনি ধীরে ধীরে ৭ নম্বরে চলে যাচ্ছেন।
রিচার্ড ডকিন্স-এর ঈশ্বর ধারণার ব্যাপারটা জানা গেল। এবার এই ধমাধমের কিছু ব্যাপার বলি—
মোটামুটি ঈশ্বরের সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তাতে তার কোনো কিছুতেই বিন্দুমাত্র ভুল হবার সম্ভাবনা নাই। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথ, সায়েন্স, লিটেরেচার থেকে শুরু করে জেনারেল নলেজ বা কমনসেন্স–কোথাও ভুল হবার কথা নয়। তার মানে ঈশ্বরের সব কিছুই হবে যুক্তিযুক্ত। ঈশ্বর সম্পর্ক এসব ধারণা দেয় ধর্মগ্রন্থসমূহ, এবং যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা এও দাবী করেন যে এসব ধর্মগ্রন্থ ঈশ্বরের নিজের মুখের বাণী এবং তাতে বিন্দুমাত্র ভুল নেই। অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থে বিন্দুমাত্র ভুল থাকলেই ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত ঈশ্বর ধারণার সমস্ত কিছুই ভুল হতে বাধ্য। যারা বিন্দুমাত্র কমনসেন্স নিয়ে ধর্মগ্রন্থ নাড়াচাড়া করেছেন, নিজের মনেই হিসাব করে দেখেন ওখানে কত ভুল পেয়েছেন। তাই ধর্মগ্রন্থে বর্ণিতে ঈশ্বরের বাইরে যদি কোনো ঈশ্বর আসলেই থেকে থাকেন, সেটা আমরা কেউ জানি না। কিন্তু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আল্যা ঈশ্বর গড ভগবান-এর অস্তিত্ব এত বেশি প্রশ্নবিদ্ধ তাতে এগুলো যে রূপকথা ছাড়া আর কিছুই নয়, সে ব্যাপারে এই ধমাধমের বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। এবার এই ধমাধমরে ডকিন্সের স্কেলের কোন পাল্লায় ফেলে ট্যাগাইবেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। নিজে কোন স্কেলে পড়ছেন, সেটাও মেপে রাখুন।
সেই ভদ্রলোকের কমেণ্টের সূত্র ধরে এবার আরো কিছু ব্যাপার–
নাস্তিকদের কোনো গুরু হয় বলে আমি মনে করি না। আস্তিকদের ধর্মগ্রন্থের নির্দিষ্ট ম্যানুয়াল আছে। তারা সেই ধর্মগ্রন্থ অনুসারে খাওয়া-দাওয়া-ঘুম সব সমস্ত কর্ম করে। তাই আস্তিকদেরকে এক গোয়ালের বকরি বা এক গোয়ালের আবাল বলা যেতে পারে। অবাক করার বিষয় হলো, এদের সবার আবার নির্দিষ্ট “রাখাল”ও আছে। এই বকরি বা আবাল-গরুগুলো অন্যের বাগানে বা ক্ষেতে ঢুকে পড়ে কোনো ক্ষতি করলে বা নিজেরা নিজেরাই কোনো আকাম করলে তার দায় ঐ ম্যানুয়াল ও রাখালের উপরেও বর্তায়। ওদিকে যাদেরকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করা হয় তাদের সেরকম কোনো ম্যানুয়াল বা রাখাল নেই বলে তারা সবাই স্বতন্ত্র। তাদের প্রতিটা কর্মকাণ্ডের জন্য সে নিজে দায়ী।
এবার বুদ্ধিমান প্রানীদের জন্য আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়ে আরেকটা চরম স্টিকার-
Leave a Reply