সমকামিতা নিয়া ভারতের হিন্দুদের মাঝে মাঝেই চুলকানি ওঠে। ভারতের সরকার থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এই চুলকানিতে যোগ দেয়। সকালে সমকামিতার পক্ষে তো বিকালেই আবার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
উইকিতে দেখি–ভারতের বৃহত্তম ধর্ম হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলিতে সমকামিতার সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও, ধর্মগ্রন্থের কোনো কোনো ব্যাখ্যাকে সমকামিতার বিরোধী মনে করা হয়। তবে ভারতের প্রধান ধর্মবিশ্বাসে সমকামিতার অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কেউ কেউ মনে করেন প্রাচীন হিন্দু সমাজে সমকামিতা শুধু প্রাসঙ্গিকই ছিল না, বরং তা গ্রহণীয়ও ছিল।
এসব নিয়ে গুগল করলে হিন্দু দেবদেবীদের মাঝে সমকামিতা বিষয়ক অনেক লেখা পাওয়া যাবে যেখানে সমকামিতার অনেক উদাহরণ আনা হয়েছে। দেব-দেবীদের বাইরে মানুষের পর্যায়ে সবচেয়ে শক্ত উদাহরণটি খুব সম্ভবত ভগীরথের জন্ম বৃত্তান্তে এসেছে। সন্তানহীন অবস্থায় অযোধ্যার রাজা দিলীপ মারা যান। থাকে তার দুই বিধবা স্ত্রী। এই সূর্য্যবংশে বিষ্ণুর অবতার হয়ে আসার কথা। কিন্তু বংশ নির্মুল হলে সেটা কিভাবে সম্ভব! তখন ব্রহ্মা এর প্রতিকার করার জন্য শিবকে পাঠালেন। শিব এসে দুই বিধবাকে বর দিলেন যে তাদের একজনের গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মাবে। তখন–
“দুই নারী কহে শুনি শিবের বচন।
বিধবা আমরা কিসে হইবে নন্দন।।”
উত্তরে–
“শঙ্কর বলেন দুই জনে কর রতি।
মম বরে একের হইবে সুসন্ততি।।”
এখানে কমনসেন্স এপ্লাই করলে শিবের সাথে ঐ দুই বিধবার থ্রিসামই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। শিবের বীর্যেই একজন বিধবা গর্ভবতী হন এবং পরে ভাগীরথের জন্ম হয়, যিনি মর্তে গঙ্গাকে এনেছিলেন বলে প্রচলিত।
অনেকদিন ধরে ভগীরথের জন্মবৃত্তান্ত ও তার দুই মাতার সমকামিতার বিষয়টার রেফারেন্স খুঁজছিলাম। আজ পেয়ে গেলাম–বাংলা কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের “গঙ্গার জন্ম-বিবরণ ও মর্ত্ত্যলোকে সগরের গঙ্গা আনিতে গমন ও ভগীরথের জন্ম” নামক পর্বে।
এখানে স্পষ্ট ভাবেই সমকামিতা বৈধ করেছেন স্বয়ং শিব। ধর্ম মানলে এর পরও যদি কোনো হিন্দু সমকামিতার ব্যাপারে নাক ছিটকান বা এটাকে অবৈধ বা বেআইনী বলেন, তাহলে আর কিতা কইতাম!
Leave a Reply