বেশ কিছুদিন আগে পরিচিত একজনের বর্ণনায় ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের কাহিনী শেয়ার করেছিলাম। সেদিন ছিল মিশনে ঢোকার পর বাম দিকটার (স্কুল, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক ভবন, অফিস) কাহিনী। আজ একটু ডানদিকের।
ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে ঢোকার পরে ডানদিকটায় মিশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় হাসপাতাল। তখন চোখ-দাঁতসহ আরো টুকটাক কিছুর চিকিৎসা চলত। হাসপাতালের পিছন দিকটায় হাসপাতালের কর্মচারীসহ মিশনের কিছু কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা এবং গুদাম ঘর। হাসপাতালের পরেই একটু খোলা মাঠ। মাঠের পশ্চিমদিকটায় ছাত্রনিবাস।
ছাত্রনিবাসটি দোতলা। শুধু মাত্র নটরডেম কলেজের ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা। উপরে নিচে মিলিয়ে ১৮টির মত রুম। উপরের একটি রুম পুরাতন ব্রহ্মচারীদের ও নীচের একটি রুম নতুন ব্রহ্মচারীদের জন্য। বাকি রুমগুলোতে ৪ জন করে ছাত্র। নীচের রুমগুলো ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রদের। উপরেরগুলো সেকেণ্ড ইয়ারের।
নটরডেম কলেজে চান্স পাওয়ার পরে হিন্দু ছাত্ররা মিশনে থাকার জন্য আবেদন করে। তাদের ব্যাকগ্রাউণ্ড চেক (ক্ষমতা + টাকা) করে, এবং একটা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ৩২ জনকে বাছাই করে। কয়েকজনকে ওয়েটিং লিস্টে রাখে। যারা চান্স পেত না, তারা ঢাকায় কোনো আত্মীয়-স্বজন বা কলেজের আশে-পাশে মেসে থাকত। তো ভর্তির সময় মিশনে এক বছরের থাকা খরচ এবং অন্যান্য ফি বাবদ তখন ১৬ হাজার করে রাখত। আর মাসে মাসে খাওয়া খরচ দিতে হত ৯০০ টাকা করে।
মিশন চলে ডোনেশনের উপরে। কয়েকজন মহারাজের কাজ হলো সারাবছর হাতে ভিক্ষার রসিদবই নিয়ে শিল্পপতি ও বড়লোক হিন্দুদের বাসায় বাসায় ঘুরে বেড়ানো, সেখান থেকে টাকা সংগ্রহ করা। আগেই বলেছি, ছাত্র ভর্তি করার সময় বড়লোকদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। তারপর ডোনারদের লিস্টে এইসব ছাত্রদের পরিবার বা স্থানীয় অভিভাবকদেরকে যোগ করে। এভাবে লিস্টেড ডোনারদের সংখ্যা বাড়ায়।
এখানে থাকার সুযোগ পাওয়া ছাত্রদের পরিবার বা অভিভাবকেরা নিজেদের নিয়ে তখন গর্ববোধ করে, মহারাজদের সাথে বাড়তি খাতির থাকায় নিজেদেরকে ধন্য মনে করে। তাই মহারাজরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে রসিদবই নিয়ে এদের বাসায় গেলে যথাসাধ্য ডোনেশন দেয় বা ভক্তিতে গদগদ হয়ে সাধ্যের বেশিও চেষ্টা করে। কয়েক বছর আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে মিশনে নতুন মন্দির করা হয়েছে।
মিশনে থাকার কিছু শর্ত হিসাবে ছাত্রদেরকেও মিশনের অনেক কাজে সময় দিতে হয়, অনেক কাজে যুক্ত থাকতে হয়। তারই একটা কাজ হলো—দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষ কোনো অতিথি মিশন পরিদর্শন করতে এলে ছাত্ররা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হাতে ফুলটুল নিয়ে পথের দু’পাশে দাঁড়িয়ে অতিথিদেরকে অভ্যর্থনা জানায়।
এরকম কোনো এক অভ্যর্থনাকালে এক অতিথি জিজ্ঞেস করেন, পথের দু’পাশে এরা কারা। মিশনের বড় মহারাজ হেসে গর্ব করে বলেন, এরা সারাদেশের কিছু এটিম-দুস্থ-গরীব মেধাবী ছাত্র—মিশন বিনা খরচে এদের থাকা-খাওয়া-পড়ার খরচ চালায়!
অর্থাৎ, মিশন এই ছাত্রদের দেখিয়েও ব্যবসা করে—ডোনারদের কাছ থেকে ডোনেশন আদায় করে। টিউশন ফি, ঢাকায় থাকা-খাওয়া—সব মিলিয়ে সারাদেশের কলেজগুলোর মধ্যে নটরডেম কলেজের খরচটাই সবচেয়ে বেশি, এবং সারাদেশের মেধাবী ছাত্রগুলো এখানেই এসে ভিড় করে বেশি। কথা ছিল, সেবামূলক কাজের অংশ হিসেবে এই কলেজে চান্স পাওয়া সবচেয়ে গরীব হিন্দু ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে রামকৃষ্ণ মিশন। আর ডোনাররা এমনিতেই এদের জন্য ডোনেট করবে।
বাস্তবে হচ্ছে উলটো। ডোনারদের কাছ থেকে ডোনেশন তো নিচ্ছেই, সেই সাথে আবার বড়লোক ছাত্র রেখে তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করছে; তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে ডোনেশন নিচ্ছে। এই হচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মব্যবসার একটা সামান্য উদাহরণ।
দাঁড়িপাল্লা ধমাধম
2010 নটরডেম কলেজের ভর্তি ফর্ম তোলার পর বাবা নিয়ে গেছিল রামকৃষ্ণ মিশনে।নটরডেমের ছাত্রাবাস নেই তাই অনেক হিন্দু ছাত্রই মিশনে থাকে।যাওয়ার পরে যা বুঝলাম তা হচ্ছে ওখানে থাকতে গেলে পরীক্ষা দিতে হয়, তা পরীক্ষা কীসের উপর? রামকৃষ্ণ, সারদা দেবী, বিবেকানন্দ এঁদের জীবনীর উপর আর সেজন্যে বই কিনতে হবে মিশনের লাইব্রেরি থেকে! বাধ্য হয়ে কয়েকশো টাকার বই কেনা লাগলো।চারটা বই, সেই বই থেকে প্রশ্ন হবে।নটরডেমে পড়ার আর এখানে থাকার পরীক্ষা দিতে হবে, ব্যাপক টেনশিত হয়ে ওখানে থাকা এক দাদাকে জিঞ্জেস করলাম, “দাদা এখানে থাকতে কেমন লাগে আপনাদের?” বললেন, ভালোই, ভোর পাঁচটায় উঠে প্রার্থনা করতে বড় হলটায়, দূর্গা পূজার সময় মিশনে থাকা লাগে, বাড়ি যাওয়া যায়না 🙁 ভোর পাঁচটায় প্রার্থনা, নিরামিষ খাবার, ছুটিহীন দূর্গা পূজা এরপর মনে হয়নি আমি ঐ জায়গায় থাকার যোগ্য আর সেজন্যই মনে হয় নটরডেমে ভর্তি পরীক্ষাই দিতে পারিনি 😀 যাই হোক, শুনলাম রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান মহারাজ নাকি ISIS এর চিঠি পেয়ে ভারতে চলে গেছেন! ভারতের বাংলাদেশের কারো আশ্বাসই তাঁকে আশ্বস্ত করতে পারলো না! এই মহারাজেরা নাকি কাম, ক্রোধ, হিংসা যাবতীয় সাংসারিক বস্তু ত্যাগ করে সন্যাসীর মত জীবন যাপন করেন।জীবনটা তাঁদের কাছে মোহমায়া ছাড়া কিছুই না।শেষ পর্যন্ত এই মোহমায়ার জন্যেই কিনা দেশ থেকে পলায়ন 😀 ভোরের প্রার্থনার কার্যকারিতা কোথায় গেল? আদৌ সেই প্রার্থনা কি কোনো কাজে লাগে?
2012 সালে বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিবাদে সব হিন্দু সংগঠনগুলোর মানববন্ধন ছিল প্রেস ক্লাবের সামনে।মিশনকে অনুরোধ করা হয়েছিল, আপনাদের এখানে এত ছেলে থাকে আপনারা যদি অংশ নিতেন ভালো হত, তাঁদের উত্তর ছিল আমরা শুধু সেবামূলক কাজে অংশ নেই।সেই লেভেলের আদর্শ!!!!
এইদেশ থেকে এই মহারাজা, গুরুদেব, প্রভুরা সবসময় আগে আগে পালিয়েছেন।সুযোগ বুঝে ধর্ম ব্যবসা স্থানান্তর করেছেন।যে অনুকূল ঠাকুর হেমায়েতপুরে এত বড় আশ্রম করলেন তিনিও পালিয়ে গেছিলেন সেই দেওঘরে দুঃখিত মহাপুরুষরা তো ভয় পায়না স্বপ্নাদেশ পেয়ে চলে গেছিলেন! তা সেই ঠাকুরের শিষ্যের যখন গলা কাটা পরলো তখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ঠাকুরের দূরদর্শীতা কতটা ছিল!!!! এই মহাপুরুষেরা মরেন না, তাঁরা দেহত্যাগ করেন।মরে আনন্দগোপাল গাঙ্গুলির মত পুরোহিতরা ।মহাপুরুষেরা কোন জাত পাতের বিচার করেন না, তাই রামকৃষ্ণ বলেছেন “যত মত তত পথ” কিন্তু তাঁর চ্যালার নিগূঢ় অর্থ ধরতে পারেন না।অনেকটা নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মত যেখানে বলা হয়েছে “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে” সূত্র এটুকুই কিন্তু ব্যাখ্যায় গেলের তার সাথে ভরের কথা আসবে, বেগের কথা আসবে।সেইরকমই রামৃষ্ণের কথাটাও একটু পরিষ্কার করা যায় এইভাবে, “যত মত তত পথ যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেই স্থানের জন্যে প্রযোজ্য” নিশ্চয়ই সেই পালিয়ে যাওয়া মহারাজা যথাস্থানে যথাযথ বাণী প্রচার করিবেন।ঐতিহাসিকরা খালি রাজা লক্ষণ সেনের পালিয়ে যাওয়ার কথাই মনে রেখেছেন, এত এত মহারাজা পালিয়ে যাচ্ছে তাঁদের দেখেই না 😀
© Sreyajit Kumar Shajib
https://www.facebook.com/sreyajit.shajib/posts/1377003945649720